দর্শক হবে তো, আশঙ্কায় বেহালার পুজোকর্তারা

প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাই বলছেন, সেতু বিপর্যয়ের পরে যানবাহন সব ঘুরপথে চলায় চেতলা ও নিউ আলিপুরে যানজট বা়ড়ছে। সেই জট সামাল দিতে গেলে পুজো কমিটিগুলির সাহায্য প্রয়োজন

Advertisement

চন্দ্রপ্রভ ভট্টাচার্য ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৮
Share:

এবার এই চিত্র দেখা যাবে কী ? ফাইল চিত্র।

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়তেই চিন্তায় প়ড়েছে বেহালার পুজো কমিটিগুলি। সেতু ভাঙার ধাক্কা কি এ বার রাজ্যের দুই প্রভাবশালী মন্ত্রীর পুজোতেও প়়ড়বে? নবান্নের অন্দরে চলছে জল্পনা।

Advertisement

প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাই বলছেন, সেতু বিপর্যয়ের পরে যানবাহন সব ঘুরপথে চলায় চেতলা ও নিউ আলিপুরে যানজট বা়ড়ছে। সেই জট সামাল দিতে গেলে পুজো কমিটিগুলির সাহায্য প্রয়োজন। ফলে পুজো ব্যবস্থাপনার পরিধিতে খানিকটা সমঝোতা করতে হতে পারে। নবান্নের খবর, কাল, সোমবার পুজো কমিটিগুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকে এই প্রস্তাব দেওয়া হতে পারে প্রশাসনের তরফে।

রাজ্যে পালাবদলের অনেক আগে থেকেই পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের ‘চেতলা অগ্রণী’ এবং পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের ‘সুরুচি সঙ্ঘ’ পুজো ময়দানের তারকা। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে দুই পুজোর জৌলুস বেড়েছে। উপচে প়ড়ে ভিড়। সেই জনস্রোত সামলাতে রাস্তার একাংশ ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়। কিন্তু গত ক’দিনে যা পরিস্থিতি, তাতে পুলিশ মনে করছে, যানজট সামলাতে ওই ব্যারিকেডের মাপ কমানো হতে পারে। রাস্তার বিজ্ঞাপনী গেটও সরানো হবে কি না, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে।

Advertisement

সুরুচি সঙ্ঘের অন্যতম কর্তা স্বরূপ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ভিড় নিয়ন্ত্রণ করবে পুলিশ। ওরা যদি ছোট জায়গা করে ভিড় সামলাতে পারে, তা হলে আমরা আপত্তি করব কেন?’’ চেতলা অগ্রণীর তরফে রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘প্রশাসনের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করা হবে।’’

কেউ কেউ অবশ্য এ-ও বলছেন, মন্ত্রীরা তাঁদের পুজোর জৌলুস না কমালে রাস্তা তো আটকাবেই। ভিড় কমে যাবে বেহালার পুজোগুলিতে। সেতু ভাঙার পরে তো রীতিমতো আশঙ্কায় বড়িশা ক্লাবের কর্তা অনিমেষ চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘একে তো মূল রাস্তাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। তার উপরে নিউ আলিপুর, চেতলায় বড় যানজট হলে বেহালার ভিড় অনেক কমে যাবে।’’

ভিড় কমলে স্পনসরেরা কতটা হাত উপুড় করবেন, সেই অঙ্কও কষছেন পুজোর মাথারা। ঠাকুরপুকুর এসবি পার্কের পুজোকর্তা সঞ্জয় মজুমদার বলছেন, ‘‘অনেকেই মৌখিক ভাবে কথা দিয়েছেন। ব্যানার, হোর্ডিং টাঙানোর জায়গাও দেখে গিয়েছেন। কিন্তু এই ঘটনার পরে তাঁরা কতটা উৎসাহী হবেন কে জানে!’’ জেমস লং সরণির বেহালা ২৯ পল্লি ক্লাবের কর্তা সৌরভ ঘোষের মতে, ‘‘পুজোর ভিড় কি আর ঘুরপথে আসতে চাইবে?’’

এই পরিস্থিতিতে নবান্নের কর্তারা আশ্বাস দিচ্ছেন, ভাঙা সেতুর নীচ দিয়ে যাতায়াতের দু’টি বিকল্প রাস্তা চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই রাস্তা সারিয়ে কালভার্ট তৈরির পরে রেললাইনে লেভেল ক্রসিং বসিয়ে যাতায়াতের পথ তৈরি হতে পারে। এ ব্যাপারে রেলের সঙ্গে সোমবার বৈঠক করবে রাজ্য। শনিবার ওই এলাকা পরিদর্শন করেন প্রশাসনের কর্তারা। কিন্তু সরু ওই রাস্তা দিয়ে যানবাহন গেলে যানজট কতটা এড়ানো যাবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। পুজোর কথা ভেবেই যে সরকার ওই রাস্তাটি চালু করতে চায়, তা অবশ্য এক কর্তার কথাতেই পরিষ্কার। তিনি বলছেন, ‘‘ওই রাস্তা পুজোর আগেই চালু করতে হবে। সব কিছু পরিকল্পনা মাফিক চললে সপ্তাহখানেকের মধ্যে কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হবে। তা হলে খানিকটা সুবিধা বাড়বে।’’

রাস্তাটি চালু হবে কি না, সেখান দিয়ে দর্শকের ঢল বেহালায় নামবে কি না, তা সময়ই বলবে। তবু ভি়ড়ের আশায় বুক বাঁধছেন বেহালার পুজোকর্তারা। বেহালা নূতন দলের পুজোকর্তা সন্দীপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভরসা দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমতলা, বিষ্ণুপুর থেকে আসা ভিড়। বলছেন, ‘‘আমতলা, বিষ্ণুপুর থেকে প্রচুর মানুষ বেহালায় আসেন। আশা করি, সেই ভিড়টা কমবে না।’’ বেহালা ক্লাবের কর্তা সায়ন্তন ভট্টাচার্যের আশা, ‘‘ভাল পুজো দেখতে উৎসাহীরা কষ্ট করেও হয়তো আসবেন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement