সল্টলেকের একটি বিনোদন পার্কে। সোমবার। — নিজস্ব চিত্র
চার বছর আগে সল্টলেকের নিক্কো পার্কে ওয়াটার রাইড ভেঙে আহত হয়েছিল একাধিক কিশোর। এর পরেই নড়েচড়ে বসেছিলেন পার্ক-কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এমন নানা বিনোদনমূলক পার্ক যে রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির অভাবে বিপজ্জনক ভাবে রয়েই গিয়েছে, রবিবার হাওড়ার বেলিলিয়াস পার্কে রাইড ভেঙে তরুণীর মৃত্যু ফের তা প্রমাণ করল।
২০১২-র অগস্টে ওই দুর্ঘটনার পরে বেশ কিছু দিন বন্ধ রাখার পরে প্রশাসনের অনুমতি পেয়ে ফের চালু হয় নিক্কো পার্ক। সূত্রের খবর, এর পর থেকেই প্রতিদিন পার্ক
চালু করার আগে প্রতিটি রাইড পরীক্ষা করে রিপোর্ট জমা করা হয়। পার্ক চালু থাকাকালীনও ফের একবার পরীক্ষা করা হয় রাইডগুলি। নিক্কো পার্কের এক কর্তা বলেন, ‘‘আমরা সুরক্ষার দিকটি বেশি গুরুত্ব দিই। রোজ দু’বার করে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়ার পরেই রাইড চালু করা হয়। বছরে একবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সমস্ত রাইডগুলি বন্ধ রাখা হয়। সে সময়ে সমস্ত দিক থেকে রাইডগুলি পরীক্ষা করা হয়। প্রয়োজনে সেগুলি সংস্কার করা হয়। এই কাজের জন্য বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারেরা রয়েছেন। এমনকী বছরে একবার এ বিষয়ে দক্ষ বাইরের একটি সংস্থাকে দিয়েও পরীক্ষা করানো হয়।’’
বছরভর ভিড় লেগে থাকে এই পার্কে। গত কয়েকদিনে গড়ে আড়াই হাজারেরও বেশি মানুষ গিয়েছেন, রাইডে চড়েছেন। পুরনো ৫০০ বা ১০০০ টাকার নোট না নেওয়া হলেও ভিড়
কিন্তু কমেনি। কর্তৃপক্ষের একাংশের কথায়, পার্কে অনলাইন পেমেন্টের সুযোগ রয়েছে। তুলনায় নগদে বা খুচরোয় টিকিট কিনে রাইড
চড়ার সংখ্যা তুলনায় কম। গড়িয়া থেকে সোমবার সপরিবার নিক্কো পার্কে গিয়েছিলেন তরুণ রায়। বললেন, ‘‘হাওড়ায় তরুণীর মৃত্যুর ঘটনা আতঙ্কের। এখানে এসে কিছুটা ভয় লাগছিল।
কিন্তু এখানকার ব্যবস্থা বেশ ভাল। রোপওয়েতে চড়লাম। অসুবিধা হয়নি।’’ তবে পর্যটকদের কথায়, পার্কে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারির ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।
এই নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণ নিক্কো পার্কে চোখে পড়লেও, বহু ক্ষেত্রেই কিন্তু তা মিলছে না। সল্টলেকে করুণাময়ী মেলা
প্রাঙ্গণে বছরভর নানা অনুষ্ঠান হয়। নানা ধরনের রাইড থাকে সেখানে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, সল্টলেকের পার্কগুলিতে স্থায়ী রাইডের ক্ষেত্রে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অভাব রয়েছে। আর মেলা ও অনুষ্ঠানে বসানো রাইডগুলি তো আরও বিপজ্জনক। সেগুলি পরীক্ষার কোনও ব্যবস্থাই চোখে পড়ে না। তাঁদের আরও অভিযোগ, আয় বাড়াতে মেলায় বা বিভিন্ন বিনোদনমূলক পার্কে অনেক সময়েই রাইডগুলিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি লোক তোলা হয়। সেটি আরও বেশি বিপজ্জনক। বেশি ভারের জন্য দুর্ঘটনার সংখ্যাও বেড়ে যায়। পাশাপাশি, বিভিন্ন জায়গায় রাইডগুলি আদৌ কোনও বিশেষজ্ঞ ইঞ্জিনিয়ারকে দিয়ে পরীক্ষা করানো হয় কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
সল্টলেকে বাসিন্দাদের একটি সংগঠনের কর্মকর্তা কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, ‘‘বছরে বিভিন্ন মেলা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রকমারি রাইড ও নাগরদোলার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সেগুলি কতটা সুরক্ষিত, তা পরীক্ষার কি আদৌ কোনও ব্যবস্থা রয়েছে?’’ পাশাপাশি তাঁর বক্তব্য, বিনোদনমূলক পার্কগুলিতে নিয়মিত নজরদারি ও রক্ষণাবেক্ষণ হয় কি না, সে দিকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে প্রশাসনকে।
বিধাননগর মেলা (উৎসব) আয়োজন করে পুরসভা। পুরকর্তাদের একাংশ জানান, সব রকম পরীক্ষার পরেই মেলায় বিনোদনমূলক রাইড রাখার অনুমতি দেওয়া হবে। পাশাপাশি, মেলার দিনগুলিতেও নজরদারি চালানো হবে। এ ছাড়া খতিয়ে দেখা হবে ব্লকের পার্কগুলির অবস্থাও।