(বাঁ দিকে) সন্দীপ ঘোষ এবং অভিজিৎ মণ্ডল (ডান দিকে) ছবি: পিটিআই।
শিয়ালদহ আদালত থেকে বার করা হল সন্দীপদের। নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিবিআই দফতরে। আদালতের বাইরে ভিড় করেছেন সাধারণ মানুষদের। সন্দীপদের দেখা মাত্রই ভিড় থেকে ‘চোর চোর’ স্লোগান উঠল।
শিয়ালদহ আদালতের বাইরে ভিড়। ছবি: সারমিন বেগম।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আবেদন মেনে সন্দীপ এবং অভিজিৎকে তিন দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশ দিল বিচারক।
অভিজিৎকে তিনি দিনের হেফাজতে চাইল সিবিআই। আগেই সন্দীপের জন্যও একই আবেদন করেছে তারা। সওয়াল-জবাব শেষ। রায়দান স্থগিত রাখলেন বিচারক।
শনিবার আদালতে সিবিআই বলেন, ‘‘অভিজিৎকে মূল অভিযোগে অভিযুক্ত হিসাবে মনে করছি না।’’ তাঁকে তথ্য প্রমাণ লোপাট, তদন্ত প্রক্রিয়াতে দেরি করার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে।
সিবিআইয়ের গ্রেফতারি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অভিজিতের আইনজীবী। তিনি বলেন, ‘‘কর্তব্যে গাফিলতির কথা বলা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিভাগীয় তদন্ত করা যেত। কিন্তু ওসি-কে নিয়ে সিবিআইয়ের কিছু বলার নেই।’’
আদালতে অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমাকে ছ’বার নোটিস দেওয়া হয়েছে। শেষ বার ১৪ তারিখ পাঠানো হয়। আমি অভিযুক্ত না সাক্ষী সেটা আমাকে জানানো হয়নি। আমার শারীরিক অবস্থার কথা জানিয়েছিলাম। বিভিন্ন নথিও দিয়েছিলাম।’’ তাঁর আইনজীবীর সওয়াল, ‘‘আমার মক্কেলের অ্যারেস্ট মেমো নিয়ে প্রশ্ন আছে। সেখানে তাঁর স্ত্রী বা আত্মীয়ের কোনও সই নেই। কিসের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হচ্ছে, তা-ও দেখানো হয়নি।’’
শুনানিতে টালার প্রাক্তন ওসির আইনজীবীকে সওয়াল করতে বাধা দেন আইনজীবীদের একাংশ। আদালতে অভিজিতের জামিনের আবেদন করতে চান তাঁর আইনজীবী। সে সময় এক আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘এই ওসি যা করেছেন, তার পর তাঁর হয়ে জামিনের আবেদন করতে এসেছেন? উনি ওসি হোন বা যেই হোন, পুলিশ কম দোষী নয়।’’ ওই আইনজীবী নিজেকে শিয়ালদহ বারের সদস্য বলে পরিচয় দেন।
ঘটনার অনেক পরে বাজেয়াপ্ত প্রক্রিয়া শুরু হয় বলে শনিবার আদালতে দাবি করে সিবিআই। তাদের আইনজীবী বলেন, ‘‘প্রথমে আত্মহত্যা বলা হয়েছিল। কিন্তু দেখেই বোঝা যাচ্ছিল যৌন নির্যাতন হয়েছে। অনেক দেরিতে সব কিছু বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।’’ সন্দীপের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে সিবিআই। তারা আদালতে বলে, ‘‘সন্দীপ ওই মেডিক্য়াল কলেজের মাথায় ছিলেন। ওঁরা ঠিক ভাবে প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি।’’
আদালতে সিবিআই সওয়াল ‘‘অনেকে বলছেন পুলিশ এবং সিবিআইয়ের মধ্যে টানাটানি আছে। কিন্তু এ রকম নয়। আমরা সত্যিটা জানতে চাইছি।’’ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কী কী ধারা দেওয়া হয়েছে তা জানতে চান বিচারক। সিবিআই তা আদালতে জানায়। তার পরই বিচারক ওই ধারাগুলোর মধ্যে থেকে একটি ধারা উল্লেখ করে বলেন, ‘‘আমি যত দূর জানি এটা জামিনযোগ্য।’’
মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধারের দিন সন্দীপ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসির মধ্যে ফোনে কথা হয়েছিল, আদালতে এমনই দাবি করল সিবিআই। দু’জনের কল রেকর্ডিং পরীক্ষা করে এই ফোনালাপের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও জানানো হয় আদালতে। সিবিআইয়ের আইনজীবীর সওয়াল, এই ঘটনার নেপথ্যে বৃহত্তর ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
দুপুর ২টো নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে সওয়াল-জবাব শুরু হল।
কিছু ক্ষণ পরেই আদালতে শুনানি শুরু হবে। সূত্রের খবর, সন্দীপ এবং টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎকে তিন দিন নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে সিবিআই। অন্য দিকে, জামিনের আবেদন করতে পারেন অভিজিৎ।
সাড়ে ১২টা নাগাদ সন্দীপ ঘোষকে নিয়ে শিয়ালদহ আদালতে পৌঁছল সিবিআই।
শিয়ালদহ আদালতের বাইরে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর আগে দু’বার সন্দীপকে হাজির করানোর সময় আদালত চত্বরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতেই আগেভাগে পুলিশি বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
বেলা ১২টা নাগাদ প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার থেকে বার করে আনা হয় সন্দীপকে। তার পর তাঁকে তোলা হয় প্রিজ়ন ভ্যানে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে শিয়ালদহ আদালতে।
সন্দীপকে হেফাজতে নেওয়ার তোড়জোড় শুরু করল সিবিআই। আরজি করের আর্থিক অনিয়ম অভিযোগে আগেই গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি। বর্তমানে সন্দীপ সেই মামলাতেই প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে রয়েছেন। শনিবার রাতে চিকিৎসক খুনের ঘটনায় তাঁকে ‘শ্যোন অ্যারেস্ট’ দেখায় সিবিআই। রবিবার আরজি করের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়ার জন্য শিয়ালদহ আদালতে আবেদন করবেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা।
আদালতে হাজির করানোর আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর জন্য অভিজিৎকে বিআর সিংহ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকেই তাঁকে শিয়ালদহ আদালতে হাজির করানো হবে।
সিজিও কমপ্লেক্স থেকে অভিজিৎকে বার করতেই ক্ষুব্ধ জনতা স্লোগান দিতে শুরু করেন। দেখানো হয় জুতোও।
জুতো দেখানো হল অভিজিৎকে। ছবি: সারমিন বেগম।
সকাল ১১টা নাগাদ সিজিও থেকে বার করা হল টালা থানার তৎকালীন ওসি অভিজিৎকে। মেডিক্যাল পরীক্ষার করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তাঁকে।