জীর্ণ দেহ, চাকায় তাপ্পি, ফের দুর্ঘটনায় স্কুলবাস

সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই ফের দুর্ঘটনার মুখে পড়ুয়া বোঝাই স্কুলবাস। এ বারও বেহাল চাকা। এমনকী, বাসটির বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫টি অভিযোগও। গত সপ্তাহেই পরমা উড়ালপুলের থামে একটি স্কুলবাস ধাক্কা মারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৭
Share:

দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বাস। (ডান দিকে) ‘রিসোল’ করা চাকা। — নিজস্ব চিত্র

সপ্তাহ গড়াতে না গড়াতেই ফের দুর্ঘটনার মুখে পড়ুয়া বোঝাই স্কুলবাস। এ বারও বেহাল চাকা। এমনকী, বাসটির বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫টি অভিযোগও। গত সপ্তাহেই পরমা উড়ালপুলের থামে একটি স্কুলবাস ধাক্কা মারে। মারা যান বাসের চালক। পরে দেখা যায়, বাসটির চাকা ছিল তাপ্পি মারা। নড়ে বসে প্রশাসন। তখনই পুলিশ বলে, এ বার থেকে স্কুলবাসের ফিটনেস পরীক্ষা করবে তারা। পাশাপাশি, বাসগুলির দিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্ট সব স্কুলের কর্তৃপক্ষকেও। কিন্তু শুক্রবার সকালের দুর্ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, বদলায়নি বাস্তব ছবিটি। অনিয়ম এখনও বহাল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সকাল ছ’টা নাগাদ হোলি চাইল্ড স্কুলের ১৪ জন ছাত্রীকে নিয়ে যাচ্ছিল বাসটি। সকলেই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। বেলগাছিয়া ব্রিজ থেকে আর জি করের সামনে নামার সময়ে রাস্তার ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে দুমড়ে মুচড়ে যায় চালকের আসনের নীচের অংশটি। আহত হয়েছেন সাত পড়ুয়া-সহ এক অভিভাবক। পুলিশ জানায়, বাস থেকে আহত পড়ুয়াদের বার করে আনেন ট্রাফিক পুলিশ ও এলাকার লোকজন। পাঠানো হয় আর জি করের ইমার্জেন্সি বিভাগে। প্রাথমিক চিকিত্সার পরে ছেড়ে দেওয়া হয় তাদের।

এর পরে বাসটি উল্টোডাঙা থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। দেখা যায়, দুর্ঘটনায় পড়া লজ্‌ঝড়ে চেহারার বাসটির টায়ারের অবস্থা খুবই শোচনীয়। অনেক তাপ্পি মারা। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন এলাকা থেকে এই বাসটির বিরুদ্ধে রয়েছে ১৫টিরও বেশি অভিযোগ। এত কিছু সত্ত্বেও কী করে চলছিল বাসটি? এ প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।

Advertisement

পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর থেকেই ফেরার বাসচালক। বাসটি কে চালাচ্ছিল, চালক না খালাসি, সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। এই বাসটি হোলি চাইল্ড স্কুলের নিজস্ব নয়, ফলত দায় এড়িয়ে গিয়েছেন স্কুল-কর্তৃপক্ষও। অভিভাবকদের বক্তব্য, বাসের এই বেহাল দশা নিয়ে এর আগেও বহু বার মালিকের কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে। তাতে কোনও আমলই দেননি তিনি। পুলিশের অনুমান, দুর্ঘটনার সময়ে বাসে ছিলেন মালিক গৌতম রক্ষিতও। কিন্তু রাত পর্যন্ত তাঁরও কোনও খোঁজ মেলেনি। তাঁর সাহিত্য পরিষৎ স্ট্রিটের বাড়িতে গিয়ে নোটিস দিয়ে এসেছে পুলিশ।

দুর্ঘটনায় আহত পড়ুয়া অনুষ্কা সাহার বাবা সুধীরকুমার সাহা এ দিন জানান, উত্তর কলকাতার বিভিন্ন এলাকা থেকে পড়ুয়াদের তুলে কোনও মতে স্কুলে পৌঁছেই অন্য কাজে ভাড়া খাটানো হত বাসটি। সে জন্য তাড়াহুড়ো করতে গিয়েই হয়তো বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে, অনুমান সুধীরবাবুর। তিনি বলেন, ‘‘বহু বার বলেছি বাসটি মেরামত করতে, মালিক কানেই তোলেননি। বাচ্চারা যে প্রাণে বেঁচেছে, এটাই আমাদের শান্তি।’’

তাপ্পি মারা, ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া বাস নজরদারির অভাবে এ ভাবে চলাচল করলেও দায়িত্ব নিচ্ছেন না কেউই। তাই এ বার সমস্যা মোকাবিলায় এগিয়ে এসেছেন খোদ পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার তিনি জানান, আজ, শনিবার বিকেল পাঁচটায় নেতাজি ইন্ডোরে পুলকার এবং স্কুল বাস মালিকদের নিয়ে বৈঠক করবেন পরিবহণমন্ত্রী, পরিবহণসচিব ও দফতরের পদস্থ অফিসারেরা। আগামী ১৪ জুলাই সব পক্ষকে নিয়ে এক কর্মশালারও আয়োজন করছে রাজ্য পরিবহণ দফতর। সচেতনতা এবং প্রশিক্ষণ বাড়াতে কলকাতায় এই কর্মশালার পরে জেলাভিত্তিক কর্মশালারও পরিকল্পনা নিয়েছেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement