এ ভাবেই হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয় ওই পুলিশ কর্মীকে। অলঙ্করণঃ তিয়াসা দাস।
টানা প্রায় ১০ দিন ধরে প্রতি রাতে বেপরোয়া বাইক চালকদের ধরপাকড় করেও যে এখনও অনেককেই বাগে আনা যায়নি তার প্রমাণ হাতেনাতে পেল পুলিশ।
নাকা চেকিং এড়াতে বেপরোয়া হয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা বাইক কলকাতা পুলিশের এর ট্রাফিক কনস্টেবলকে রাস্তায় হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচরাতে নিয়ে গেল প্রায় ১০০ মিটার। গুরুতর আহত হলেন ওই পুলিশকর্মী। কিন্তু ওই বাইককে পাকড়াও করতে পারলেন না নাকা চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা বাকি পুলিশকর্মীরা। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত গ্রেফতার করা যায়নি অভিযুক্ত বাইক চালককে। যদিও এলাকার অনেকেই দাবি করেছেন, ওই যুবক স্থানীয় বাসিন্দা।
ঘটনাটি ঘটেছে কড়েয়া থানা এলাকায় সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউতে একটি শপিং মলের কাছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অন্য দিনের মতো সোমবার রাতেও চলছিল নাকা চেকিং। সম্প্রতি বিশেষ কিছু এলাকা চিহ্নিত করে বেপরোয়া বাইক চালকদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে পুলিশ। ওই এলাকাও বিশেষ ভাবে চিহ্নিত নিয়ম ভাঙা বেপরোয়া বাইক চালকদের জন্য। সেখানেই নাকা চেকিং করছিলেন কড়েয়া থানা এবং পূর্ব ট্রাফিক গার্ডের পুলিশ কর্মীরা।
ঘটনার পর আহত ট্রাফিক পুলিশ কর্মী তপন ওঁরাও।— নিজস্ব চিত্র
আরও পড়ুন: কলকাতায় অ্যাপ ক্যাবের সঙ্গে ধর্মঘটে এ বার হলুদ ট্যাক্সিও, চূড়ান্ত হয়রানি যাত্রীদের
পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ হেলমেটহীন এক বাইক চালককে দেখে পুলিশকর্মীরা থামানোর চেষ্টা করেন। সামনে নাকা চেকিং চলছে দেখে বাইকের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পালাতে গিয়ে বাইকটি ভিড় রাস্তায় অটো এবং অন্য গাড়ির ভিড়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা মারে এক পথচারীকে। ধাক্কা মেরে ফের পালানোর চেষ্টা করেন ওই বাইকচালক।
বেপরোয়া ওই বাইকচালককে ধরতে সেই সময়ে নাকা ডিউটেতে থাকা পূর্ব ট্রাফিক গার্ডের কনস্টেবল তপন ওঁরাও এগিয়ে যান। কিন্তু পুলিশকে দেখে থেমে যাওয়া দূরে থাক, বাইকচালক পাশ কাটিয়ে পালাতে যান। সেই সময়েই তপন ওঁরাও পিছন থেকে বাইকটি ধরে ফেলেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, তপন বাইকটি ধরার সঙ্গে সঙ্গে গতি বাড়িয়ে দেন বাইকচালক। তপন তার পরেও হাত ছাড়েননি। বাইকের পিছনের অংশ তিনি ধরেই থাকেন। তার পর বাইকটি তপনকে টানতে টানতে এগিয়ে যায়। বাইকের গতির সঙ্গে পাল্লা দিতে না পেরে তপন রাস্তায় পড়ে যান। তার পরেও তাঁকে রাস্তায় হ্যাঁচড়াতে হ্যাঁচরাতে বেশ কিছুটা নিয়ে যায় বাইকটি। তত ক্ষণে তপনের হাত আলগা হয়ে যায় এবং বাইকটি বিনা বাধায় পালিয়ে যায়।
আরও পড়ুন: কাউন্সিলর ছাড়া মেয়র, প্রশাসকের জন্য আসছে বিল
গোটা ঘটনায় কার্যত তাজ্জব হয়ে গিয়েছেন পুলিশকর্তাদের একাংশ। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের কথায়, ‘‘পিছনে কোনও গাড়ি থাকলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত।’’ অন্য দিকে, পুলিশ কর্তাদের একাংশ অবাক বাইকচালকের বেপরোয়া মনোভাব দেখে। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে ওই নাকা চেকিংয়ের দায়িত্বে থাকা বাকি পুলিশকর্মীদের ভূমিকা নিয়েও। এক পুলিশ কর্তা প্রশ্ন তোলেন, ‘‘যখন ঘটনাটি ঘটছে, তখন বাকিরা কী করছিলেন? তাঁরা কেন তাড়া করে ধরতে পারলেন না বা কেন তাঁরা সাহায্য করতে পারলেন না তপনকে?”
পুলিশ সূত্রে খবর, বাইকচালক স্থানীয় বলে জানা গিয়েছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে বাইকটিকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তকে এ দিন দুপুর পর্যন্ত পাকড়াও করা সম্ভব হয়নি।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও। সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের YouTube Channel - এ।