সুলেখা মোড়ে পড়ুয়াদের উপর এই লাঠিচার্জের জেরেই কি সিদ্ধান্ত কলকাতা পুলিশের? -ফাইল চিত্র
সুলেখা মোড়ে রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর লাঠিচার্জ করার অভিযোগ ওঠাতেই কি ছুটিতে পাঠানো হল ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) সুদীপ সরকারকে? এ বিষয়ে জল্পনার শুরু বুধবার সকালে। রীতি মাফিক ভোর বেলা থেকে ধর্মঘট সামলাতে মাঠে নেমেছিলেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা। নিজের নিজের ডিভিশনে দায়িত্বে ছিলেন ডিসি-রা। এক মাত্র ব্যতিক্রম সুদীপ সরকার।
এ দিন সকালে নিয়মমাফিক ‘ব্রিফিং’-এর সময়ে দক্ষিণ শহরতলিবিভাগের বিভিন্ন থানার ওসিরা দেখেন, সুদীপের বদলে এ দিন দায়িত্বে ডিসি (স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্স) প্রদীপ যাদব। তারপরেই জল্পনা শুরু হয়ে যায় নিচু তলায় যে, যাদবপুর কাণ্ডের জেরেই শাস্তির মুখে ওই পুলিশ কর্তা। তাঁদের একাংশের মতে, যিনি দু’দফায় কলকাতা পুলিশ এবং শিলিগুড়ি কমিশনারেটে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন, সেই সুদীপের সঙ্গে এমনটা করা হলে তা ঠিক হয়নি।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) কাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মিছিল শুরু করেন যাদবপুরের পড়ুয়ারা। একই কারণে মিছিল শুরু করে বামেরা। এই দুইয়ের পাল্টা মিছিল বার করেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা। তিনটি মিছিল সুলেখা মোড়ের কাছাকাছি চলে এলে ডিসি সুদীপ সরকার বিজেপির মিছিল আটকানোর নির্দেশ দেন। বিজেপির মিছিল এবং পড়ুয়াদের মিছিল মুখোমুখি হলে আইনশৃঙ্খলার সমস্যা হবে, এই কারণেই আটকে দেওয়া হয় পড়ুয়াদের মিছিলও।
ওই দিন সুলেখা মোড়ে আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা এক আধিকারিক বলেন, ‘‘ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল পরিস্থিতি। তাই ডিসির নির্দেশে আমরা বিজেপির মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দিই। ঠিক সেই সময়ে পড়ুয়াদের মিছিল থেকে এক দল ছাত্রছাত্রী তেড়ে যায় বিজেপির মিছিলের দিকে।” পুলিশ কর্তাদের একাংশের দাবি, ওই পরিস্থিতিতে বিজেপি সমর্থক এবং যাদবপুরের পড়ুয়ারা এক জায়গায় চলে আসায় পুলিশের লাঠি অল্প বিস্তর পড়ুয়াদেরও গায়ে লাগে।সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের লাঠিচার্জের প্রতিবাদ করে পথে বসে পড়েন যাদবপুরের পড়ুয়ারা।
লালবাজার সূ্ত্রে খবর, পড়ুয়াদের মিছিলে পুলিশ লাঠি চালিয়েছে, এমন খবর পৌঁছয় গঙ্গাসাগরে থাকা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। তিনি সেই খবর শুনে যারপরনাই উষ্মা প্রকাশ করেন। এর পর মমতা ফোন করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্ষোভের আঁচ পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার ডিপি সিংহ ঘটনাস্থলে পৌঁছন। পৌঁছে যান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। পুলিশের তরফ থেকে পড়ুয়াদের বোঝানো হয় যে, গোটা বিষয়টি অনিচ্ছাকৃত। এমনকি সুদীপ সরকার নিজেও পড়ুয়াদের কাছে দুঃখপ্রকাশ করে জানান, তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করার কোনও উদ্দেশ্য পুলিশের ছিল না। বিজেপির মিছিলটাই ছত্রভঙ্গ করাটা তাঁদের লক্ষ্য ছিল। কোনও পড়ুয়া আঘাত পেয়ে থাকলে তিনি ক্ষমা চাইতেও প্রস্তুত, এমন বার্তাও দেওয়া হয়। তখনকার মতো ধীরে ধীরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে এবং পড়ুয়ারা পুলিশের বিরুদ্ধে যাদবপুর থানায় অভিযোগও দায়ের করেন।
কিন্তু লালবাজারের একটি সূত্রে খবর, বিষয়টি তখনকার মতো মিটলেও, সুদীপ সরকার যে ভাবে সে দিন পরিস্থিতি সামলেছেন তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করা নবান্ন থেকে। তখন থেকেই জল্পনা শুরু হয় যে, শাস্তির খাঁড়া নামতে পারে ওই আইপিএস অফিসারের মাথায়। যদিও লালবাজারে তাঁর সহকর্মী এবং অধস্তন আধিকারিকদের বড় অংশেরই দাবি, ওই দিন সুদীপ দক্ষ হাতে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছিলেন। তা না হলে আরও বড় গন্ডগোল হতে পারত। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, যদিও সেই কথা গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি নবান্নের শীর্ষ মহলের।
লালবাজারের এক শীর্ষ কর্তা এ দিন বলেন, ‘‘সুদীপবাবু ছুটিতে আছেন।’’ তবে যুগ্ম কমিশনার (সদর) শুভঙ্কর সিংহ সরকারকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,‘‘ডিসি এএসডি ছুটিতে আছেন কি না আমার জানা নেই।’’ লালবাজার সূত্রের খবর, সরকারি ভাবে ছুটিতে না পাঠিয়েও আপাতত সুদীপকে ডিভিশনের দায়িত্ব থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে। গত ৪৮ ঘণ্টা ধরে কোনও থানার ওসি-ও তাঁকে রিপোর্ট করছেন না। তবে আইপিএস মহলের একাংশের আশঙ্কা, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে কেউ বা কারা গোটা বিষয়টি ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। ফলে শাস্তির মুখে পড়তে পারেন ওই পুলিশ কর্তা।