—প্রতীকী চিত্র।
ডাক্তারের চেম্বারের নাম করে শুরু হয়েছিল নেশামুক্তি কেন্দ্র। সেখানে আবাসিকদের মারধর ও চেঁচামেচির প্রতিবাদ করে প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয়েরা। কিন্তু অভিযোগ, তাতে কাজ হয়নি। বরং, বহাল তবিয়তে চলছিল বরাহনগরের ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রটি। শনি ও রবিবার সেখানে দুই আবাসিকের মৃত্যু হয়। তার পরেই এ দিন ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়েরা।
শহর এবং শহরতলি জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা নেশামুক্তি কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসার নামে অমানবিক শারীরিক ও মানসিক অত্যাচারের অভিযোগ ওঠে প্রায়ই। আরও অভিযোগ, অধিকাংশ নেশামুক্তি কেন্দ্রেরই কোনও বৈধ কাগজ থাকে না। আর সব জেনেও যে প্রশাসন নির্বিকার, ফের তার প্রমাণ মিলেছে বরাহনগরে দুই আবাসিকের মৃত্যুর এই ঘটনায়। অসুস্থ হলে ওই আবাসিকদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল না কেন,
সেই প্রশ্ন তুলছেন স্থানীয়েরা। যদিও অভিযোগ, মারধরের কারণেই এই মৃত্যু। সূত্রের খবর, বাঁকুড়া ও ডোমজুড়ের বাসিন্দা, মৃত দুই আবাসিকের এক জনের বয়স ৬০, অন্য জনের ৪৫। তবে তাঁদের নাম পুলিশের তরফে জানানো হয়নি।
দিনকয়েক আগে দমদম পার্কের একটি নেশামুক্তি কেন্দ্রে এক আবাসিককে মারধরের অভিযোগ উঠেছিল। সে বিষয়ে পুলিশে গেলেও অভিযোগ নেওয়া হয়নি বলে দাবি ওই আবাসিকের পরিজনদের। বরাহনগরের ঘটনাতেও পুলিশের দাবি, মৃতদের
পরিজনেরা অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে এ দিন ওই নেশামুক্তি কেন্দ্রের মালিক দেবজ্যোতি সরকারকে পুলিশ আটক করে। ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে এসিপি-কে পাঠানো হয়েছিল। তিনি রিপোর্ট দেবেন। পাশাপাশি, দু’টি দেহের ময়না তদন্তের রিপোর্টে অস্বাভাবিক কিছু মিললে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই দুই আবাসিকের পরিবার অভিযোগ জানায়নি। তবে
এলাকাবাসীদের অভিযোগ সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার, তার সঙ্গে মৃত্যুর সম্পর্ক নেই। ওই কেন্দ্রের সব নথি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, বরাহনগরের ঋষি অরবিন্দ সরণি ও হিমাংশুমোহন চক্রবর্তী রোডের সংযোগস্থলে একটি তেতলা বাড়ির নীচের অংশ ভাড়া নিয়ে চলে নেশামুক্তি কেন্দ্রটি। রাস্তার উল্টো দিকে আর একটি বাড়ির নীচের তলাতেও রয়েছে ওই কেন্দ্রের একটি শাখা। স্থানীয়দের অভিযোগ, দু’টি বাড়িতে দু’-তিনটি ঘরের মধ্যে ৫০-৫৫ জন আবাসিককে রাখা হয়। তাঁদের প্রায়ই মারধর করা হয়। ফলে আবাসিকদের চিৎকারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন প্রতিবেশীরা। অভিযোগ, প্রায় তিন বছর ধরে এমন চলছে। প্রশাসনকে বার বার জানিয়েও ফল হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা শম্ভু বসুরায় বলেন, ‘‘শনিবার রাতে এক জন মারা গিয়েছেন বলে জানা যায়। রবিবার সকালে পাড়ার লোকেরা গিয়ে দেখেন, আরও এক জন মারা গিয়েছেন।’’ বাসিন্দাদের দাবি, এ দিন সকালে যিনি মারা গিয়েছেন, তাঁকে হাতে চ্যানেল করা অবস্থায় শনিবার রাতেও বাড়ির সামনের বারান্দায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছিল।
স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রথমে ডাক্তারের চেম্বারের নাম করে কেন্দ্র খোলা হলেও পরবর্তী সময়ে নেশাগ্রস্তদেরই সেখানে রাখা শুরু হয়। তাতেই ওঠে আপত্তি। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ওই দুই বাড়ির মালিক সঞ্জু চৌধুরী অনেক চেষ্টা করেও ঘর খালি করাতে পারেননি। তিনি জানান, ১১ মাসের ভাড়ার চুক্তি থাকলেও প্রতি বারই ছ’মাস করে সময় বাড়াচ্ছিলেন বনহুগলির বাসিন্দা দেবজ্যোতি। প্রথমে ১৩ হাজার টাকা ভাড়া ছিল। পরে তা বেড়ে ১৬ হাজার এবং এখন ২০ হাজার হয়। সঞ্জু বলেন, ‘‘আমি বার বার ঘর ছাড়তে বললেও দেবজ্যোতি শুনছিলেন না।’’
সূত্রের খবর, কয়েক দিন ধরে ওই দু’টি বাড়ি মিলিয়ে সাত-আট জন আবাসিক ছিলেন। এ দিনের ঘটনার পরে অনেকে বাড়ি চলে গিয়েছেন। কোনও কোনও আবাসিকের পরিজনেরা পুলিশের থেকে খবর পেয়ে এসে তাঁদের নিয়ে যান।