Schools

প্রকল্পে নয়, পড়াশোনার খোঁজেই নজর রাখতে চান স্কুল পরিদর্শকেরা 

এখন এ সব অতীত। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলে পরিদর্শকেরা যান। কিন্তু পড়াশোনার খোঁজে নয়, তাঁরা স্কুলে মিড ডে-মিল-সহ নানা সরকারি প্রকল্প কেমন চলছে, সেই সব খোঁজখবর নেন।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

— প্রতীকী চিত্র।

কেমন পড়াশোনা হচ্ছে তা হাতেকলমে পর্যবেক্ষণ করতে স্কুলে ইনস্পেক্টর বা পরিদর্শক আসছেন। স্কুলে এই বার্তা রটে গেলেই শুরু হয়ে যেত প্রস্তুতি। শিক্ষকেরাও পড়ুয়াদের বলে দিতেন ভাল করে পড়ে আসতে। যে দিন পর্যবেক্ষক আসবেন, সে দিন স্কুলে সাজো সাজো রব।

Advertisement

এখন এ সব অতীত। শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন, স্কুলে পরিদর্শকেরা যান। কিন্তু পড়াশোনার খোঁজে নয়, তাঁরা স্কুলে মিড ডে-মিল-সহ নানা সরকারি প্রকল্প কেমন চলছে, সেই সব খোঁজখবর নেন। আর পড়াশোনার খোঁজ? শিক্ষকদের একাংশের দাবি, শুধুমাত্র পড়াশোনার খোঁজ নিতে পরিদর্শকের স্কুলে আসা কার্যত উঠেই গেছে।

রাজ্য জুড়ে সব জেলা মিলিয়ে শিক্ষা সার্কেল রয়েছে ৭২৭টি। কয়েক জন অবর বিদ্যালয়ের পরিদর্শকের মতে, একটি সার্কেলে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক মিলিয়ে গড়ে ৬০ থেকে ৭০টি স্কুল রয়েছে। কোথাও ১০০টির উপরে স্কুলও আছে। এক জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের পক্ষে এতগু লি স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা কেমন চলছে, তা খোঁজ করে দেখা খুব কঠিন। ‘পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতি’-র সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ দেবনাথ বলেন, ‘‘এক জন পরিদর্শকের পক্ষে ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে পড়াশোনার খোঁজ নিতে গেলে তিনি এক দিনে একটি বা দু’টির বেশি স্কুলে যেতেই পারবেন না। অ্যাপের মাধ্যমে অনলাইন পরিদর্শনের ব্যবস্থা করেছে সরকার। কিন্তু সেই অ্যাপও পুরোপুরি কার্যকর নয়। বরং মিড ডে-মিল-সহ স্কুলের বিভিন্ন প্রজেক্টের খোঁজ দ্রুত নেওয়া যায়। তাই এখন সরকার পড়াশোনার থেকে প্রকল্পের খোঁজে বেশি আগ্রহী।’’

Advertisement

তবে অনিমেষের বক্তব্য, ‘‘আমরা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনার খোঁজ নেওয়ায় বেশি আগ্রহী। সে জন্য দরকার সার্কেলকে ভেঙে আরও সার্কেল বাড়ানো। তা হলে এক জন অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকের পক্ষে কম সংখ্যক স্কুলে যেতে হবে। আমরা দাবি জানিয়েছি, একটি সার্কেলে ৪০টির বেশি স্কুল রাখা যাবে না।’’

সেই সঙ্গে স্কুল পরিদর্শকেরা জানাচ্ছেন, শুধু অবর বিদ্যালয় পরিদর্শকই নন, জেলাগুলির ব্লকে যে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক বা এআই থাকেন, সেই সংখ্যাও পর্যাপ্ত নয়। অনিমেষ বলেন, ‘‘রাজ্য জুড়ে ৯৪৭টি এআই-এর পদের মধ্যে ফাঁকা রয়েছে ৪৪৫টি পদ। স্কুল নিয়মিত পরিদর্শনের জন্য এই ফাঁকা পদ পূরণ করা দরকার। যাঁরা আছেন, তাঁদের স্কুলের নানা প্রশাসনিক কাজেই ব্যস্ত থাকতে হয়।’’ কয়েক জন স্কুল পরিদর্শকের অভিযোগ, স্কুলে গিয়ে পরিদর্শনের জন্য যাতায়াতের খরচও সব সময়ে তাঁরা পান না। স্কুল পরিদর্শন বাবদ খরচ হিসাবে সার্কেল-পিছু মাসে ১০ হাজার টাকা ২০১৮ সাল থেকে
দেওয়া শুরু হলেও পরে তা অনিয়মিত হয়ে যায়।

প্রধান শিক্ষকদের সংগঠন ‘অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেস’-এর রাজ্য সম্পাদক চন্দন মাইতি বলেন, ‘‘পর্যাপ্ত এআই, এসআই নেই। আমরা বার বার শিক্ষা দফতরে অভিযোগ করেছি। যাঁরা স্কুলে পরিদর্শনে আসেন, তাঁরা মিড ডে-মিল-সহ বিভিন্ন প্রকল্প দেখেই চলে যান। কিন্তু নজর দিতে হবে পড়াশোনার দিকেই বেশি।’’

যদিও বিকাশ ভবনের এক কর্তার মতে, এখন বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পও পড়াশোনারই অন্তর্ভুক্ত। তাই
প্রকল্পের পরিদর্শনের উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে স্কুলে পড়াশোনা ও বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের পরিদর্শন নিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে শিক্ষা দফতর। কোন কোন আধিকারিককে প্রতি মাসে কত বার স্কুল পরিদর্শন করতে হবে, বিজ্ঞপ্তিতে তাও বলা হয়েছে। পরিদর্শন শেষে সেই আধিকারিককে শিক্ষা দফতরের নির্দিষ্ট অ্যাপে ছবি-সহ সব কিছু আপলোড করতে হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement