দুঃসাহসিক ডাকাতির ঘটনা ঘটল সল্টলেকে। এক মহিলা ও তাঁর মেয়েকে পিছমোড়া করে বেঁধে লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছে আট জনের একটি ডাকাতদল। ঘটনাটি যখন ঘটে, তখন মুখ্যমন্ত্রী তার আশপাশের এলাকাতেই ছিলেন অন্য একটি অনুষ্ঠানে। তাঁর জন্য বাড়তি পুলিশও মোতায়েন ছিল ওই এলাকায়।
অন্যান্য দিনের মতোই শুক্রবার রাত ৮টা নাগাদ ফিজিওথেরাপি করাতে বাড়ির কাছে একটি হেল্থ সেন্টারে গিয়েছিলেন অমরনাথ চক্রবর্তী। ফিরে এসে দেখেন তাঁর সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গিয়েছে! বাড়িতে তাঁর স্ত্রী, দুই মেয়ে এবং পরিচারিকাকে পিছমোড়া করে বেঁধে রেখে লক্ষাধিক টাকার মূল্যবান সামগ্রী নিয়ে চম্পট দিয়েছে ডাকাতরা। ঘটনায় তদন্তে নেমে গতকাল রাতেই ৮ সন্দেহভাজনকে আটক করে জেরা করছে বিধাননগর (উত্তর) থানার পুলিশ। তবে লুঠ হওয়া সামগ্রী এখনও উদ্ধার করা যায়নি।
ঘটনাটি ঘটেছে সল্টলেকের সি-১৬০ ব্লকের একটি তিন তলা বাড়িতে। ওই বাড়ির বাসিন্দা অমরনাথ চক্রবর্তী তাঁর পরিবার নিয়ে দোতলায় থাকতেন। কল্যাণীতে পারিবারিক ব্যবসা রয়েছে তাঁদের। প্রতি দিনের মতোই শুক্রবার সন্ধ্যে সাড়ে ৭টা নাগাদ স্থানীয় একটি হেল্থ সেন্টারে ফিজিওথেরাপি করাতে গিয়েছিলেন অমরনাথবাবু। ঘরে ছিলেন স্ত্রী মল্লিকাদেবী, বড় মেয়ে রিনীতা, ছোট মেয়ে নম্রতা এবং পরিচারিকা।
আরও পড়ুন: স্টোনম্যান নয়, বচসার জেরেই খুন যুবককে
নম্রতাদেবীর অভিযোগ, রাত ৮টা নাগাদ জরুরি কাজে বাড়ি থেকে বেরচ্ছিলেন তিনি। সেই সময় হঠাৎই পিস্তল, ভোজালি, ছুরি হাতে বছর পঁচিশের ৭-৮ জন যুবক জোর করে ঢুকে পড়ে তাঁদের বাড়িতে। দু’জন ছাড়া বাকি সকলেরই মুখ ছিল কালো কাপড়ে বাঁধা। বাড়িতে ঢুকেই ডাকাতরা নম্রতাকে সোফার ওপর ফেলে পিছমোড়া করে বেঁধে ফেলে। ভয় দেখায়, চিৎকার করলে বা পুলিশে খবর দেওয়ার চেষ্টা করলে শেষ করে দেওয়া হবে! এর পরেই অমরনাথবাবুর বড় মেয়ে রিমিতা আর স্ত্রী মল্লিকাদেবীকে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায় দুষ্কৃতীরা। ভয় দেখিয়ে ১০ ভরি সোনার গয়না, দামী ঘড়ি, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং আরও কিছু দামী সামগ্রী লুঠ করে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা। ডাকাতরা বেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে ফোন করেন নম্রতা। সেই সময় বাড়ি ফিরে আসেন অমরনাথবাবুও। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে বিধাননগর (উত্তর) থানার পুলিশ। আসেন সল্টলেকের পুলিশ কমিশনার জ্ঞানবন্ত সিংহ সহ পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। অমরনাথবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে গতকাল রাতেই ৮ সন্দেহভাজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, অমরনাথবাবু বাড়িতে নেই, সেটা জেনেই দুষ্কৃতীরা বাড়িতে ঢুকেছিল। ফলে এই ঘটনায় ওই পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ কোনও ব্যক্তির যোগ রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। ডাকাতরা প্যান্ডেলের কাপড় দিয়ে নম্রতার হাত বেঁধেছিল। ফলে স্থানীয় ডেকরেটার্স সংস্থাগুলোতেও খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। জানার চেষ্টা হচ্ছে, দুষ্কৃতীরা কাদের কাছ থেকে ওই প্যান্ডেলের কাপড় জোগাড় করেছিল।
ঘটনাচক্রে কিছুটা দূরে সেই সময় সল্টলেকে খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বাড়িতে এক পারিবারিক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই সেই সময় স্বাভাবিক ভাবেই এলাকায় ছিল পুলিশি নজরদারির কড়া ব্যবস্থা। হাজির ছিলেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও। তার মধ্যেও কী ভাবে এমন ঘটনা ঘটল, উঠছে সেই প্রশ্নও।