New Criminal Laws

অনুশোচনা হবে তো অপরাধের অন্য রকম শাস্তিতে? প্রশ্ন নতুন আইনে

কোন ক্ষেত্রে কোন শাস্তি হবে, তা নির্দিষ্ট করা নেই। যাঁর শাস্তি হল, তিনি নির্দেশ মতো কাজ করছেন কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি কে চালাবেন, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০২৪ ০৮:০২
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

কাউকে চড় মারার শাস্তি হতে পারে কোনও পার্ক বা রাস্তা সাফ করতে ঝাঁট দেওয়া। মত্ত অবস্থায় হাঙ্গামা বাধালে রোদে দাঁড়িয়ে যান নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে। আবার, চুরির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সামগ্রী ফেরত দেওয়ার পাশাপাশি শাস্তি হতে পারে হাসপাতালে ব্যস্ত সময়ে রোগীর ভিড় সামলানো। আত্মহত্যার চেষ্টা করলে শাস্তি হিসাবে কোনও শিশুদের স্কুলে বিনা বেতনে পড়াতে হতে পারে কয়েক দিন।

Advertisement

কিন্তু, কোন ক্ষেত্রে কোন শাস্তি হবে, তা নির্দিষ্ট করা নেই। যাঁর শাস্তি হল, তিনি নির্দেশ মতো কাজ করছেন কি না, সে ব্যাপারে নজরদারি কে চালাবেন, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা নেই। রাস্তার জঞ্জাল বা নর্দমা পরিষ্কার করার শাস্তি শুনে কেউ অপমানিত হয়েছেন বলে আদালতের দ্বারস্থ হলেই বা কী করা হবে, স্পষ্ট ধারণা নেই তা নিয়েও। ব্রিটিশ আমলের ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বদলে গত পয়লা জুলাই চালু হওয়া ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’য় লঘু অপরাধে ‘কমিউনিটি সার্ভিস’ করানো শাস্তির আওতায় আনার পর থেকে নানা মহলে এই প্রশ্ন উঠছে। এ নিয়ে স্পষ্ট উত্তর নেই আইনজীবীদের কাছেও। তাঁরা বলছেন, ‘‘সময় গড়ানোর সঙ্গে বিষয়টি স্পষ্ট হবে। তবে, বিচারক চাইলে সমাজের জন্য জরুরি কোনও কাজ করানোর বদলে পুরনো দিনের মতো শাস্তিও দিতে পারেন।’’

মনোরোগ চিকিৎসক দেবাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় আবার বলেন, ‘‘মান, অপমান ব্যাপারটা আপেক্ষিক। নর্দমা পরিষ্কার করতে বললে কে অপমানিত বোধ করবেন আর কে করবেন না, সেটা তো আগাম বলা সম্ভব নয়।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘কমিউনিটি সার্ভিস করানোর নামে কাউকে দিয়ে শাস্তি হিসাবে কিছু করানো হল, অথচ সেই শাস্তি ভোগের পরেও ওই অপরাধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কোনও অনুশোচনা হল না, তা হলে লাভ নেই। অপরাধের গভীরতা নয়, অপরাধ প্রবৃত্তি বদল করা যাবে কি না, সেই বিষয়টা নিয়েই ভাবা প্রয়োজন।’’ দেবাঞ্জনের মত, যিনি শাস্তি হিসাবে কমিউনিটি সার্ভিস দিচ্ছেন, তাঁকে দিয়ে নিয়মিত রিপোর্ট লেখানো যেতে পারে। তা হলে বিষয়টি সম্পর্কে তাঁর মনের ভাব প্রকাশ পাবে। কিন্তু এখানেও প্রশ্ন, যেখানে কমিউনিটি সার্ভিস করার শাস্তি পাওয়া কারও উপরে নজর রাখার লোকই অপ্রতুল, সেখানে রিপোর্ট নেবেন কে আর সেই রিপোর্ট পর্যালোচনাই বা করবেন কে?

Advertisement

আইনজীবীরা জানাচ্ছেন, ‘ভারতীয় ন্যায় সংহিতা’র চার নম্বর ধারায় কমিউনিটি সার্ভিসের কথা বলা হয়েছে। ‘ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা’য় এ ক্ষেত্রে শাস্তির দিকটি বলা আছে। চুরির অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমপক্ষে এক বছর এবং সর্বাধিক পাঁচ বছর জেল ও জরিমানা হতে পারে। কিন্তু, পাঁচ হাজার টাকার কম মূল্যের সামগ্রী চুরির ক্ষেত্রে সেই সামগ্রী ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি বিচারক চাইলে অভিযুক্তকে কমিউনিটি সার্ভিস করানোর শাস্তি দিতে পারেন।

আত্মহত্যার চেষ্টার ক্ষেত্রেও এক বছরের হাজতবাস এবং জরিমানার পরিবর্তে হতে পারে এই নতুন সাজা। একই ব্যাপার হতে পারে জনসমক্ষে মত্ত অবস্থায় বা অন্য কোনও ভাবে গন্ডগোল বাধানোর ক্ষেত্রে। সেই সঙ্গে এই অপরাধে রয়েছে ২৪ ঘণ্টা হাজতবাস বা এক হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার পথ। ভুয়ো মানহানির মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দু’বছরের জেল এবং জরিমানার পরিবর্তে এখন হতে পারে কমিউনিটি সার্ভিসের সাজা। কোনও সরকারি কর্মীর অপরাধে যুক্ত থাকলে একই সাজা হতে পারে। আগে এ ক্ষেত্রে এক বছরের হাজতবাস এবং জরিমানা ছিল। আদালতের নির্দেশ অমান্য করার জন্য তিন বছরের জেল বা জরিমানার পরিবর্তেও করতে হতে পারে কমিউনিটি সার্ভিস।

যদিও কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘সাজা ঘোষণার পরে দোষী ব্যক্তি নির্দেশ পালন করছেন কিনা, তাতে নজর রাখার দায়িত্ব কার, সেই সব এখনও স্পষ্ট নয়। আগামী নির্দেশিকা আসার পরেই এ ব্যাপারে মন্তব্য করা যাবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement