প্রতীকী ছবি।
বাড়ি ভাড়ায় নিয়ে, সুযোগ মতো ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে বাড়ির মালিকের সঙ্গে গোলমাল পাকানো। এর পরে মালিক উচ্ছেদের নোটিস দিলেই আদালতে গিয়ে স্থগিতাদেশ নেওয়া। পর পর মামলায় মালিককে জর্জরিত করে শেষ পর্যন্ত সস্তায় বাড়িটি হাতিয়ে নেওয়া।
অভিযোগ, এই ভাবে বাড়ি দখলের এক চক্র অনেক দিন ধরেই সক্রিয় সল্টলেকে। এর জন্য হিংসাত্মক ঘটনাও ঘটাচ্ছে তারা। এই চক্রের পিছনে শাসক দলের নেতা, এমনকি পুলিশের একাংশেরও মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সল্টলেকের বিএল-৫০ নম্বর বাড়ির দখল নিয়ে মারামারির ঘটনায় বর্তমান বাসিন্দা মহেশ সিংহানিয়ার অভিযোগ, ৫০-৬০ জন তাঁর বাড়ির ভিতরে ঢুকে ভাঙচুর করে সব তছনছ করে দেয়। এমনকি, পরিবারের মহিলাদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ।
সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত হিসেবে ধৃত ভৈরব চক্রবর্তী-সহ পাঁচ জন শুক্রবারই আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন। কলকাতার বেশ কিছু রেস্তরাঁর মালিক মহেশ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘মালিকানা নিয়ে মামলা চলছে। কিন্তু আমরা কোন জায়গায় বসবাস করছি, যেখানে প্রকাশ্যেই বাড়িতে ঢুকে আক্রমণ করবে দুষ্কৃতীরা? আবার সঙ্গে সঙ্গে জামিনও পেয়ে যাবে! পুলিশ কী করল?’’
সল্টলেকে অবশ্য বাড়ির দখল ঘিরে এমন ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। সিই ব্লকে একটি বাড়ি দখল করতে গিয়ে মালিকের ছেলের হাতে-পায়ে পেরেক পুঁতে দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। রজতশুভ্র দাস নামে সল্টলেকের বাসিন্দা এক আইনজীবী তাঁর একটি মামলা প্রসঙ্গে জানান, বাড়ি নিয়ে বিবাদ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। শুনানির দিন মালকিনকে হুমকি দেওয়ায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন ও মৃত্যু হয় তাঁর। ঘটনার সময়ে ভাড়াটেদের উপস্থিতির প্রমাণ পেয়ে পুলিশ খুনের মামলাও করে। বৃদ্ধার মেয়ে বিদেশ থেকে এসে মামলা চালাতে চাইলে তাঁকে যৌন হেনস্থাও করা হয়।’’ আইনজীবীদের একাংশ জানাচ্ছেন, সল্টলেকে দোতলা-তেতলা বাড়ি রয়েছে, ছেলেমেয়েরা বাইরে থাকেন, এমন বৃদ্ধবৃদ্ধারা অনেক সময়ে বাড়ি ভাড়া দেন কথা বলার লোক খুঁজতে।
বিএল-৫০ নম্বর বাড়ির বর্তমান বাসিন্দারা জানান, ভৈরব ওই বাড়িটি মনোজ টোডি নামে এক জনের থেকে ভাড়া নিয়েছিলেন। একটি ঘরে অতিথিশালা খোলা হয়েছিল। সেটি নিয়ে ২০১৯ সালে কিছু অভিযোগ ওঠে। পরে মনোজ বাড়ি খালি করার নির্দেশ দেন ভৈরবদের। মহেশ সিংহানিয়ার অভিযোগ, ‘‘তখন টাকা নিয়ে বাড়ি খালি করার পরে ফের আমার থেকে টাকা চায় ভৈরবের লোকজন। আমি অস্বীকার করার পরেই বৃহস্পতিবারের ঘটনা ঘটে।’’
দু’দিন আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বড় বড় ঘটনাতেও দুষ্কৃতীরা সহজে রেহাই পেয়ে যাওয়ার প্রসঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, মামলার সময়ে ঠিক ভাবে ধারা প্রয়োগ করতে। ফলে বিএল ব্লকের ওই ঘটনার পরে প্রশ্ন ওঠে, বাড়ি নিয়ে জটিলতা থাকলেও, মহিলাদের মারধর করার পরেও কী করে অভিযুক্তেরা আদালতে জামিন পেয়ে গেলেন?
প্রাক্তন পুলিশকর্তা পঙ্কজ দত্ত অবশ্য এ ক্ষেত্রে অভিযোগকারী বয়ান কী ভাবে নথিভুক্ত করেছেন, সে দিকে নজর দিতে চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের বিরুদ্ধে অনেক সময়ে গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। কিন্তু থানায় যিনি অভিযোগ দায়ের করছেন, তিনি সব ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ বলছেন কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।’’
ভৈরবের আইনজীবী সোমা মণ্ডলের পাল্টা দাবি, পুলিশ মারামারি এবং যৌন হেনস্থার ধারায় মামলা রুজু করলেও যৌন হেনস্থার অভিযোগকারিণী আদালতে অভিযোগ করেননি। তিনি বলেন, ‘‘আমার মক্কেলকে ওই বাড়িতে বীভৎস ভাবে পেটানো হয়। তাঁর মাথায় আটটি সেলাই হয়েছে। ওই ভাবে যাঁরা মেরেছেন, কেন তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ জামিনযোগ্য ধারা দিয়েছে, সেই প্রশ্ন তুলেছি। বিচারকও বিষয়টি পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন।’’
যদিও বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, দু’তরফই মারধরের অভিযোগ করেছে একে অন্যের বিরুদ্ধে। সেই অনুযায়ী ধারা দিয়ে মামলা করা হয়েছে। আদালতে অভিযুক্তেরা জামিন পেয়েছেন।