ভিড় থাকলেও ক্রেতা নেই, মন্দা পুজো-বাজারে

হাওড়া থেকে আসা এক ক্রেতা বললেন, ‘‘সব জিনিসের দাম অনেকটাই বেশি। তাই কোনও জিনিস কেনার আগে অনেক বার ভাবতে হচ্ছে।’’ ওই এলাকায় প্রায় তিনশোটির বেশি দোকান রয়েছে। সর্বত্রই একই চিত্র।

Advertisement

সুপ্রিয় তরফদার

শেষ আপডেট: ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৬:৩০
Share:

দোকান ফাঁকা, তাই মন মোবাইলেই। রবিবার, হাতিবাগানে। নিজস্ব চিত্র

কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টির পর রবিবার পরিষ্কার ছিল আকাশ। ব্যবসায়ীদের মনের মেঘ অবশ্য তাতেও কাটল না। পুজোর বাজারে বিক্রিবাটা নাকি পর্যাপ্ত নয় এখনও। অথচ নিউ মার্কেট থেকে হাতিবাগান, থিক থিক করছে ভিড়। ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যা, ভিড় বাড়লেও ক্রেতার সংখ্যা নিতান্তই কম। পাহাড়ে অশান্তি, বন্যা এবং জিএসটির ত্রিফলায় বিদ্ধ হয়েই পুজোর বাজার এ বার থমথমে বলে দাবি তাঁদের।

Advertisement

পুজোর মাসের প্রথম রবিবার। আমজনতার মানিব্যাগ একটু ভারীই। তাই আশা ছিল, এ দিন ভালই জমবে বাজার। কিন্তু সেই আশা পূরণ হয়নি। হাতিবাগানের এক পোশাক বিক্রেতা সুজিত বণিকের আক্ষেপ, অন্য বছর পুজোর মাসে যে ভাবে ভিড় উপচে পড়ে এ বার প্রথম থেকেই তার দেখা নেই। ভিন্ রাজ্য থেকে বহু ক্রেতা তাঁর দোকানে ভিড় জমাতেন। কিন্তু এ বারে সেই সংখ্যা সামান্য। অন্য এক ব্যবসায়ীর ব্যখ্যা, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার আর্থিক সংস্কারের নামে যে ভাবে একের পর এক পদক্ষেপ করছে, তার ধাক্কা তো সবাইকেই সামলাতে হবে। বিক্রেতা যেমন বাদ যাচ্ছে না, তেমনই ক্রেতাদেরও পকেটে টান পড়েছে। তার প্রতিফলন রবিবারের হাতিবাগান বাজার।’’

স্থানীয় এক প্রবীণ শঙ্কর দে বললেন, ‘‘আগে তো এই সময়ে রাস্তায় মানুষ হাঁটতে পারত না। পুলিশ দিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দিতে হত। এখন তো সম্পূর্ণ অন্য চিত্র।’’ দর দাম করলেও জিনিস কেনার প্রতি মানুষের ক্রমশ অনীহা তৈরি হচ্ছে বলে দাবি তাঁদের।

Advertisement

হাওড়া থেকে আসা এক ক্রেতা বললেন, ‘‘সব জিনিসের দাম অনেকটাই বেশি। তাই কোনও জিনিস কেনার আগে অনেক বার ভাবতে হচ্ছে।’’ ওই এলাকায় প্রায় তিনশোটির বেশি দোকান রয়েছে। সর্বত্রই একই চিত্র।

তবে ভিড়ের দিক থেকে হাতিবাগানকে পিছনে ফেলেছে নিউমার্কেট এলাকা। জওহরলাল নেহরু রোড থেকে নিউ মার্কেটের দিক এগিয়ে যেতে গেলে কার্যত লাইন দিতে হচ্ছে। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে হিমসিম খাচ্ছে পুলিশ। আশেপাশের খাবারের দোকানগুলিতে দাঁড়ানোর জায়গা নেই। মূল বাজার পর্যন্ত পৌঁছতেই লেগে গেল অনেকটা সময়।

কিন্তু বিক্রির প্রসঙ্গ উঠতেই নিউ মার্কেটের বহু পুরনো এক ব্যবসায়ী দেবু ভট্টাচার্য সাফ জানিয়ে দেন ক্রেতার সংখ্যা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ে অশান্তি, বন্যা এবং জিএসটি-র দাপটে ব্যবসা মার খাচ্ছে।’’ অন্য এক বিক্রেতা মহম্মদ রশিদের দাবি, ‘‘দোকানের সামনে যে ‘বার্বি গাউন’ রয়েছে সকাল থেকে অন্তত ৪৫ জন তার দাম জিজ্ঞেস করেছে। কিন্তু কেউ কিনলেন না। এক জনের সঙ্গে অন্তত সাত জন থাকছেন।’’ শপিং মলগুলিতেও ভিড় জমছে। কিন্তু বিক্রিতে সন্তুষ্ট নন তাঁরাও।

তবে এই সুযোগে ব্যবসা জমে উঠেছে খাবারের দোকানগুলিতে। সারা দিন বাজারে কেনাকাটার পরে অধিকাংশই ভিড় জমাচ্ছেন সেখানে। ফলে পুজোর কেনাকাটার বাজার ক্রমেই হয়ে উঠছে ভূরিভোজের প্রধান আস্তানা। তাই রশিদ পরিষ্কার বলে দেন, ‘‘ভিড় চাই না। ক্রেতা চাই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement