পোস্টমর্টেম রিপোর্টেও ধোঁয়াশা কাটছে না ম্যাডক্স স্কোয়ারের সামনে হাতাহাতিতে ইঞ্জিনিয়ার রমিত মণ্ডলের মৃত্যুর ঘটনার। রমিতের বাড়ি অবশ্য অভিযোগের আঙুল তুলেছে ঘটনার সময় রমিতের সঙ্গে থাকা বন্ধুদের দিকেই।
বুধবার রমিতের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মাথার পিছনে ভারী কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল। রিপোর্ট বলছে ধারালো নয়, ভোঁতা অস্ত্র দিয়েই আঘাতের চিহ্ন মিলেছে রমিতের মাথায়। যে কারণেই তাঁর মাথার একটা বড় অংশ থেঁতলে যায়। প্রচণ্ড পরিমাণে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এর ফলেই মারা যান সোনারপুরের বাসিন্দা বছর ২৯য়ের রমিত মণ্ডল।
রমিতের পরিবার সূত্রে জানানো হয়েছে, গত শুক্রবার বন্ধুদের সঙ্গে সন্ধ্যে বেলা গাড়ি করে বেরিয়েছিলেন তিনি। তারপর রাত দুটো পর্যন্ত কোনও খোঁজ ছিল না তাঁর। দুটোর পরে রমিতের জামাইবাবু তপন মণ্ডলকে ফোন করে রমিতের বন্ধু দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য এবং চিরঞ্জিত নন্দী। জানান, রমিতের আহত হওয়ার খবর। সেই রাতেই বাইপাসের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভর্তি করেন ওই বন্ধুরা। গাড়িতে রমিত, দেবজ্যোতি, চিরঞ্জিত ছাড়াও ছিলেন রমিতের আরও দুই বন্ধু সুরজিত্ নস্কর এবং শুভজিত্ নস্কর।
আরও পড়ুন: রাতের শহরে আক্রান্ত, মারা গেলেন ইঞ্জিনিয়ার
বুধবার রমিতের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, যে বন্ধুদের সঙ্গে রমিত ওই দিন বেরিয়ে যান তাঁদের সঙ্গে রমিতের আলাপ খুবই অল্প দিনের। এই বন্ধুরা কখনও তাঁদের বাড়িতেও আসেননি বলে জানিয়েছেন রমিতের বাড়ির লোক। তবে একমাত্র সুরজিত্ নন্দী এর আগে একবার রমিতের বাড়ি এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন রমিতের জামাইবাবু তপন মণ্ডল। পরিবার সূত্রে আরও দাবি, রমিত এর আগে কখনই সন্ধ্যেবেলা বেরিয়ে এত রাত করে বাইরে থাকেননি। ঘটনার দিনও সারা দিন বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শরীর ভাল না থাকায় নিজের ঘরেই শুয়েছিলেন তিনি। সকাল থেকেই ২০ থেকে ২৫ বার রমিতের মোবাইলে তাঁর বন্ধুদের ফোন এসেছিল। কিন্তু ঘুমিয়ে থাকার কারণে রমিত ফোন ধরেননি। সন্ধ্যের দিকে ফোন ধরার পরেই তিনি বেরনোর জন্য তৈরি হন। বাড়ির বাইরে তাঁর জন্য অপেক্ষা করছিলেন সুরজিত্।
কিন্তু কেন এই বন্ধুদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ করছেন রমিতের পরিবার। বন্ধুদের সঙ্গে বেরিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া এবং তার পরেই মৃত্যু। এই কারণেই সেই সময়ের সঙ্গীদের দিকেই আঙুল তুলছেন পরিবার। এই মৃত্যুর তদন্তে নেমে পুলিশকে ভাবিয়ে তুলেছে বেশ কিছু প্রশ্ন। রমিতের বন্ধুরা জানিয়েছেন, ওই দিন সোনারপুর থেকে বারিয়ে পার্ক সার্কাসের একটি দোকান থেকে বিরিয়ানি কিনে তাঁরা গাড়ি করে ঘোরেন। রাত দেড়টা নাগাদ ম্যাডক্স স্কোয়ারের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ার সময়েই স্থানীয় কিছু ছেলের সঙ্গে বচসা বাধে। রমিতের বন্ধুদের দাবি গালাগালি করে গাড়ির কাচ ভেঙে দেয় তাঁরা। গাড়ি নিয়ে ওই এলাকা ছে়ড়ে যাওয়ার সময় তাঁরা দেখেন গাড়ির পিছনে বসা রমিতের মাথা ভর্তি রক্ত। বন্ধুরা জানিয়েছিলেন সেই সময় তাঁরা কেউ মদ্যপান করেননি। কিন্তু রমিতের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বলছে ওই সময় মদ্যপ অবস্থাতেই ছিলেন তিনি। মঙ্গলবার রমিতের মৃত্যুর পরেই বালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন রমিতের বাবা মনোরঞ্জন মণ্ডল। খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে পুলিশ।