— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
নবান্নের সভাঘরে সোমবারের প্রশাসনিক বৈঠকে একাধিক বিষয় নিয়ে তীব্র ক্ষোভ ব্যক্ত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে অন্যতম ছিল শহরের হকার-সমস্যা। তাঁর সেই ক্ষোভ প্রকাশের পরে মঙ্গলবারই বিভিন্ন এলাকার ফুটপাত থেকে হকারদের সরাতে তৎপর হয় পুলিশ ও পুরসভা। ভেঙে দেওয়া হয় বেশ কিছু অস্থায়ী দোকান। সেই অভিযান চলল বুধবারও। এ দিন কলকাতার বিভিন্ন বড় বাজার এলাকার পাশাপাশি বিধাননগর, নিউ টাউন ও হাওড়ায় পুলিশি অভিযান চলে। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর কঠোর মনোভাবের পরে পুলিশ সক্রিয় হলেও কত দিন সেই সক্রিয়তা দেখা যাবে, আবার শহরের ফুটপাতগুলিতে হকারদের দৌরাত্ম্য ফিরে আসবে কি না— এমন নানা প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।
এ দিন কলকাতা পুর এলাকায় ডায়মন্ড হারবার রোডের দু’ধারে ফুটপাত দখল করে থাকা দোকানদারদের সরাতে অভিযানে নামে বেহালা থানার পুলিশ। তাদের সঙ্গে ছিলেন পুরসভার কর্মীরা। বুলডোজ়ার দিয়ে বেশ কিছু দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। এ দিনের অভিযান ঘিরে সাময়িক বিক্ষোভ দেখান ব্যবসায়ীরা। তাঁদের অভিযোগ, পুরসভার তরফে কোনও সময় দেওয়া হয়নি জিনিসপত্র সরিয়ে নেওয়ার। গোপাল বারুই নামে এক দোকানি বলেন, ‘‘মঙ্গলবার পুলিশ এসে বলেছিল, দোকানের মাথায় থাকা প্লাস্টিকের ছাউনি খুলে দিতে হবে। এ দিন এসে তারা বলল, পুরো দোকান সরিয়ে দিতে হবে। এই দোকানের আয়ে সংসার চলে। রাতারাতি কোথায় যাব?’’
এ দিন অভিযান চলে আলিপুর চিড়িয়াখানার সামনেও। বুলডোজ়ার নিয়ে এসে রাস্তার দু’পাশ জুড়ে থাকা ১০টিরও বেশি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়। ওই এলাকায় একটি খাবারের দোকান চালাতেন অসিত ভৌমিক। জিনিসপত্র গাড়িতে তোলার ফাঁকে তিনি বললেন, ‘‘বাবা-দাদুর আমল থেকে এখানে দোকান চালাচ্ছি। হঠাৎ করে এখন পুরসভা বলছে, সব অবৈধ!’’
শুধু বেহালা বা আলিপুর চিড়িয়াখানা সংলগ্ন রাস্তা নয়, এ দিন বড়বাজার, হেয়ার স্ট্রিট থানা এলাকার বেন্টিঙ্ক স্ট্রিট, ক্যানিং স্ট্রিট ও ব্রেবোর্ন রোডের সংযোগস্থল থেকেও বেআইনি হকারদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা হয় তাঁদের সামগ্রী। ক্যানিং স্ট্রিটে রাস্তা এবং ফুটপাত থেকে হকারদের সরে যাওয়ার জন্য মাইকেও প্রচার চালায় পুলিশ। সেই সঙ্গে নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনেও অভিযান চালিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় কয়েক জন হকারকে। অভিযান চলে চাঁদনি চক বাজার এবং হাতিবাগানেও।
কলকাতার সঙ্গে হকার সরাতে অভিযান চলে পড়শি বিধাননগর এবং নিউ টাউনেও। মঙ্গলবার সল্টলেক ও পাঁচ নম্বর সেক্টরের পরে এ দিন নিউ টাউনে ডিএলএফের কাছে হকার নিয়ন্ত্রণে পথে নামে প্রশাসন। সেখানে কোল ভবনের কাছে ১১টি দোকান ভেঙে দেয় নিউ টাউন-কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এনকেডিএ)। ওই ঘটনা ঘিরে এনকেডিএ-র কর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বচসা বাধে। পুলিশ ও এনকেডিএ-র তরফে বার বার ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেন।
এনকেডিএ-র সিইও প্রশান্ত বরাই জানান, যে ১১টি দোকান ভাঙা হয়েছে, সেগুলির মালিকদের আগেই পুনর্বাসনের জন্য স্থায়ী বাজারে আসতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা ফুটপাত ছেড়ে আসতে রাজি হননি। উল্লেখ্য, নিউ টাউনে হকার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চাপ রয়েছে এনকেডিএ-র। অভিযোগ, স্থায়ী বাজারে পুনর্বাসন দেওয়া সত্ত্বেও ওই হকারেরা ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করেন। নিউ টাউনের বহু সাইকেল বে তাঁরা দখল করে রেখেছেন বলেও অভিযোগ। কয়েক মাস আগে তারুলিয়া এলাকায় রাস্তা হকারমুক্ত করতে গেলে এনকেডিএ-র গাড়ি ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছিল স্থানীয়দের একাংশের বিরুদ্ধে।
ফুটপাত দখলমুক্ত করতে পুলিশি অভিযানের মধ্যেই এ দিন বিকেলে নিউ মার্কেটে পরিদর্শনে আসেন কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল। তার আগে সকালে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে একটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘পথচারীদের যাতায়াতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে নজর রাখতে দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চলবে।’’ বিকেলে কলকাতা পুর ভবনে এসে মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন হকার সংগ্রাম কমিটির নেতারা। পরে কমিটির নেতা শক্তিমান ঘোষ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পালন করা হচ্ছে, খুব ভাল কথা। তবে তা করতে গিয়ে পুলিশ অতি সক্রিয়তা দেখাচ্ছে।’’
এ দিন হকার উচ্ছেদ অভিযান চলে হাওড়াতেও। হাওড়া সেতু থেকে আন্দুল রোড পর্যন্ত রাস্তা দখল করে থাকা হকারদের সরিয়ে দেয় সিটি পুলিশ। বেআইনি পার্কিং বন্ধ করতেও চলে অভিযান। ড্রেনেজ ক্যানাল রোড, ইছাপুর মোড়, কদমতলা, চ্যাটার্জিপাড়া, ফোরশোর রোড, জি টি রোড, কিংস রোড থেকে তুলে দেওয়া হয় অবৈধ পার্কিং। বেআইনি ভাবে পার্কিং থেকে টাকা তোলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় দীপক ছেত্রী নামে এক যুবককে।