ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের লাঠি। খণ্ডযুদ্ধে আহত এসএফআই সদস্য। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।
পুরভোটের মুখে সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের দায়িত্ব পেয়েই দলকে আন্দোলনমুখী করার চেষ্টায় নেমেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র। সদ্যগঠিত রাজ্য কমিটির বৈঠকে ভয় পেয়ে মাঠ ছেড়ে না-পালানোর কথাও বলেছেন দলের নেতারা। রাজ্য নেতৃত্বের সেই নির্দেশ জেলায় জেলায় এখনও তেমন প্রভাব না-ফেললেও বৃহস্পতিবার রীতিমতো চাঙ্গা হয়েই রানি রাসমণি অ্যাভিনিউয়ে আইন অমান্য আন্দোলনে নেমেছিল দলের ছাত্র সংগঠন এসএফআই। পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধ বেধে যায় তাদের। যার জেরে তাঁদের অন্তত ৩০ জন কর্মী আহত হয়েছেন, তার মধ্যে ১০ জনের আঘাত গুরুতর বলে অভিযোগ এসএফআই নেতৃত্বের।
এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে হারানো জমি উদ্ধারের লড়াই আরও জোরদার করতে চাইছে সিপিএম। ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতা হারানোর পর থেকে ক্রমশ রক্তক্ষরণে বিরোধী দলের পরিসরটাও অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে তারা। গত লোকসভা ভোট এবং তার পরের উপনির্বাচনে ভোটের শতকরা হার বাড়িয়ে যে জায়গাটা অনেকটাই দখল করে নিয়েছে বিজেপি। অস্তিত্ব রক্ষার পাল্টা লড়াই হিসেবে এ দিন রানি রাসমনি অ্যাভিনিউয়ের বিক্ষোভের পরে সেখানে পুলিশের লাঠি চালনার প্রতিবাদে আজ, শুক্রবার কলকাতায় দুপুর ১টা থেকে বিকেল তিনটে পর্যন্ত কলকাতার ৮বি বাসস্ট্যান্ড, হাজরা মোড়, মৌলালি মোড় এবং শ্যামবাজার মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখাবে এসএফআই।
সংগঠনের সদস্য সুদীপ্ত গুপ্তের মৃত্যুর বিচারবিভাগীয় তদন্ত-সহ বিভিন্ন দাবিতে এ দিন আইন অমান্যের ডাক দিয়েছিল এসএফআই। কলেজ স্কোয়ার থেকে মিছিল করে এসে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউতে জড়ো হন এসএফআই সমর্থকেরা। সেখানে ব্যারিকেড ভাঙতে গেলে পুলিশের সঙ্গে তাঁদের খণ্ডযুদ্ধ বাধে। আইন অমান্যে উপস্থিত এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্পাদক ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, পুলিশ বিনা প্ররোচনায় লাঠি চালিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘সুদীপ্তর মৃত্যুর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আইন অমান্য কর্মসূচি ছিল। কিন্তু অকারণে পুলিশ যে ভাবে লাঠি চালাল, তাতে সুদীপ্তের মৃত্যুর মতো দুঃখজনক ঘটনা ফের ঘটতে পারত।’’
এসএফআই কর্মীদের উপরে পুলিশের লাঠিচালনা নিয়ে অবশ্য এ দিন কোনও মন্তব্য করতে চাননি মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এটা প্রশাসনিক ব্যাপার। যা বলার প্রশাসন বলবে।’’
তবে পুরভোটের ঠিক আগে এমন ঘটনা বামেদের হাতে আন্দোলনমুখী হওয়ার নতুন অস্ত্র তুলে দিয়েছে। ঘটনার পরে দলের রাজ্য নেতাদের একাংশ আহত ছাত্রদের নিয়ে মেডিক্যাল কলেজে যান। পরে সেখানে আহতদের দেখতে যান সূর্যবাবু। হাসপাতালের বাইরে তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রদের উপর বর্বর ও অমানুষিক আক্রমণের নিন্দা করছি। প্রতিবাদ বন্ধ হবে না। কাল-পরশু রাজ্যের সর্বত্র প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হবে। কাল (শুক্রবার) যদি আবার কিছু হয়, তার জন্য সরকার দায়ী হবে।’’
এ দিনের ঘটনা বাম দলগুলিকেও কাছাকাছি এনে দিয়েছে। পুরভোটের প্রার্থী বাছাইয়ের সময় বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তুলতে পারেনি সিপিএম। কিন্তু এ দিন বামফ্রন্টের শরিক দলের নেতারা তো বটেই, ফ্রন্টের বাইরে বাম দলের নেতারাও হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়েছিলেন। লাঠিচার্জের প্রতিবাদে আজ এসএফআই যে বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়েছে, তাতে সামিল হওয়ার কথা ঘোষণা করেছে এসইউসি এবং সিপিআইএমএল-লিবারেশনের ছাত্র ও যুব সংগঠন।
একের পর এক ভোটে বিপর্যস্ত সিপিএম ঘুরে দাঁড়ানোর মঞ্চ যে এ দিনের কর্মসূচিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিলেন, সেটা স্পষ্ট হয় কলেজ স্কোয়ারে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর উপস্থিতি থেকেই। তিনি বলেন, ‘‘যে সরকার আইন মানে না, সুদীপ্তের মৃত্যুর বিচার করে না, সেই সরকারের আইন ভাঙার অধিকার ছাত্রদের আছে।’’ সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ের আমলেও পুলিশ এমন ন্যক্কারজনক ভাবে দলদাসে পরিণত হয়নি— অভিযোগ করে বিমানবাবু বলেন, ‘‘কলেজ ক্যাম্পাসে তৃণমূল রাজনীতি করছে। মাইক বাজিয়ে পুরভোটের প্রচার করছে। আর যাদের ক লিখতে কলম ভেঙে যায়, তাদের নিয়ে ছাত্র রাজনীতি করছে।’’
ছাত্র আন্দোলনে লাঠি চালিয়ে পুলিশ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের কণ্ঠরোধের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করে সূর্যবাবুর কটাক্ষ, ‘‘এই বীরপুঙ্গবেরা কোথায় ছিলেন যখন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় আমাদের উপর আক্রমণ হয়েছিল? কোথায় ছিলেন যখন রোজ ভ্যালি আর সারদায় মানুষকে ঠকানো হয়েছে?’’ পুরভোটের আগে মানুষের মনে ভয় ধরাতেই পুলিশ এ ভাবে মিছিলে লাঠি চালিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন কলকাতা জেলার নেতা অনাদি সাহু।