দৈন্যদশা: ঐতিহ্যবাহী প্রধান ফটকে ধরেছে ফাটল। রবিবার, ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
৫২বি, ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট। এই ঠিকানায় সিমেন্টের ফাটল ধরা গেটের মাথায় রয়েছে সিংহ। যে ঠিকানার ঐতিহ্য মনে করিয়ে দেয় গেটের আশপাশের ফলক। পাশের ফলক দেখে জানা যায়, ওই গেটের ভিতরের একটি বাড়িতে বাস করতেন ‘দি ইন্ডিয়ান মিরর’ পত্রিকার সম্পাদক নরেন্দ্রনাথ সেন। সেই ঐতিহ্যের ধারক সিমেন্টের গেটটিকে তাই হেরিটেজের মর্যাদা দিয়েছিলেন কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষ। ফলকে লেখা ‘আর্য্য কুটীর’, যা আদতে ছিল নরেন্দ্রনাথ সেনের বাড়ি।
ঐতিহ্যশালী এই গেটই এখন ভিতরের বাসিন্দাদের মাথাব্যথার কারণ। তাঁদের অভিযোগ, সিংহদুয়ারের নীচ দিয়ে যাতায়াত করার সময়ে তাঁরা রীতিমতো আতঙ্কিত থাকেন। গেট ভেঙে মাথায় পড়ার আতঙ্ক। অথচ কলকাতা পুরসভার হেরিটেজের তালিকায় থাকার দৌলতে বাসিন্দারা নিজেরাও সেটি সারিয়ে নিতে পারবেন না। গেটের নড়বড়ে দশা নিয়ে বাসিন্দাদের আশঙ্কা যে অমূলক নয়, তা বোঝা যায় সেটির চার দিকে বড় বড় ফাটল দেখে।
তালতলার ৫২বি, ইন্ডিয়ান মিরর স্ট্রিট ঠিকানার সিংহদুয়ার পেরিয়ে ঢুকলেই একটি চারতলা আবাসন। রয়েছে নরেন্দ্রনাথ সেনের জরাজীর্ণ আদি বাড়ি এবং ‘বঙ্গীয় সাহা সমিতি’। ওই আবাসনের বাসিন্দারা ছাড়াও বঙ্গীয় সাহা সমিতির অধীনে চলে ছেলে ও মেয়েদের দু’টি হস্টেল। হস্টেলে রয়েছেন ৫২ জন আবাসিক। তাঁরাও জানাচ্ছেন, গেটটির এতটাই ভগ্ন দশা যে, আতঙ্ক নিয়ে যাতায়াত করতে হয়।
বঙ্গীয় সাহা সমিতির শুঁড়ি সমাজের সম্পাদক সুবীর সাহা জানান, তাঁরা সিমেন্ট দিয়ে গেটের সামান্য কিছু অংশ মেরামত করে দিয়েছেন। কিন্তু সংস্কার বলতে যা বোঝায়, তা করা সম্ভব নয়। কারণ, পুরসভার হেরিটেজ তালিকার অন্তর্ভুক্ত এই গেটটি পুর কর্তৃপক্ষ ছাড়া কেউ মেরামত করতেও পারবেন না। সুবীর বলেন, ‘‘গেটের উপরে সিংহের মূর্তিটা বেশ জরাজীর্ণ হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেটাকে কিছুটা মেরামতের পরে রং করে দিয়েছি। কিন্তু পুরো মেরামত করা সম্ভব নয়।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘পুরসভা কেন এই গেটটি রক্ষণাবেক্ষণ করছে না? গেটের উপরে নীল ফলকে হেরিটেজ ঘোষণা করলেই কি সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়?’’
সুবীরের আরও অভিযোগ, সম্প্রতি ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানেও এই গেটটির দুরবস্থার প্রসঙ্গ উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু এখনও কোনও পদক্ষেপ করেনি পুরসভা। যদিও কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিকের আশ্বাস, বিষয়টা তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। মেয়র ফিরহাদ হাকিম পুরসভার হেরিটেজ কমিটিকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানিয়েছেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ করতে বলেছেন।