এমনই ফাটল ধরেছে। হাওড়ার যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
হাওড়া ময়দানের পাশেই একটি মেয়েদের স্কুলে ফাটল ধরায় আতঙ্কিত হয়ে পড়লেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁদের দাবি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের জন্য ওই ফাটল ধরেছে। বাড়িটির দেওয়াল-ছাদ-মেঝে এমন ভাবে ফেটেছে যে, যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্কুল চলার সময়ে এই ঘটনা ঘটলে যে ভয়াবহ পরিণতি হবে, তা ভেবে আতঙ্কিত স্কুল কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে কয়েকটি ঘরে ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মেট্রো রেলকে বারবার বলার পরেও স্কুলটি মেরামত করার জন্য উদ্যোগী হননি কর্তৃপক্ষ। যদিও মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, ওই ঘটনার পরেই প্রতিনিয়ত স্কুল বাড়িটির উপরে নজর রাখা হয়েছে। ফাটল বাড়ছে কি না, তা দেখার জন্য দেওয়ালের ক্র্যাক মিটার বসানো হয়েছে।
হাওড়া ময়দানে তৈরি হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর প্রান্তিক স্টেশন। ওই স্টেশনের পাশেই রয়েছে হাওড়া যোগেশচন্দ্র গার্লস স্কুল। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানান, মাস ছয়েক আগে স্কুলটির সামনের কয়েকটি ঘরে প্রথমে দেওয়ালে সরু ফাটল দেখা যায়। তখন বিষয়টিতে তেমন গুরুত্ব না দিলেও সম্প্রতি প্রতিটি ঘরের দেওয়াল, বারান্দা, ছাদ ও মেঝেতে ফাটল বাড়তে থাকায় মেট্রো রেল-সহ জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন জায়গা ও স্কুল শিক্ষা দফতরে ব্যাপারটি জানিয়ে চিঠি দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। মেট্রোর পক্ষ থেকে কয়েক জন ইঞ্জিনিয়ার এসে ফাটল দেখার পরে বিভিন্ন জায়গায় ক্র্যাক মিটার লাগিয়ে দিয়ে চলে যান। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শুভ্রা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মেট্রো শুধু ক্র্যাক মিটার লাগিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছে। অথচ আমরা দেখছি দিন দিন ফাটলের মধ্যবর্তী ফাঁক বাড়ছে। এখন যা অবস্থা, যে কোনও মুহূর্তে বাড়িটি ভেঙে পড়তে পারে। তাই স্কুলের কয়েকটি ঘরে ক্লাস বন্ধ করে অন্য ঘরে ক্লাস করা হচ্ছে।’’
এ দিকে, এই স্কুলটি উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার কেন্দ্র। আগামী ২৭ তারিখ থেকে এখানেই পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা। স্কুল পরিচালন কমিটি তাই শনিবারই বৈঠকে বসেন এ বিষয়ে আলোচনার জন্য। পরে স্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি ও রাজ্য মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার আহ্বায়ক রণজিৎ দাস বলেন, ‘‘আগামী সোমবার এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেব। পরীক্ষার আগে স্কুলটি মেরামত করা যায় কি না, তা নিয়ে মেট্রোর সঙ্গে কথা বলা হবে।’’
স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানান, স্কুলটিতে প্রি-প্রাইমারি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দু’হাজার পড়ুয়া রয়েছে। স্কুল বাড়িটির যে ভগ্নদশা হয়েছে, তাতে পড়ুয়ারা একটু বেশি দৌড়াদৌড়ি করলেই সেটি কাঁপে। মেট্রোকে মেরামত করে দেওয়ার আবেদন করলেও তাঁরা শুনতে চাননি। প্রধান শিক্ষিকা বলেন, ‘‘বাড়িটির এই অবস্থা দেখার পরেও মেট্রোর বক্তব্য কাজ শেষ হওয়ার আগে মেরামত করা যাবে না। কিন্তু প্রশ্ন হল, কিছু ঘটে গেলে মেট্রো কি দায় নেবে?’’
এ ব্যাপারে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর এক পদস্থ কর্তা বলেন, ‘‘মেট্রোর কাজের জন্য ওই ফাটল হয়েছে কি না, তা পরিষ্কার নয়। তা সত্ত্বেও আমরা বাড়িটির দেওয়ালে ক্র্যাক মিটার বসিয়েছি। প্রতিদিন নিয়ম করে ইঞ্জিনিয়ারেরা নজর রাখছেন। পরিস্থিতি বুঝে আমরা ব্যবস্থা নেব।’’