SSKM Hospital

যথাযথ চিকিৎসা ‘হয়নি’ কিশোরের, মৃত্যুতে উত্তাল এসএসকেএম

এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এসএসকেএম হাসপাতালে ভাঙচুর চালান পরিজনেরা। অভিযোগ, মারধর করা হয়েছে এক চিকিৎসককেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১০
Share:

পাহারা: এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ার সেন্টারে ভাঙচুরের পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।

আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক-ছাত্রীকে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার প্রতিবাদে জুনিয়র চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছে। তাতে শামিল হচ্ছেন সিনিয়র চিকিৎসকেরাও। তার জেরে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রোগী-ভোগান্তি অব্যাহত শহরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে। সময় যত গড়াচ্ছে, ঠিক মতো চিকিৎসা না পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মৃত্যুর অভিযোগও তত বাড়ছে। তা নিয়ে চাপা ক্ষোভ যে তৈরি হচ্ছে, তারই প্রমাণ মিলল রবিবার। সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল এসএসকেএম হাসপাতালে। এক রোগীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে সেখানে ভাঙচুর চালান পরিজনেরা। অভিযোগ, মারধর করা হয়েছে এক চিকিৎসককেও।

Advertisement

শহরের বিভিন্ন সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকেই রোগীর পরিজনেরা চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ তুলছেন। সেখানে এ দিন এসএসকেএমের ঘটনার পর থেকে কর্মক্ষেত্রে নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছেন সরকারি চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ। তাঁরা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন রাজ্য প্রশাসনের দিকে। বলছেন, ‘‘আর জি করে হামলার ঘটনার পরে জোরদার নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন। কিন্তু সেটা কথার কথা, তা প্রমাণ হয়ে গেল এক দিনেই।’’

জানা যাচ্ছে, খিদিরপুরের বাসিন্দা, বছর পনেরোর সামিউদ্দিন গত ১৪ অগস্ট এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারের অস্থি-শল্য বিভাগে ভর্তি হয়। ওই কিশোর হাড়ের ক্যানসারে আক্রান্ত ছিল। হাসপাতাল সূত্রের খবর, ক্যানসারে হাঁটু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল তার। সেখান থেকে তা ছড়ায় ফুসফুসেও। এ দিন বিকেলে আচমকাই প্রবল শ্বাসকষ্ট শুরু হয় কিশোরের। নাড়ির গতি মিলছিল না। তখন ওই বিভাগে কর্মরত স্নাতকোত্তর স্তরের চিকিৎসক-পড়ুয়া সুব্রত শূর ওই রোগীকে সিপিআর দিতে শুরু করেন বলে দাবি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হয় ওই কিশোরের। সেই খবর পরিজনদের জানাতেই তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে চিকিৎসককে প্রথমে মুখে ঘুষি মারেন বলে অভিযোগ। এর পরেই ট্রমা কেয়ারের চারতলায় অস্থি-শল্য বিভাগের ওয়ার্ডের জানলার কাচ, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করতে থাকেন মৃতর পরিজনেরা। ভাঙা হয় চিকিৎসার যন্ত্র (সি-আর্ম মেশিন)। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

Advertisement

এসএসকেএমের চিকিৎসকদের দাবি, জানলার কাচ ভাঙতে গিয়ে রক্তাক্ত হয় মৃত কিশোরের পরিজনদের হাত। তাঁদের প্রাথমিক চিকিৎসা করেছেন ট্রমা কেয়ারে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরাই। যদিও কিশোরের পরিজনদের অভিযোগ, কর্মবিরতি চলার মধ্যেও ভর্তি নেওয়া হয়েছিল, সেটা ঠিক। কিন্তু, তার পর থেকে তেমন ভাবে কোনও চিকিৎসকই দেখছিলেন না কিশোরকে। নিয়মিত নজরদারির ক্ষেত্রে যথেষ্ট ঘাটতির বিষয়ে বার বার করে ওয়ার্ডে জানানো হলেও সুরাহা হয়নি। বায়োপ্সি রিপোর্টও আসতে দেরি হচ্ছিল। হাঁটুতে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন থাকলেও চিকিৎসক না থাকায় তা কয়েক দিন পরে করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। যথাযথ চিকিৎসা না হওয়ার কারণেই তাঁদের ছেলের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন সামিউদ্দিনের পরিজনেরা।

শুধু তাঁরা নন। ট্রমা কেয়ারে ভর্তি থাকা অন্য রোগীর পরিজনেরাও এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন পরিষেবা নিয়ে। তাঁদের অনেকেরই বক্তব্য, ‘‘আর জি করের ঘটনায় যথাযথ বিচার, দোষীদের শাস্তি আমরাও চাই। তাই আমাদের বাড়ির মহিলারা রাতে পথে নেমেছিলেন ঘটনার প্রতিবাদে। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর অভিযোগের বিচার কে করবে?’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement