কলকাতায় আদিবাসীদের মিছিলের জেরে যানজট। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আদিবাসী সংগঠনের মিছিলের জেরে সকালেই হাওড়া সেতুতে যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। বেলা গড়ানোর পরেও যানজটের সমস্যা পুরোপুরি কাটল না। বরং আটকে পড়া গাড়ির স্রোত কার্যত অবরুদ্ধ করে দিল গোটা মধ্য কলকাতাকে। আদিবাসীদের দীর্ঘ মিছিল যত ধর্মতলার দিকে এগোতে থাকে, ততই যান চলাচল স্তব্ধ হয়ে যায় মধ্য কলকাতার গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, চাঁদনি চক এলাকায়। প্রায় একই পরিস্থিতি উত্তর কলকাতার বিডন স্ট্রিটেও।
গাড়ির চাকা স্তব্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যস্ত সময়ে বাসেই বসে থাকতে হয় যাত্রীদের। পর পর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় কেউ বিকল্প উপায়েও গন্তব্যে পৌঁছতে পারছেন না। হাওড়া থেকে ফেরি বা লঞ্চে উঠে বাবুঘাট চত্বরে এসেও বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। কারণ অত্যধিক ভিড়ের কারণে লঞ্চ পরিষেবা কিছু সময় বন্ধ রাখতে হয়। পরে লঞ্চে করে মধ্য কলকাতায় পৌঁছেও বাস বা অন্য গণপরিবহণ না থাকায় অসুবিধার মুখে পড়েন যাত্রীরা। বেলা গড়াতে ভিড় বাড়তে থাকে মেট্রোতেও। অত্যধিক ভিড়ের কারণে অনেকেই একের পর এক মেট্রো ছাড়তে থাকেন।
গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের তরফে সকাল ১১টা নাগাদ এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে একটি পোস্ট করে জানানো হয়, মিছিলের জেরে অবরুদ্ধ ধর্মতলা ক্রসিং, গণেশচন্দ্র অ্যাভিনিউ, লেনিন সরণী, জহরলাল নেহরু রোড, রেড রোড, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, মেয়ো রোড, ডোরিনা ক্রসিং, রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ, সিআর অ্যাভিনিউ, এসএন ব্যানার্জি রোড, হাওড়া সেতু, মহাত্মা গান্ধী রোড, স্ট্র্যান্ড রোড, পার্ক স্ট্রিট।
শুক্রবার সকাল ৯টা নাগাদ আচমকাই হাওড়া সেতুতে শুরু হয় অবরোধ। রাস্তার উপর পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধিদের। তাঁদের দাবি, কুড়মি-মাহাতোরা জোর করে তফসিলি জনজাতির তকমা পেতে চাইছে। রাজনৈতিক মদতও পাচ্ছে তারা। এর প্রতিবাদে পথে নেমেছে ‘ইউনাইটেড ফোরাম অফ অল আদিবাসী অর্গানাইজেশন্স’ বলে আদিবাসীদের একটি সংগঠন।
হাওড়া সেতুর দুই প্রান্ত ধরে মিছিল এগোয় কলকাতার ব্রেবোর্ন রোডের দিকে। মিছিলের গন্তব্য রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ। সেখানেই আদিবাসী সংগঠনটির তরফে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। ক্ষুব্ধ নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, জায়গায় জায়গায় ট্র্যাফিক মোতায়েন থাকলেও তাঁদের খুব একটা সক্রিয় ভূমিকায় দেখা যায়নি। স্ট্র্যান্ড রোডমুখী রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প উপায়েও গন্তব্যে পৌঁছতে নাকাল হতে হয় অফিসযাত্রীদের। অনেকে পায়ে হেঁটেই অফিসে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন। নিত্যযাত্রীদের এক জনের কথায়, ‘‘কী কারণে এই মিছিল, আমরা জানি না। কিন্তু কাজের সময়ে এ ভাবে হয়রানি হতে হলে খুব মুশকিল।’’ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মিনি বাসের এক কন্ডাক্টরেরও দাবি, মিছিল সম্পর্কে তাঁরা অবগত ছিলেন না। তাই সেতুর উপর দীর্ঘ ক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন বাস নিয়ে। কখন এই মিছিল শেষ হবে, কখন যেতে পারবেন গাড়ি নিয়ে, কিছুই জানেন না।