Durga Puja Pandal Hopping

পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ গড়তে গিয়ে বিপাকে পুজো উদ্যোক্তারা

শনিবার হাওড়ার কয়েকটি মণ্ডপে ঘুরে দেখা গেল, কেউ এখনও বাঁশ চিরে চাঁচারি বানাচ্ছেন মণ্ডপের মাটির দেওয়াল তৈরির জন্য। কেউ মাটি দিয়ে ‘রিলিফ’ তৈরির আগে কাদামাটি পা দিয়ে ঠাসছেন।

Advertisement

দেবাশিস দাশ

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:৫৭
Share:

সচেতন: হাওড়ার বালিটিকুরির কাছে একটি পুজোয় পরিবেশবান্ধব মণ্ডপসজ্জা।  ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

যেখানে বাজারে একটি কুনকে মিলত ৬০ টাকায়, সেটির দাম এখন হয়েছে ৩০০ টাকা। যে কচি বাঁশের দাম ছিল ১৫০ টাকা, সেটাই বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা। যে বাটামের দাম ছিল ৩০০ টাকা, তা এখন বিকোচ্ছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। সেই সঙ্গে বাজার থেকে বেমালুম হাওয়া হয়ে গিয়েছে কুলো, ছোট আয়না এবং মণ্ডপে শিল্পকর্মের জন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ প্রজাতির মুলি বাঁশ।

Advertisement

এ বছর হাওড়ায় পরিবেশবান্ধব পুজোর ছড়াছড়ি। সেই কারণে পরিবেশবান্ধব উপকরণ খুব সহজে মিলছে না। মিললেও তার চড়া দাম। তাই থিমের মণ্ডপ করতে গিয়ে কম বাজেটের পুজো উদ্যোক্তারা বিপাকে পড়েছেন। কিছু জিনিস নিয়ে তো রীতিমতো কালোবাজারি হচ্ছে বলেও অভিযোগ। একে কয়েক দিন ধরে টানা বৃষ্টি। তার উপরে প্রাকৃতিক উপকরণের দুষ্প্রাপ্যতার জেরে বেড়ে গিয়েছে পুজোর বাজেট। সব মিলিয়ে মণ্ডপের কাজ শেষ করতে গিয়ে কার্যত হিমশিম অবস্থা উদ্যোক্তা থেকে থিম শিল্পীদের। অথচ, উদ্বোধনের বাকি হাতে গোনা কয়েক দিন মাত্র। কিন্তু শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে এখনও অর্ধেক কাজ বাকি।

শনিবার হাওড়ার কয়েকটি মণ্ডপে ঘুরে দেখা গেল, কেউ এখনও বাঁশ চিরে চাঁচারি বানাচ্ছেন মণ্ডপের মাটির দেওয়াল তৈরির জন্য। কেউ মাটি দিয়ে ‘রিলিফ’ তৈরির আগে কাদামাটি পা দিয়ে ঠাসছেন। কেউ আবার মণ্ডপের জন্য শয়ে শয়ে কাগজের পাখি তৈরিতে ব্যস্ত। সব মিলিয়ে এখন নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছেন হাওড়ার পরিবেশবান্ধব থিম পুজোর উদ্যোক্তারা। কারণ, এখনও অধিকাংশ মণ্ডপের কাজ মাঝপথে। মধ্য হাওড়ার বন্ধনী ব্যায়াম সমিতিতে গিয়ে দেখা গেল, বাঁশ চিরে বিভিন্ন মূর্তি গড়তে ব্যস্ত ১৫-২০ জন শিল্পী। মণ্ডপের প্রধান কারিগর রাজকমল গিরি বললেন, ‘‘প্রথমে কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি। তার পরে বাঁশ থেকে শুরু করে পোড়া মাটির জিনিসও আনতে হয়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে। সেই খরচও অনেকটা বেড়ে গিয়েছে।’’

Advertisement

হাওড়ার অধিকাংশ পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বাঁশ, খেজুর পাতা, শালপাতা, খড়, পোড়া মাটির জিনিস, কুনকে, রঙিন কাগজ, চট, কাপড় প্রভৃতি। পুজো উদ্যোক্তাদের অধিকাংশের মতে, বেশির ভাগ মণ্ডপে একই ধরনের জিনিসের ব্যবহার হওয়ায় বাজারে সেগুলির চাহিদা বেড়ে গিয়েছে। আর সেই সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী তিন-চার গু‌ণ দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। কামারডাঙা শীতলাতলা বারোয়ারির সিদ্ধার্থ কাঁড়ার বলেন, ‘‘এটা ঠিকই যে, পরিবেশবান্ধব সামগ্রী দিয়ে মণ্ডপ তৈরি করতে গিয়ে এ বার আমাদের বাজেট অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। খড় থেকে শুরু করে মাটি, সবই
চড়া দামে কিনতে হচ্ছে। খরচ সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম অবস্থা। মণ্ডপের কাজ শেষ করতে তাই দেরিও হচ্ছে।’’ হাওড়ার বিভিন্ন পুজো উদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, খড় থেকে মাটির পুতুল, সবই অন্য জেলা থেকে আনতে হচ্ছে। সেই দাম তো আছেই, সঙ্গে রয়েছে কর্মচারীদের মজুরি। সব মিলিয়ে কম বাজেটের পুজোগুলির উদ্যোক্তাদের অবস্থা কার্যত শোচনীয়।

খরচ যে অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে, তা মানছেন হালদারপাড়া ফ্রেন্ডস অ্যাসোসিয়েশনের থিম শিল্পী অনুপম মিত্র। তিনি ব‌ললেন, ‘‘প্রাকৃতিক উপকরণের মাধ্যমে মণ্ডপ তৈরি করতে গিয়ে দেখছি, বাজেট অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। জিনিসপত্র জোগাড় করতেও সমস্যা হচ্ছে। সমস্ত ক্লাবেরই তো একটা নির্দিষ্ট বাজেট থাকে। সেটা অনেকটা ছাড়িয়ে গেলে সমস্যা হবেই।’’ তবে এই সব সমস্যা কাটিয়ে হাওড়ায় পরিবেশবান্ধব মণ্ডপ তৈরির কাজ নির্দিষ্ট দিনের আগেই শেষ হবে বলে আশাবাদী সমস্ত উদ্যোক্তা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement