নীতি-পুলিশি নয়, ওঁরা চান ভারসাম্য

নীতি-পুলিশদের সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই নেই। তবু কোথাও একটা পরিমিতি বোধ থাকাটাও দরকার। কলেজ বা শিক্ষাঙ্গনে পোশাক-বিধি নিয়ে এমনটাই মনে করছেন শহরের শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরা।

Advertisement

আর্যভট্ট খান

কলকাতা শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০১৯ ০০:৪৪
Share:

দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজ।

নীতি-পুলিশদের সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই নেই। তবু কোথাও একটা পরিমিতি বোধ থাকাটাও দরকার। কলেজ বা শিক্ষাঙ্গনে পোশাক-বিধি নিয়ে এমনটাই মনে করছেন শহরের শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে সমাজকর্মীরা। শুক্রবার গড়িয়ার দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজ কলেজে বি কম অনার্সের প্রথম বর্ষের এক ছাত্রী হাতকাটা জামা পরে আসায় ইউনিয়নের কয়েক জন সদস্য তাঁকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। এমনকি, হাতকাটা জামা পরে এলে তাঁকে কলেজে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য কলেজ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপে বিষয়টি মিটে গেলেও কলেজে পোশাক-বিধি আদৌ কতটা যুক্তিযুক্ত এবং তা নিয়ে নীতি-পুলিশিই বা কতটা সমর্থনযোগ্য, সেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

Advertisement

নীতি-পুলিশিকে সমর্থন না করলেও কলেজপড়ুয়াদের পোশাকে কোথাও একটা ‘শালীনতা’ থাকা দরকার বলে মনে করেন লেডি ব্রেবোর্ন কলেজের অধ্যক্ষা শিউলি সরকার। তাঁর মতে, “হাতকাটা জামা পরে এলেই যে শালীনতার মাত্রা ছাড়িয়ে যা, তা মনে করি না। কিন্তু শিক্ষা ক্ষেত্রে কোথাও একটা শালীনতার বেড়া থাকা দরকার।” তাঁর মতে, এর জন্য কাউকে হেনস্থা করা যেমন কাম্য নয়, তেমনই মাত্রাজ্ঞান ছাড়ানোটাও উচিত নয়।

বেথুন কলেজের অধ্যক্ষা মমতা রায় আবার মনে করেন, সব কলেজই একটা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি নিয়ে চলে। তাতে আঘাত লাগলে কারও খারাপ লাগতে পারে। মমতাদেবী বলেন, “দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজে কী হয়েছে, বিস্তারিত জানি না। তবে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার দীর্ঘদিনের কাজের অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি, নিজেদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ছাত্রছাত্রীরা প্রাণ দিয়ে ভালবাসে। তাই এমন কোনও পোশাক পরা বা আচরণ করা ঠিক নয়, যা অন্যকে আঘাত দেয়।” তবে পোশাক-বিধি নিয়ে কোনও ছাত্রীকে হেনস্থা করার বিষয়টি কোনও ভাবেই সমর্থন করেন না মমতাদেবী।

Advertisement

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অনুরাধা লোহিয়াও মনে করেন, পোশাক-বিধি আর নীতি-পুলিশি এক নয়। তিনি বলেন, “ছাত্রছাত্রীরা প্রাপ্তবয়স্ক। তাই কলেজে তারা কী পরবে আর কী পরবে না, সেটা মা-বাবা বা বাইরের কেউ ঠিক করে দেবেন না। নিজেদেরই ঠিক করতে হবে। পোশাকে নিজের মর্যাদাহানি ঘটছে কি না, সেটা নিজেকেই বুঝতে হবে।”

মৌলানা আজাদ কলেজের অধ্যক্ষ শুভাশিস দত্তের মতে, “পোশাকে শালীনতা শুধু মেয়েদের ক্ষেত্রে নয়, ছেলেদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। এক বার ক্লাসে একটি ছেলে চুলে অদ্ভুত রং করে আসায় ওকে বকেছিলাম। পোশাক ও সাজে মাত্রাজ্ঞান থাকাটা খুব জরুরি। কিন্তু তা নিয়ে দাদাগিরি কোনও ভাবেই সমর্থন করি না।”

সমাজকর্মী তথা আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের শিক্ষিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, “নীতি-পুলিশদের বিরোধিতা করছি, কিন্তু কোথাও একটা পরিমিতিজ্ঞানও থাকা দরকার। এক জন পার্টিতে যে পোশাক পরবেন, সেটা কি তিনি ভিড় ট্রেনেও পরবেন? ক্লাবেও তো পোশাক-বিধি আছে। কলেজে পোশাক-বিধি না থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের এমন কিছু পরে আসা উচিত নয়, যা তাঁদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অস্বস্তির কারণ হতে পারে।”

এক সময়ে কলেজে মেয়েদের পোশাক-বিধি চালু করতে গিয়ে যিনি বিতর্কে জড়িয়েছিলেন, সেই শুভঙ্কর চক্রবর্তীও বলছেন, ‘‘পোশাক পরার ক্ষেত্রে স্থান-কাল-পাত্র মাথায় রাখাটা জরুরি। সাঁতারের পোশাক পরে কি কেউ বিয়েবাড়িতে যায়? এই বোধটা থাকা উচিত।’’

দীনবন্ধু অ্যান্ড্রুজের অধ্যক্ষ সোমনাথ মুখোপাধ্যায় এ দিন বলেন, “আমাদের কলেজে কোনও পোশাক-বিধি নেই। সে দিন কী ঘটেছিল, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement