ডাকাতিতে ফের বহিরাগত-প্রশ্ন

বাইরে থেকে কারা কী উদ্দেশে সল্টলেকে আসছেন, তা নিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৬ ০২:০৯
Share:

থানা থেকে আদালতের পথে ধৃতেরা। বুধবার। — নিজস্ব চিত্র

বাইরে থেকে কারা কী উদ্দেশে সল্টলেকে আসছেন, তা নিয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরির নির্দেশ দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। পাশাপাশি বিধাননগর পুলিশের তরফে একাধিক বার বাসিন্দাদের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে, অপরিচিত ব্যক্তিদের সবিস্তার তথ্য থানায় জমা দিতে। এত কিছু সত্ত্বেও বাসিন্দাদের একাংশের হুঁশ ফেরেনি। তার খেসারতও দিতে হয়েছে বহু ক্ষেত্রে। চুরি-ডাকাতির ক্ষেত্রেও একাধিক বার দেখা গিয়েছে, বাড়িরই কেউ না কেউ তাতে যুক্ত। তারা অস্থায়ী ভাবে সেই বাড়িতে কাজ করেছে। দিন কয়েক আগে সল্টলেকের সি ই ব্লকে যে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে, তার কিনারা করে পুলিশের হাতে উঠে এসেছে সেই একই ছবি। এই ঘটনার পরে পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, তথ্য সংগ্রহের বিষয়ে আরও জোর দেওয়া হবে।

Advertisement

সি ই ব্লকে ওই ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল ৮ জুলাই। তার পাঁচ দিনের মাথায় অপরাধীদের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, যে বাড়িতে ডাকাতি হয়েছে, তার পাশের বাড়ি দেখভালের কাজ করত ঘটনার অন্যতম মূল চক্রী। বুধবার সন্ধ্যায় প্রথমে ২ জনকে ধরে পুলিশ। তাদের জেরা করে উঠে আসে আরও চার জনের নাম। ধৃতেরা হল সীতারাম দাস, পাপ্পু যাদব ওরফে পরদেশী, মনোজকুমার দাস ওরফে কংগ্রেসী, রাজেশকুমার যাদব ওরফে ছোট্টু, রাজা হালদার এবং তপন পুরকাইত। প্রথম চার জন বিহারের বাসিন্দা। বাকিদের বাড়ি ঝড়খালি ও কুলতলিতে। সীতারাম, পাপ্পু, মনোজ এবং রাজেশকে গ্রেফতার করা হয়েছে সল্টলেক থেকে। বাকিরা ধরা পড়ে ঝড়খালি থেকে।

পুলিশের দাবি, ধৃতদের থেকে মিলেছে লুঠ হওয়া কিছু গয়না ও মোবাইল। বুধবার আদালতে তোলা হলে মনোজ, তপন, পাপ্পু এবং রাজাকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সীতারাম ও রাজেশের ১৪ দিন জেল হেফাজত হয়।

Advertisement

পুলিশ জেনেছে, সীতারাম সি ই ব্লকের ১৬১ নম্বর বাড়ি দেখভাল করত। সেই বাড়িতেই রাঁধুনির কাজ করত রাকেশ। সেই সূত্রেই ১৬০ নম্বর বাড়িতে (যেখানে ডাকাতি হয়) তাদের অবাধ যাতায়াত ছিল। সেখানে কে কখন থাকছেন এবং বা়ড়ির কোথায় কী আছে, তা ছিল সীতারামের নখদর্পণে। রাজেশও মাঝেমধ্যে ওই বাড়িতে গিয়ে রান্না করে দিয়ে আসত। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতেরা কেউই পেশাদার দুষ্কৃতী নয়। পাপ্পু বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহের কাজ করত। সি এফ ব্লকে একটি বাড়িতে রাঁধুনির কাজ করত মনোজ। তপন এবং রাজা পেশায় ভ্যানচালক।

কী ভাবে ছক কষা হয়েছিল ডাকাতির? পুলিশের দাবি, ধৃতেরা জানিয়েছে, ঘটনার সপ্তাহ দুয়েক আগে সিই-১৬১ নম্বর বাড়ির গ্যারাজে পুরো পরিকল্পনা হয়। সেই মতো প্রথমে পাঁচিল টপকে সিই-১৬০ নম্বর বাড়িতে ঢোকে তারা। প্রথমেই একতলার মেন সুইচ অফ করে দেয়। এর পরে অপেক্ষা করতে থাকে। গৃহকর্তা অমরনাথ চক্রবর্তীর এক মেয়ে বাড়ি থেকে বেরোতেই তারা ঘরে ঢুকে লুঠপাট চালায়।

এর পরেও পাশের বাড়িতে কাজ করে যাচ্ছিল সীতারাম। তদন্তে নেমে পুলিশ পরিচারিকাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে জানতে পারে, রাজা ও তপন ঝ়ড়খালি পালিয়েছে। তাদের জেরা করে পাপ্পুর খোঁজ পায় পুলিশ। জানা যায়, পাপ্পুর মাধ্যমেই সীতারাম ও রাজেশের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল বাকিদের।

তবে পুলিশ দাবি করেছে, বিহারের বাসিন্দা সীতারাম, পাপ্পু, মনোজ এবং রাজেশ যে সল্টলেকে কাজ করছে, সে সম্পর্কে কোনও তথ্য তাদের কাছে ছিল না। পুলিশের অভিযোগ, বাড়িতে যাঁরা কাজ করতে ঢুকছেন, তাঁদের তথ্য জানাতে বহু বার বাসিন্দাদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু বাসিন্দাদের একাংশের সহযোগিতা মিলছে না।

সল্টলেকে বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘আমরা এখনও সচেতন না হলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ ঘটবে। আমাদের তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করতেই হবে। তথ্যভাণ্ডার তৈরির সময়ে ব্লক কমিটিকেও যুক্ত করুক পুলিশ।’’ বিধাননগরের মেয়র সব্যসাচী দত্ত অবশ্য আগেই জানিয়েছিলেন, ই-গভর্ন্যান্সের মাধ্যমে সল্টলেকের বসতবাড়ি থেকে বাণিজ্যিক সংস্থা সম্পর্কে তথ্য মজুত রাখা হবে। সে প্রক্রিয়া চলছে।

বাসিন্দাদের একাংশ তথ্য দিতে পিছিয়ে যাচ্ছেন কেন? বাসিন্দাদের দাবি, পরিচারক-পরিচারিকা বা কেয়ারটেকারদের কাছে ছবি ও তথ্য চাইলে তাঁরা কাজ ছেড়ে দেওয়ার ভয় দেখান। বিধাননগরের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, ‘‘আমরা বাসিন্দাদের সচেতন করার চেষ্টা করব। এই কাজে ব্লক কমিটিগুলিকেও যুক্ত করার বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement