প্রতীকী ছবি।
এ বার বাড়ি থেকেই যাতে সকলে পুজোর মন্ত্রোচ্চারণ শুনতে পান, তার জন্য অধিকাংশ মণ্ডপে সাউন্ড বক্স লাগানো হয়েছিল। পুজোর চার দিন মণ্ডপে ভিড় কমাতে ছিল এমন উদ্যোগ। কিন্তু সেই শব্দের উপদ্রব চলল গোটা পুজো জুড়ে। বিসর্জনেও তার থেকে মুক্তি মিলল না।
শুরু থেকেই রাজ্য সরকার এবং কলকাতা হাই কোর্টের তরফে পুজো ঘিরে একাধিক নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এ বার। মণ্ডপে গিয়ে অঞ্জলি দিতে চাওয়া দর্শনার্থীর সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। যদিও সেই বিধিনিষেধের পরোয়া না করে শহরের বেশ কিছু মণ্ডপে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে অঞ্জলি-পর্ব চলেছে বলে অভিযোগ। তবে মণ্ডপে এসে অঞ্জলি বা পুজোর আচার-অনুষ্ঠান দেখার ভিড় কমাতে অনেক কমিটিই বাড়িতে বসে মন্ত্র শোনার ব্যবস্থা করেছিল। এ জন্য পাড়া মুড়ে ফেলা হয়েছিল শব্দযন্ত্রে। কয়েকটি পুজো কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, ভোর থেকে সারা দিন, পুজোর ক’দিন তারস্বরে বক্স বেজেছে। রাতে নির্দিষ্ট সময়ের পরেও তা বন্ধ হয়নি বলেই অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
আরও অভিযোগ, শহরের বেশ কিছু পুজোয় সেই বিধিভঙ্গ বহাল ছিল বিসর্জনেও। কারণ, শোভাযাত্রা না হলেও দীর্ঘ সময় ধরে বাজানো হয়েছে সাউন্ড বক্স। কিছু পুজোয় আবার ঢাকের বদলে তাসা, চড়চড়ি বাজনাও শোনা গিয়েছে বলে খবর। বালিগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা এক যুবক বললেন, ‘‘আমার মা হৃদ্রোগী। কিন্তু পুজোর ক’দিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এমন ভাবে মাইক বেজেছে যে দরজা-জানলা বন্ধ করে থাকতে হয়েছিল।’’ অভিযোগ অবশ্য মানতে চাননি ‘ফোরাম ফর দুর্গাৎসব’-এর সাধারণ সম্পাদক তথা হাতিবাগান সর্বজনীনের অন্যতম পুজোকর্তা শাশ্বত বসু। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কাছে এই ধরনের অভিযোগ আসেনি। তবে সত্যিই যদি কেউ সুযোগ নিয়ে তারস্বরে সাউন্ড বক্স, মাইক বাজিয়ে থাকেন, তা হলে তা কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়।’’
এ বছর গোটা পাড়া জুড়ে মাইক লাগানোর কথা স্বীকার করে নিয়েছেন উত্তর কলকাতার এক পুজো উদ্যোক্তা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতি বছরই আমাদের গোটা পাড়ায় মাইক লাগানো হয়। তবে সকলকে বাড়ি থেকেই অঞ্জলির মন্ত্র শোনাতে এ বছর একটু বেশিই মাইক লাগানো হয়েছিল।’’
পুলিশ সূত্রের খবর, রাত ১১টার পরে প্রকাশ্যে মাইক বা বক্স বাজানো আইনবিরুদ্ধ। জরুরি ঘোষণা বা আবেদন জানানোর প্রয়োজনেই একমাত্র ওই সময়ে শব্দষন্ত্রের ব্যবহার করা যেতে পারে। কিন্তু উৎসবের সুযোগ নিয়ে শব্দদূষণ চলেই, অভিযোগv পরিবেশকর্মীদের একাংশের। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলেন, ‘‘শব্দকে জব্দ করতে প্রশাসনের যতটা সক্রিয় হওয়া উচিত, সেটা তারা নয় বলেই উৎসবে শব্দদূষণের দাপট বাড়ে। এ বার দুর্গাপুজোতেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।’’
অভিযোগ প্রসঙ্গে লালবাজারের এক কর্তার দাবি, ‘‘শব্দদূষণ বন্ধ করতে সারা বছর নজরদারি চলে। উৎসবেও বহু জায়গায় রাতে অভিযান চালানো হয়েছে।’’