আবাসনের ‘কমন প্লেসে’ অনুমতি না নিয়ে কেন ফ্যান চালানো হচ্ছে, চেয়ার-টেবিল পাতা হয়েছে। এমন প্রশ্ন ঘিরেই বিবাদ।
আর তাতেই এক মহিলা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ জমা পড়েছে থানায়। পাল্টা তাঁকেও মারধর করা হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেছেন সেই কাউন্সিলর। ঘটনাস্থলে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়।
ঘটনাস্থল সল্টলেকের এফডি ব্লক। বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছে। অভিযোগের আঙুল উঠেছে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নীলাঞ্জনা মান্নার দিকে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, এক জন মারা গিয়েছেন, তাঁর আত্মীয় পরিজনেরা ভিড় করেছেন, তাঁদের বসার ও জল খাওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল। তাকেই ‘পিকনিক’ বলে দাবি করে গোলমাল পাকিয়েছেন কাউন্সিলর। এমনকী অভিযোগ, আবাসন সমিতির সম্পাদকের স্ত্রীকে মারধর করেছেন।
অভিযোগকারী হামিদা বেগমের স্বামী মহম্মদ মনিরুল মোল্লা ওই সমবায় আবাসন সমিতির সম্পাদক। তিনি জানান, এ দিন সকালে তাঁর বাড়ির ভাড়াটে এক প্রৌঢ়া হৃদরোগে মারা যান। হাসপাতাল থেকে মৃতদেহ এনে আবাসনের নীচে বেসমেন্টে রাখা হয়েছিল। প্রৌঢ়ার ছেলে নিজেও চিকিৎসার জন্য হায়দরাবাদে গিয়েছেন। তাঁর বাড়ি ফিরতে সন্ধ্যা হবে। ইতিমধ্যে অবশ্য তাঁর আত্মীয় স্বজনেরা এসে হাজির। তাই তাঁদের বসার জন্য চেয়ার রাখা হয়েছিল। জলের বোতলের পাশাপাশি বেসমেন্টে ভাড়া করা টেবিল ফ্যান আনা হয়েছিল।
এ দিন দুপুর বারোটার কিছু আগে কাউন্সিলর সেখানে হাজির হন। অভিযোগ, কাউন্সিলরের মনে হয়েছে সেখানে পিকনিক হচ্ছে। আত্মীয়েরা কাউন্সিলরকে ঘটনা জানান। মৃতদেহও দেখান। কিন্তু অভিযোগ, কাউন্সিলর মানতে চাইছিলেন না। অভিযোগ, তিনি দুর্ব্যবহার করেন আত্মীয়দের সঙ্গে। টেবিল ফ্যানের তার খুলে দেন। তাতেই উত্তেজনা ছড়ায়। গোলমাল শুনে হামিদা বেগম নীচে নেমে কাউন্সিলরকে বোঝাতে যান। সেখান থেকেই বচসার সূত্রপাত। মনিরুলবাবুর অভিযোগ, তাঁর স্ত্রীকে মারধর করেছেন কাউন্সিলর। তাঁর স্ত্রীর গাল ফেটে গিয়েছে।
এর পরে অভিযোগ, কাউন্সিলর পুলিশ ডেকে আনেন। মণিরুলবাবুর আরও অভিযোগ, অভিযোগ নিতে চায়নি পুলিশ। যদিও তাঁকে মারধর করা হয়েছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছেন কাউন্সিলর। যদিও সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা বলে দাবি মনিরুলবাবুদের।
৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নীলাঞ্জনা মান্না প্রয়াত ফুটবলার শৈলেন মান্নার মেয়ে। গত বছর পুর নির্বাচনের সময়ে ওই ওয়ার্ডে তিনি ছিলেন শাসক দলের প্রার্থী। সেই নির্বাচনেই এফডি ব্লকে একাধিক সাংবাদিককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের একাংশের বিরুদ্ধে। মনিরুলবাবু পুর নির্বাচনে ওই কাউন্সিলরেরই পোলিং এজেন্ট ছিলেন। তিনি ওই সমবায় আবাসন সমিতির সম্পাদক। আর কাউন্সিলর হলেন চেয়ারপার্সন। মনিরুলবাবুর আরও অভিযোগ, সমবায় আবাসনের বৈঠকেও বিভিন্ন অভিযোগ তুলে কাউন্সিলর তাঁকে চড় মেরেছিলেন।
যদিও কাউন্সিলর নীলাঞ্জনা মান্নার কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি। বার বার ফোন করলেও তিনি ফোন ধরেননি। এসএমএস করলেও তাঁর কোনও জবাব দেননি। ঘটনা নিয়ে বিধাননগরের বিধায়ক সুজিত বসু, মেয়র সব্যসাচী দত্ত, চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী মুখ খুলতে চাননি।
তবে মহিলা তৃণমূলের রাজ্য সভানেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। যদি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে নিশ্চিত ভাবেই তার তদন্ত হবে।’’ তবে দলের একাংশের কথায়, মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরেও হুঁশ ফিরছে না অনেকের। এতে আখেরে দলেরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিধাননগর পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’