বিপজ্জনক: বানের ধাক্কায় গ্যাংওয়ের বিয়ারিং সরে গিয়েছে (চিহ্নিত) হাওড়ার শিবপুর লঞ্চঘাটের জেটির। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
বছর দু’য়েক আগে ১০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল হাওড়ার শিবপুর লঞ্চঘাটের জেটি। মাস দুয়েক আগে কালীপুজোর সময়ে বানের ধাক্কায় সরে গিয়েছে ওই জেটির গ্যাংওয়ের বিয়ারিং। চুরি হয়ে গিয়েছে গ্যাংওয়ে আর কংক্রিট জেটির মাঝে থাকা লোহার শিকল। জেটির আলোর জোর কমে গিয়েছে। দু’টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে একটি প্রায় অকেজো।
অভিযোগ, গত দু’মাস ধরে হাওড়ার অন্যতম ব্যস্ত ফেরিঘাটের এমন বিপজ্জনক অবস্থা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি হুগলি নদী জলপথ পরিবহন সমবায় সমিতি। রাজ্য পরিবহণ দফতরের জলসাথী সংস্থা থেকে এই খবর প্রথম আসে হাওড়া সিটি পুলিশের কাছে। যে হেতু ডিসি ট্র্যাফিক হাওড়া শহরে গঙ্গার উপরে থাকা জেটিগুলির নোডাল অফিসার, তাই তিনি শিবপুরের ওই বিপজ্জনক জেটি পরিদর্শন করে জেলা শাসকের কাছে একটি রিপোর্ট দেন। তখনই বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে।
ডিসি ট্র্যাফিক অর্ণব বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেটির গ্যাংওয়ের বিয়ারিং সরে গিয়েছে। শিকলও বেপাত্তা। বড় কোনও বান আসলে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। পুলিশ তো জেটি সারাতে পারবে না। আমি জেটি পরিদর্শনের রিপোর্ট জেলাশাসকের কাছে জমা দিয়েছি।’’
বৃহস্পতিবার শিবপুরের ওই ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায় কংক্রিটের জেটির উপরে যে জায়গায় গ্যাংওয়ে আছে, তার আগে রাস্তা জুড়ে পড়ে রয়েছে ছেঁড়াখোঁড়া কাপড়, লেপ। রেলিং-এ শুকোতে দেওয়া হয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের ভেজা জামা-কাপড়। গ্যাংওয়ে দিয়ে নামার সময়ে যাত্রী নিরাপত্তার জন্য দু’দিকে যে লোহার শিকল থাকে সেগুলি নেই। গোটা গ্যাংওয়েটি বাঁ দিকে সরে গিয়েছে।
জেটিতে থাকা জলসাথী স্বেচ্ছাসেবক সৌরভ দালাল বলেন, ‘‘আমরা পুলিশ ও পরিবহণ দফতরকে রিপোর্ট দিয়েছিলাম। কারণ দু’মাস হয়ে গেল জেটির বিয়ারিং সরে গিয়ে বিপজ্জনক অবস্থা হয়েছে। পুলিশ এবং পরিবহণ দফতর থেকে পরিদর্শন করে গিয়েছে।’’
ওই জেটির পাশে থাকা দোকানদার দেবু মাইতি বলেন, ‘‘প্রতিদিন ওই গ্যাংওয়ে দিয়ে প্রায় দু’ হাজার লোকজন যাতায়াত করেন। অথচ জেটির রক্ষণাবেক্ষণ হয় না। আলো কম থাকার জন্য রাতে যাত্রীদের খুব অসুবিধা হয়। একটি ক্যামেরা খারাপ। বড় কোনও বান আসলে বিপদ হতে পারে।’’
কিন্তু যে সংস্থার লঞ্চ ওই জেটি দিয়ে চলে সেই হুগলি নদী জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির প্রশাসকমণ্ডলী জানতেনই না জেটির ওই দুরাবস্থার কথা। এ দিন প্রশাসকমণ্ডলীর অন্যতম সদস্য আমানুল হিলাল বলেন, ‘‘এই খবর আমাদের কর্মীরা জানাননি। জানতে পারার পরেই খোঁজ নিয়েছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’