মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিঘার প্রকাশ্য সভায় বলেছেন, কলকাতা শহরে গরিব মানুষদের পাট্টা দেওয়া হবে। যদিও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুর-এলাকায় জমির পাট্টা দেওয়ার কোনও ভাবনা নেই। স্বভাবতই মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য নিয়ে শুরু হয়েছে বিভ্রান্তি। প্রশ্ন উঠেছে, ঠিক কী বলতে চেয়েছেন তিনি? মুখ্যমন্ত্রীর ওই বক্তব্যের কোনও ব্যাখ্যা অবশ্য দিতে চাননি পুরসভা বা সরকারের কোনও অফিসারই।
পুর-মহলের নিজস্ব মত, সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে শহরের ঠিকা জমিতে বসবাসরত ভাড়াটেদের স্বার্থরক্ষায় তাঁদের শংসাপত্র দেওয়া ও নাম নথিভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এতে উপকৃত হবেন শহরের বেশ কিছু গরিব বস্তির বাসিন্দারা। সিদ্ধান্তগুলি খুব শীঘ্রই কার্যকর হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। এর সঙ্গে অবশ্য পাট্টার কোনও মিল নেই বলেই মনে করছেন পুরকর্তারা।
দিঘায় ঠিক কী বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী?
মঙ্গলবার বিকেলে নিউ দিঘার পুলিশ হলিডে হোম মাঠের প্রশাসনিক জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা বলেন। একে একে উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে তিনি বলেন, “সারা রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় ২ লক্ষ মানুষকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে। এ বার কলকাতা-সহ শহরাঞ্চলেও গরিব মানুষকে জমির পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কলকাতায় বহু বস্তিবাসীর নিজস্ব কোনও জায়গা নেই। তাঁদের যাতে কেউ তুলে দিতে না পারে এবং বস্তিবাসীরা নিজেরা বাড়ি করতে পারেন, সে জন্য তাঁদের জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য কলকাতা পুরসভাকে বলা হয়েছে।”
খোদ মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা পুরসভাকে জমির পাট্টা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়ে দেওয়ায় রীতিমতো সমস্যায় পড়েছেন পুরকর্তারা। তাঁদের কথায়, পাট্টাধারী মালিকানার শর্ত পান। ভাড়াটেদের ক্ষেত্রে তা করা যায় না। পুরসভার কর মূল্যায়ন দফতরের এক আধিকারিক জানান, ঠিকা টেন্যান্টদের নিয়ে দীর্ঘকাল ধরে একটা সমস্যা ছিল। তাঁরা যে সরকারের খাস জমি ভাড়া নিয়ে আছেন, সে ব্যাপারে কোনও শংসাপত্র চেয়েও এত দিন পাননি কেউই। সম্প্রতি তাঁদের শংসাপত্র দেওয়ার জন্য ঠিকা টেন্যান্টের কন্ট্রোলার ও পুর-প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। একই সঙ্গে ঠিকা টেন্যান্টের অধীনে যে সব গরিব মানুষজন ভাড়াটে হিসেবে রয়েছেন, তাঁদেরও যাতে কেউ তুলে দিতে না পারে, সে জন্য ভাড়াটের নাম নথিভুক্ত করতে বলা হয়েছে।
পুরসভার এক আমলা জানান, দিঘার সভায় মুখ্যমন্ত্রী হয়তো সেই সুরক্ষার কথাই বলতে চেয়েছেন।
যদিও ওই দুইয়ের মধ্যে বিরোধ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করেন। পুরসভার প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের বিকাশ ভট্টচার্য বলেন, “পাট্টা দেন জমির মালিক। ঠিকা জমির মালিক তো রাজ্য সরকার। অতএব পাট্টা দেওয়ার কথা তাদেরই। তা হলে পুর প্রশাসন তার পাট্টা দেবে কী ভাবে?” এ সব ভোটের আগে চমক দেওয়ার কৌশল বলেই মনে করেন বিকাশবাবু। তাঁর কথায়, “আবোলতাবোল বলে উনি মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।” বিজেপি-র রীতেশ তিওয়ারি বলেন, “বিজেপিকে ভয় পেয়েই মনমোহিনী চমক দেওয়া শুরু হয়েছে তৃণমূূল সরকারের। এটা তারই লক্ষণ।”