মহারানি ভিক্টোরিয়ার এই স্মৃতিসৌধে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে নানা গল্প
ঔপনিবেশিক ভারতের সহস্র ইতিহাস আগলে রাখা কলকাতার ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল আসলে গল্পের ঝুলি নিয়ে বসে থাকা ঠাকুরমার মতো। বয়স একশো ছুঁই ছুঁই। মাকরানা মার্বেলের সিঁড়ি পেরিয়ে ওই ধনুকাকৃতি খিলান দিয়ে তার কাছে পৌঁছতে পারলে ‘ঠাকুরমার ঝুলি’ থেকে বেরিয়ে পড়ে পুরনো ভারতের গল্প। শহর কলকাতার বিবর্তনের ছবি ও আরও কত কী।
নুড়ি পাথরের পথ পেরিয়ে যারা সেই গল্প শুনতে গিয়েছি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল তাদের নিরাশ করেনি। কিন্তু প্রায় এক শতক ধরে কলকাতার অন্যতম দ্রষ্টব্য হিসেবে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্মৃতিসৌধ নিজের মধ্যে এমন একটা গল্প সিঁধিয়ে রেখেছে, যেটা হয়তো তার অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে গিয়ে অনেকেই উপেক্ষা করে গিয়েছি।
ভিক্টোরিয়ার চারটে কোণায় মিনারের মতো অংশগুলো অবশ্য কারও নজর এড়ায় না। উত্তরে কুইনস ওয়ের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ভিক্টোরিয়ে মেমোরিয়াল হলের যে মূল প্রবেশদ্বার, তার দুই পাশের দেওয়াল ধরে এগোলে দু’প্রান্তে রয়েছে এমনই দুটো মিনার। এই মিনারের নীচে দুটো ছোট দরজার দিকে তাকালেই পাওয়া যাবে সেই গল্পের খোঁজ।
এই দুটো কাঠের দরজার ঠিক উপরের দুই পাশে পাথরে খোদাই রয়েছে চারটে নদীর নাম। যা খুঁটিয়ে দেখলে তবেই নজরে আসে। বাঁ দিকের মিনারের দরজার উপরে দুই পাশে রোমান হরফে যথাক্রমে লেখা ‘ইন্দাস’ এবং ‘যুমনা’। ডান দিকের দরজার উপরে একই ভাবে লেখা ‘গ্যাঞ্জেস’ এবং ‘কৃষ্ণা’। অর্থাৎ ভারতীয় উপমহাদেশের চারটে নদী সিন্ধু, যমুনা, গঙ্গা ও কৃষ্ণার নাম। আর এখানেই রহস্য।
যেখানে দেখতে পাবেন সেই চারটে নদীর নাম। গ্রাফিক্স - শৌভিক দেবনাথ
কী কারণে এই নদীগুলোর নাম লেখা? কেনই বা বেছে নেওয়া হল এই চারটে নদীকে?
সিন্ধু সভ্যতা থেকে মুঘল সাম্রাজ্য— সিন্ধু নদ এবং গঙ্গা-যমুনা অববাহিকাতেই লালিত পালিত হয়েছে ভারতীয় উপমহাদেশ। ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষমতার রাশ হাতে নিয়ে, পশ্চিমে সিন্ধু নদ ও তার অববাহিকা, উত্তরে ও পূর্বে গঙ্গা-যমুনা দোয়াব এবং দক্ষিণে কৃষ্ণা নদী পেরিয়ে বিস্তৃত অখণ্ড ভারতের শাসক হয়ে উঠেছিলেন মহারানি ভিক্টোরিয়া। সেই সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি বোঝাতেই সম্রাজ্ঞীর স্মৃতিতে তৈরি সৌধের গায়ে ওই চারটে নদীর নাম লেখা।
৫৭ একরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল হল প্রাঙ্গণে রাখা বিভিন্ন মূর্তি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ভাস্কর্য কিংবা গম্বুজ শিখরে দাঁড়িয়ে থাকা পরি— প্রত্যেকের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এমন অনেক ছোট ছোট গল্প, যা হয়ত ভিক্টোরিয়ায় আগত দর্শকরা লক্ষ্যই করেন না। কিন্তু ওরা আছে, ওরা থাকবে কোনও এক কৌতূহলি আগন্তুককে সেই গল্প বলার অপেক্ষায়।