সুরক্ষা: শহরের এক স্কুলে এমনই পা-ঢাকা পোশাক পরছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
শীতের পোশাক পরে পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে শুরু করে সাধারণত নভেম্বরের মাঝামাঝি বা শেষ দিক থেকে। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গির প্রকোপ বাড়তে থাকায় পুজোর ছুটির পরে স্কুল খুলতেই প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, ছেলেদের পরে আসতে হবে ফুল প্যান্ট। ছাত্রীদের স্কার্টের সঙ্গে পরতে হবে লেগিংস বা বড় মোজা। শিক্ষকদের বক্তব্য, ডেঙ্গি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক সব পদক্ষেপ করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও পড়ুয়াদের কথা ভেবে তাঁরা কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ।
প্রাথমিক শ্রেণির ছাত্রেরা সাধারণত জামার সঙ্গে হাফ প্যান্ট পরে আসে। তবে শীতে তাদের পরতে হয় ফুল প্যান্ট। কিন্তু এ বার শীত পড়ার আগে থেকেই তাদের ফুল প্যান্ট পরে আসতে বলছে বেশ কিছু স্কুল। যেমন, রামমোহন মিশন হাইস্কুলের অধ্যক্ষ সুজয় বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডেঙ্গির প্রকোপ যে বাড়ছে, তা আমরা লক্ষ করেছিলাম পুজোর ছুটি পড়ার আগেই। তাই ছুটির মধ্যেই অভিভাবকদের জানানো হয়েছিল, স্কুল খোলার পরে তাঁরা যেন সন্তানদের ফুল প্যান্ট পরিয়ে পাঠান। মেয়েদের বলা হয়েছিল স্কার্টের সঙ্গে লেগিংস পরতে। যারা লেগিংস পরতে চাইছে না, তাদের পরতে হবে বড় মোজা। লক্ষ্মীপুজোর পরে স্কুল খুলে গিয়েছে। এখন ছাত্রেরা ফুল প্যান্ট পরে আসছে। মেয়েরাও লেগিংস অথবা বড় মোজা পরছে।’’ সুজয়বাবুর দাবি, এর পাশাপাশি স্কুল চত্বর পরিষ্কার রাখা, কোথাও জল জমতে না দেওয়া—এই সব তো করা হচ্ছেই। তিনি জানান, তাঁদের কয়েক জন ছাত্রছাত্রী ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ায় ষাণ্মাসিক পরীক্ষা দিতে পারেনি। এখন তারা সুস্থ হয়ে আবার যোগ দিয়েছে।
সাউথ পয়েন্ট হাইস্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘শহরের ডেঙ্গি পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে পুজোর ছুটির পর থেকেই প্রাথমিক শ্রেণিতে ফুলহাতা জামা এবং ফুল প্যান্ট পরে আসতে বলা হচ্ছে। পড়ুয়াদের শরীর ঢাকা থাকলে তারা মশার কামড়ের হাত থেকে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে।’’
কলকাতার পাশাপাশি বিধাননগর পুর এলাকাতেও ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাগুইআটিতে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে এক স্কুলছাত্রীর। এই পরিস্থিতিতে বেশ কিছু স্কুল অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে। যেমন রঘুনাথপুর এলাকার ন্যাশনাল ইংলিশ হাইস্কুলের অধ্যক্ষা মৌসুমী সাহা বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে প্রাথমিকের পড়ুয়াদের সাধারণত ডিসেম্বরের প্রথম দিক থেকে ফুল প্যান্ট পরতে বলা হয়। কিন্তু এ বার নভেম্বরের গোড়া থেকেই আমরা ছাত্রদের ফুল প্যান্ট পরে আসতে বলব। মেয়েদেরও বলা হবে স্কার্টের সঙ্গে বড় মোজা পরার জন্য।’’
ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুলের অধ্যক্ষ রঞ্জন মিত্র জানান, তাঁরা প্রাথমিকের পড়ুয়াদের ফুল প্যান্ট পরার কথা বললেও এই নিয়ে কোনও নির্দেশিকা জারি করেননি। তিনি বলেন, ‘‘করোনার সময় থেকেই আমাদের স্কুল পরিচ্ছন্ন রাখার প্রক্রিয়া চলছে। এখন করোনা অনেক কমে এলেও ভয় ধরাচ্ছে ডেঙ্গি। কিন্তু স্কুল পরিষ্কার রাখার প্রক্রিয়া চালু রয়েছে। তাই পড়ুয়াদের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই।’’ বরং রঞ্জনবাবুর মতে, বাড়িতে পড়ুয়ারা যাতে রাতেমশারি টাঙিয়ে ঘুমোয়, দোকান-বাজার গেলে ফুল প্যান্ট এবং ফুলহাতা জামা পরে যায়— সে কথা তাদের বলা হয়েছে। তবে স্কুলে এখন থেকেই যদি কেউ ফুল প্যান্ট এবং ফুলহাতা জামা পরে আসে, তা হলে তাঁরা আপত্তি করছেন না।