মুখ ঢেকেছে: অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে মাস্ক পরে ক্লাসে ঢুকছে খুদে পড়ুয়ারা। সোমবার, মধ্য কলকাতার একটি স্কুলে। ছবি: সুমন বল্লভ।
অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে এ বার প্রি-স্কুলগুলিতে হাজিরার সংখ্যা কমছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু প্রি-স্কুল ছুটি ঘোষণা করে দিয়েছে। কোনও কোনও স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার অনলাইন ক্লাস ফের শুরু করা যায় কি না, সেই চিন্তাভাবনাও করছেন।
কোভিডের পরে এ বার অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাডিনোভাইরাস। মূলত পাঁচ বছর পর্যন্ত বয়সের শিশুরাই এই অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এমনকি, গত দু’মাসে এ রাজ্যে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ১৫টি শিশুর মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছে। যার ফলে কচিকাঁচাদের স্কুলে পাঠানো নিয়ে চিন্তিত অভিভাবকেরা। ভিআইপি রোডের তেঘরিয়া এলাকার একটি প্রি-স্কুলে ছুটির সময়ে কচিকাঁচাদের কলরবে মুখরিত হয়ে উঠত এলাকা। গত কয়েক দিন ধরে অবশ্য সেই দৃশ্য কার্যত উধাও। পড়ুয়াদের হাজিরার সংখ্যা এতটাই কম যে, কখন প্রি-স্কুলের ছুটি হয়ে যাচ্ছে, বোঝা দায়। শহরের প্রায় সমস্ত প্রি-স্কুলের ছবি এখন এমনই। প্রি-স্কুলগুলির অধ্যক্ষেরাও জানাচ্ছেন, জ্বর, কাশি, সর্দি বা শ্বাসকষ্টজনিত কিছু হলে সেই শিশুদের বাড়িতে থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তবে, প্রশ্ন উঠেছে, যে সব স্কুল খোলা, সেখানে সংক্রমণ এড়াতে কতটা বিধি মেনে চলছেন কর্তৃপক্ষ? স্কুলে ছোট বাচ্চাদের মাস্ক পরিয়ে ক্লাস করানো কার্যত অসম্ভব বলে স্বীকার করে নিচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকারা। কসবার একটি প্রি-স্কুলের অধ্যক্ষা তনুশ্রী দাস বললেন, ‘‘আমার স্কুলে দেড় থেকে পাঁচ বছর বয়সি পড়ুয়ারা আসে। এদের মাস্ক পরিয়ে রাখা সম্ভব নয়। আবার বিধি মেনে, শারীরিক দূরত্ব মেনেও কি ওরা বসতে পারে? আমরা অভিভাবকদের বলেছি, তাঁরা সন্তানদের স্কুলে পাঠাবেন কি না, তা তাঁদের উপরেই নির্ভর করছে। শিশুর কোনও রকম শারীরিক অসুস্থতা থাকলে স্কুলে পাঠানোর দরকার নেই।’’ তনুশ্রী আরও জানান, করোনার সময়ে তাঁদের স্কুলে অনলাইনে ক্লাস হয়েছিল। শিশুরাও মা-বাবার সঙ্গে বসে অনলাইনে ক্লাস করেছিল। এ বারও প্রয়োজনে সে ভাবেই ক্লাস করানো হবে।
নিউ টাউন ও সল্টলেকে একাধিক প্রি-স্কুলের অধ্যক্ষা নবনীতা বসু জানালেন, গত কয়েক দিন ধরে স্কুলে শিশুদের হাজিরার সংখ্যা বেশ কম। তিনি বলেন, ‘‘আমরা বলে দিয়েছি, কোনও রকম শারীরিক অসুবিধা থাকলে শিশুরা যেন স্কুলে না আসে। তবে এখন আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় বলে এমনিতেই অনেকের শরীর খারাপ হচ্ছে। যখন সেই পড়ুয়া স্কুলে ফিরবে, তখন তাকে ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে আসতে হবে।’’
‘ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স ফর প্রি-স্কুল এডুকেশন’-এর চেয়ারম্যান তমাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা শিশুদের স্বাস্থ্যকেই অগ্রাধিকার দিতে বলছি। প্রয়োজনে বাড়িতেই থাকুক শিশুরা। এখন প্রি-স্কুলের শিক্ষাবর্ষ শেষের সময়। তাই সে ভাবে চাপও নেই স্কুলগুলিতে। শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও রকম আপস করা ঠিক নয়।’’
যে সব মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে প্রি-প্রাইমারি আছে, সেখানেও মাস্ক পরিয়ে খুদে পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানোর কথা বলেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। সাউথ পয়েন্ট স্কুলের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য কৃষ্ণ দামানি বলেন, ‘‘আমরা মাস্ক পরে খুদে পড়ুয়াদের আসতে বলেছি। তবে, এত ছোটদের পক্ষে মাস্ক পরে থাকাটাও সমস্যার। ওই ক্লাসে এখন পড়ুয়া অনেক কম আসছে।’’ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সভাপতি গৌতম পাল বলেন, ‘‘প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বলেছি, তাঁরা যেন স্কুল চলাকালীন যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করেন।’’