বিপজ্জনক: কলকাতা বিমানবন্দরের ফানেল পথে রয়েছে এমনই একাধিক বহুতল। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।
বিমানের ফানেল পথে দীর্ঘদিন ধরেই গজিয়ে উঠেছে অনেক বহুতল। তবে গার্ডেনরিচ-কাণ্ডে ১৩টি প্রাণ চলে যাওয়ার পরেই তবেই সেই সব নির্মাণ নিয়ে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ সামনে এল। তাঁদের দাবি, এ নিয়ে বহু দিন ধরেই পার্শ্ববর্তী পুরসভাগুলিকে সতর্ক করা হলেও কাজ হচ্ছে না।
কী এই ফানেল পথ?
কলকাতা বিমানবন্দরে যে দু’টি সমান্তরাল রানওয়ে রয়েছে, তাদের একটির মুখ বিরাটির দিকে, অন্যটি নিউ টাউনের দিকে। নিয়ম অনুযায়ী, যে পথ ধরে বিমান নামে, তার আশপাশের আকাশ-এলাকা নিয়ে অদৃশ্য ফানেল তৈরি করা হয়। সেই ফানেলের ভিতরে বিমানের আশপাশে কোনও ধরনের বাধা থাকার কথা নয়। সেই এলাকায় নির্দিষ্ট উচ্চতার উপরে নির্মাণ করাও নিষেধ। যে কারণে ওই সব এলাকায় যে কোনও নির্মাণের ক্ষেত্রেই
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নির্মীয়মাণ এবং তৈরি হওয়া বহুতল, মোবাইলের টাওয়ার, জলের ট্যাঙ্ক, উডেন আর্চ, হাইমাস্ট আলো, ছাদের উপরে ছাউনি-সহ নানা কিছু রয়েছে ওই ফানেল পথে। ওই সব নির্মাণ বিমানচালকের দৃষ্টির পথে বাধার সৃষ্টি করে। তবে উড়ানের স্বাভাবিক ওঠানামায় এগুলি ততটা সমস্যা করে না। কিন্তু ইঞ্জিনে কোনও গোলমাল হলে বিমানকে নির্ধারিত উচ্চতার চেয়ে নীচ দিয়ে চালাতে হয়, তখন ওই সব নির্মাণ বিপজ্জনক হয়ে উঠবে বলেই দাবি।
কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, নিউ টাউনের আকাঙ্খা মোড়ের কাছে একটি বহুতল তৈরির জন্য তাঁদের থেকে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) নেওয়া হয়েছিল। অভিযোগ, বিমানবন্দরের আধিকারিকেরা পরে গিয়ে দেখেন,যতটা উচ্চতার কথা বলে এনওসি নেওয়া হয়েছিল, তৈরি হয়েছে তার বেশি। এমনকি, একটি বহুতলের অনুমতি নিয়ে সেখানে একাধিক বহুতল হয়েছে।
বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁদের আশপাশের বিভিন্ন পুর এলাকায় চারটি ডিশ-অ্যান্টেনা, আটটি উঁচু স্তম্ভ (মূলত বজ্রনিরোধক যন্ত্র), ৩৯টি বাতিস্তম্ভ, ১০৬টি বহুতল-সহ মোট ২৯২টি বাধা রয়েছে।
ওই সব নির্মাণের জন্য কি নিয়মিত উড়ান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে?
বিমানবন্দরের এক কর্তার কথায়, “ফানেলে বেঁধে দেওয়া উচ্চতার উপরে যে কোনও নির্মাণই বেআইনি। ওই সব নির্মাণের কারণে নিয়মিত উড়ান অবতরণে সমস্যা হচ্ছে না। কিন্তু, বিমানের একটি ইঞ্জিন বিকল হলে সেটিকে অনেক নীচ দিয়ে উড়িয়ে আনতে হয়। সে ক্ষেত্রে ওই বেআইনি নির্মাণ বাধা হবে। এ সব ভেবেই নিয়ম বানানো হয়েছে।” তিনি আরও জানান, হাওড়া সেতুর মতো যে সব নির্মাণ সরানো যায় না, সেগুলির মাথায় আলো লাগানো হয়। কলকাতায় আসা সব পাইলটকেই জানানো থাকে ওই সব গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণের কথা। “ কিন্তু, বিমানবন্দরের গা-ঘেঁষা বহুতলের ক্ষেত্রে সেই নিয়ম প্রযোজ্য হওয়ার কথা নয় বলে দাবি ওই কর্তার।
কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতি বছরই বেআইনি নির্মাণের এই তালিকা বিধাননগর, কলকাতা, উত্তর দমদম, মধ্যমগ্রাম, নিউ ব্যারাকপুর পুরসভা ও নিউ টাউন-কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (এনকেডিএ) কাছে পাঠানো হলেও কাজ কিছুই হয় না।
যদিও এনকেডিএ-র এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘গত এক বছরে বিমানবন্দর আমাদের কোনও চিঠি দেয়নি। এ সব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওরা আলোচনা করলে সবাই মিলে বসে সমাধানসূত্র বার করা যাবে।’’ অথচ বিমানবন্দর সূত্রের খবর, নির্মীয়মাণ ও তৈরি বহুতল, মোবাইল টাওয়ার-সহ ছয়টি বাধা সেখানে রয়েছে।
বিমানবন্দরের হিসেবে বিধাননগর পুর এলাকায় ১৬৭টি বাধা থাকলেও পুর কর্তৃপক্ষের দাবি, গত বছর একটি নির্মীয়মাণ বহুতল নিয়ে বিমানবন্দর আপত্তি তোলায় সেটি বন্ধ হয়েছে। এক পুর আধিকারিকের কথায়, ‘‘একটি হাইমাস্ট আলো নিয়ে ওঁরা আপত্তি তুলেছেন। সেটির উচ্চতা কমাতে বলা হয়েছে।’’
মধ্যমগ্রাম পুর এলাকায় রয়েছে ৯৯টি বাধা। পুরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষের দাবি, ‘‘ওঁরা বাধার যে তালিকা পাঠিয়েছিলেন, তার সিংহভাগই সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিছু গাছ রয়েছে। সেগুলি কাটার জন্য বন দফতরের অনুমতি পেতে হবে।’’