—প্রতীকী চিত্র।
অ্যাপ ক্যাবের পিছনের দিকের অংশে এমন ভাবে জিনিসপত্র চাপানো হয়েছে যে ডিকি উপচে পড়ছে। ফলে ডিকির দরজাও লাগানো যাচ্ছে না। কোনও মতে দড়ি দিয়ে বাঁধা। পিছনের দিকের আসনে যাত্রী বসার পরে পরিস্থিতি আরও বেসামাল। চালক স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবেন কি না, সেটাই বড় প্রশ্ন!
এমন বিপজ্জনক ভাবে যাতায়াত করতে গিয়ে অতীতে একাধিক বিপদ ঘটেছে। কখনও মাত্রাতিরিক্ত ভারে যাত্রী বোঝাই গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে গিয়েছে। কখনও পথ-বিভাজিকায় ধাক্কা মারায় প্রাণহানি ঘটেছে। অতিরিক্ত সামগ্রী বোঝাই যাত্রিবাহী গাড়ি ‘মা’ উড়ালপুলের উপর থেকে সরাসরি নীচেও পড়ে গিয়েছে। উত্তরবঙ্গে আবার গাড়ি খাদে পড়ে যাওয়ার ঘটনাও রয়েছে প্রচুর। বাণিজ্যিক গাড়িতে ‘ক্যারিয়ার’ নিষিদ্ধ থাকাকালীনই এমন ঘটনায় এত দিন প্রশ্ন উঠত পুলিশ-প্রশাসনের নজরদারি নিয়ে। প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়ত পুলিশ। কিন্তু গত মঙ্গলবার পরিবহণ দফতরের একটি ঘোষণার পরে এই সব প্রশ্নই নতুন করে সামনে আসছে।
সূত্রের খবর, ওই ঘোষণা অনুযায়ী, চুক্তিভিত্তিক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত বাণিজ্যিক গাড়িতে জিনিস রাখার ‘ক্যারিয়ার’ লাগানোর ছাড়পত্র দিয়েছে পরিবহণ দফতর। পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সব পক্ষ এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও চিন্তায় পড়েছে পুলিশ। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে পরিবহণ দফতরকে তারা চিঠি পাঠাতে পারে বলে খবর। লালবাজারের এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘এত দিন নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও বাড়তি বোঝা চাপিয়ে বাণিজ্যিক গাড়ি রাস্তায় চলেছে এবং দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। এ বার এই ছাড়পত্রে সেই বিপদ আরও বেড়ে যেতে পারে।’’ ওই পুলিশকর্তা জানান, উত্তরবঙ্গের ভ্রমণ ব্যবসার দিক মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে অলিখিত ছাড় ছিল। কিন্তু এখন গোটা রাজ্যেই বাণিজ্যিক গাড়ির ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার বৈধ ধরা হবে।
পরিবহণ দফতর যদিও জানাচ্ছে, ক্যারিয়ার লাগানোর অনুমতি দেওয়া হলেও কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। যেমন, এমন ক্যারিয়ার লাগানো সংক্রান্ত গাড়ির কাঠামোর কোনও পরিবর্তন ১৯৮৮ সালের মোটর ভেহিক্লস আইন মোতাবেক করতে হবে। রিজিয়োনাল ট্রান্সপোর্ট অথরিটি-র (আরটিও) অনুমতি লাগবে। ক্যারিয়ার ও সামগ্রীর যা উচ্চতা দাঁড়াবে, তা প্রস্তুতকারী সংস্থার দেওয়া সংশ্লিষ্ট গাড়িটির বৈধ উচ্চতার সার্টিফিকেটের চেয়ে কখনওই ৪ শতাংশের বেশি হওয়া চলবে না। ‘সেন্ট্রাল মোটর ভেহিক্লস রুলস’ (সিএমভিআর) এ ক্ষেত্রে মেনে চলতে হবে। রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটে গাড়ির যে সর্ব্বোচ্চ ধারণ ক্ষমতা দেওয়া রয়েছে, চালক, যাত্রী, তাঁদের সামগ্রী-সহ মোট ওজন কোনও ভাবেই তার বেশি হওয়া চলবে না। ক্যারিয়ার প্রস্তুতকারক সংস্থা ও যে সংস্থা সেটি লাগিয়েছে— দু’টিই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার অনুমোদিত হতে হবে। এ ক্ষেত্রেও ‘সেন্ট্রাল মোটর ভেহিক্লস রুলস’ কার্যকর হবে। ঋণে কেনা গাড়ির ক্ষেত্রে ঋণদানকারী সংস্থার অনুমতিও প্রয়োজনীয়।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে নিষিদ্ধ থাকাকালীনই দেদার ক্যারিয়ার লাগানো এবং মাত্রাতিরিক্ত বোঝা চাপানোর জন্য দুর্ঘটনা আটকানো যায়নি, সেখানে এমন সব নিয়ম শুধু খাতায়কলমেই থেকে যাবে না তো? এক ট্র্যাফিক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘আগে ক্যারিয়ার দেখলেই আটকানো হত। এখন উচ্চতা বা ওজন বেশি কি না, এগুলো দেখে ধরতে হবে। মাপবেই বা কে, ধরবেই বা কে?’’