সুনসান: আশা ছিল, জিএসটি-র আগের দিন জমে উঠবে বাজার। ব্যবসা বন্ধের জেরে তা হল না। শুক্রবারের ফাঁকা নিউ মার্কেট। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
কাজের দিনের ভরদুপুরে বড়বাজারেও যে ফুটবল খেলা যায়, কে জানত!
শহরের যে সব পাড়ায় রোজ তিলধারণের জায়গা মেলে না, সেখানেই হঠাৎ অক্লান্ত নিস্তব্ধতা। সার সার দোকানে ঝাঁপ ফেলা। জায়গায় জায়গায় শুধু ব্যবসায়ীদের জটলা। শুধু বড়বাজার-নিউ মার্কেট চত্বরই নয়, একই ছবি অধিকাংশ শপিং মলেরও। জিএসটি জুজু তাড়ানোর দাবিতে শুক্রবার এ ভাবেই বন্ধ পালন করল শহরের ব্যবসায়ী মহল।
তবে হতাশ ক্রেতাকুল। জিএসটি চালুর আগের মুহূর্তে আরও কিছু কেনাকাটার পরিকল্পনা ছিল যাঁদের, বাজার থেকে খালি হাতেই ফিরলেন তাঁরা অনেকেই। যেমন দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলে গিয়ে হতবাক কলেজপড়ুয়া সোমালি। বলেন, ‘‘এই ক’দিন সমানে খবর পেয়েছি বড় ছাড়ের, আসার সুযোগ হয়নি। আজ শেষ দিন বলে এলাম। দেখছি প্রায় সব দোকানই বন্ধ।’’ জানা গেল, জিএসটি চালুর আগে অনলাইন ট্রানজ্যাকশন সিস্টেম আপডেট করছেন শপিং মলের ব্যবসায়ীরা।
বড়বাজারে গুরুত্বপূর্ণ কাজে মুর্শিদাবাদ থেকে এসেছিলেন নাজমুল হক। মুদি ব্যবসায়ী নাজমুল জানালেন, এ ভাবে যে গোটা এলাকা বন্ধ থাকবে, তা ভাবতেও পারেননি। ‘‘জিএসটি-র প্রতিবাদে দোকান বন্ধ থাকবে জানতাম, কিন্তু গোটা বাজার যে স্তব্ধ থাকবে, বুঝিনি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, পিছিয়ে গেল,’’ বলেন তিনি।
তবে এই প্রতিবাদের দিনে চুটিয়ে ব্যবসা করলেন নিউ মার্কেট চত্বরের ফুটপাথের হকারেরা। যেমন মূল বাজার বন্ধ দেখে পথের ধারের টুকটাক কেনাকাটা করেই আনন্দ পেলেন অফিস ফেরত একদল তরুণী। তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘কিছু দরকারি জিনিস কেনার ছিল। হল না। তাই ফুটপাথের ব্যাগ কিনেই বাড়ি ফিরছি।’’ নিউ মার্কেটের এক ব্যবসায়ী জানালেন, এক দিনের ব্যবসা বন্ধে বড় ক্ষতির মুখে পড়লেন তাঁরা। কিন্তু জিএসটি-র প্রতিবাদে এই পদক্ষেপ করা ছাড়া উপায়ও ছিল না।
কটন স্ট্রিটের এক বস্ত্র ব্যবসায়ী জানালেন, এক দিনের ব্যবসা বন্ধ মানে অনেক ক্ষতি। তার উপরে তাঁরা চেষ্টা করছিলেন ১ জুলাই থেকে জিএসটি চালু হওয়ার আগেই বহু পুরনো স্টক খালি করে ফেলতে। সে জন্যও নজর ছিল এই শেষ দিনের বিকিকিনিতে। সেই আশা মাঠে মারা গেল।
এ দিকে ‘পোস্তা বাজার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’-এর তরফে এ দিন একটি মিছিল করা হয় বড়বাজারে। পোস্তা থেকে শুরু করে বড়বাজার ঘুরে, ফের পোস্তায় শেষ হয় মিছিল। অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সভাপতি চন্দন চক্রবর্তী জানান, জিএসটি-র প্রতিবাদে একাধিক দাবি রয়েছে তাঁদের। প্রথম দাবি, জিএসটি-র আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য ন্যূনতম বার্ষিক লেনদেনের মাত্রা এক কোটি টাকা করা হোক। সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী ২০ লক্ষ টাকা স্থির হলে বহু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীকেই বিপদে পড়তে হবে।
অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তার দাবি, বহু ব্যবসায়ীর কাছে এখনও ‘কোড’ পৌঁছয়নি। ব্যবসায়ীদের বক্তব্য, এই কোড ছাড়া জিএসটি-র নয়া ব্যবস্থার সঙ্গে নিজেদের ব্যবসা যুক্ত করা যাবে না। সেই কোড না আসার কারণে ১ জুলাই থেকে কার্যত বসে থাকতে হবে তাঁদের। এই নয়া জিএসটি-র সিস্টেমের সঙ্গে ব্যবসা যুক্ত করার জন্য আবশ্যিক একটি করে কম্পিউটার। অনেক ছোট ব্যবসায়ীর পক্ষেই রাতারাতি তার ব্যবস্থা করা মুশকিল। চন্দনবাবু বলেন, ‘‘এক দিনের বন্ধে শুধু বড়বাজারে ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়। এ দিনও হয়েছে। তবু ব্যবসার স্বার্থেই এ দিনের বন্ধের সিদ্ধান্ত। কাল থেকে ফের চালু হবে ব্যবসা।’’ কিন্তু কী ভাবে? সেই অনিশ্চয়তাতেই ভুগছে শহরের ব্যবসায়ী মহল।