বিকল্প: মোটরবাইকের বদলে সাইকেল নিয়ে মিছিল করলে কমতে পারে দূষণ। ফাইল চিত্র
রাজনৈতিক দলের ফ্লেক্স এবং কাট-আউট ব্যবহার নিয়ে দৃশ্যদূষণের অভিযোগ তো রয়েছেই। আরও বলা হয়েছে, ফ্লেক্স এবং কাট-আউট তৈরির মূল সামগ্রী যে প্লাস্টিক, তা মাটির সঙ্গে না মেশায় মারাত্মক ভাবে দূষিত হয় পরিবেশ। এ বার রাজনৈতিক দলের প্রচারে ‘বাইক বাহিনী’কে ব্যবহার করা নিয়েও দূষণের অভিযোগ আনলেন পরিবেশকর্মীরা। বাইক-মিছিলের ফলে বাতাসে যে দূষণ ছড়ায়, তা বন্ধ করার আর্জি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনে চিঠি দিয়েছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। দলমত নির্বিশেষে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশও স্বীকার করে নিয়েছেন, নির্বাচনী প্রচারে বাইক ব্যবহারের ফলে পরিবেশের দূষণ বাড়ে।
পাশাপাশি, ‘বাইক বাহিনী’ নিয়ে প্রচার করলে সামাজিক দূষণেরও ইঙ্গিত দিয়েছেন নাগরিকদের একটি অংশ। সুভাষবাবু বলেন, ‘‘বাইক ব্যবহারের ফলে বাতাস যে দূষিত হয়, সেটা প্রমাণিত। তা ছাড়া বাহিনী শব্দের মধ্যে একটা সন্ত্রাসের গন্ধ থাকে। সামগ্রিক ভাবেই বিষয়টি বন্ধ করার জন্য মুখ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে আর্জি জানিয়েছি।’’
বাইক চালানোর ফলে কী ভাবে বাতাসে দূষণ ছড়ায়?
আরও পড়ুন: দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
রাজ্য পরিবেশ দফতর সূত্রের খবর, মূলত বাইক থেকে বেরোনো ধোঁয়া থেকে দূষিত হয় বাতাস। বাইকের সংখ্যা যত বেশি থাকে, তত দূষণ বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সুভাষবাবু জানান, মিছিলে থাকা প্রচুর বাইক ধীর গতিতে চলায় বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যায়। সমস্যা হয় শব্দেরও। পরিবেশ দফতর জানাচ্ছে, সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসন বিদ্যাসাগর সেতুর উপরে মোটরবাইক থেকে টোল আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, টোল দেওয়ার জন্য বাইকগুলি সেতুতে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকায় দূষণ বাড়ে। আধিকারিকদের আরও দাবি, রাস্তা দিয়ে দ্রুত গতিতে বাইক গেলে যে পরিমাণ দূষণ হয়, তার চেয়ে দূষণের মাত্রা অনেক বেশি হয় বাইক দাঁড়িয়ে থাকলে।
বাইক বাহিনী কী ভাবে সামাজিক দূষণ তৈরি করতে পারে? সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র বলছেন, ‘‘বাইক বাহিনী শব্দটাই সামরিক মনোভাবাপন্ন। কথাটার মধ্যে যে কোনও রাজনৈতিক দলের পেশি আস্ফালনের বহিঃপ্রকাশও খানিকটা থাকে। গণতন্ত্রে এমন বাহিনীর অস্তিত্ব থাকাই উচিত নয়। বর্তমানে তো সোশ্যাল মিডিয়া প্রচারের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারে।’’
বাইক ব্যবহারের অন্যতম ফল যে দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি, তা মানছেন
প্রধান রাজনৈতিক দলগুলির নেতারাও। বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাইক নিয়ে মিছিল হলে দূষণ অনিবার্য। তা ছাড়া গণতান্ত্রিক নির্বাচনে প্রচারের জন্য সোশ্যাল মিডিয়াই যথেষ্ট। বাইক নিয়ে মিছিলে আতঙ্কের পরিবেশকে অগ্রাহ্য করা যায় না। বিকল্প হিসেবে পরিবেশবান্ধব যান ব্যবহার করা দরকার।’’ সিপিএম নেতা চয়ন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে বাইক মিছিল কখনওই সমর্থনযোগ্য নয়। কারণ, এটা শক্তির প্রদর্শন ছাড়া আর কিছুই নয়।’’
একই মত কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এবং তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়েরও। অধীরবাবু বলেন, ‘‘আমি বাইক-মিছিলকে সমর্থন করি না। ‘গ্রিন ক্যাম্পেন’-এর উপরেই বরাবর জোর দিয়ে এসেছি।’’ আর সুব্রতবাবুর কথায়, ‘‘বাইক মিছিলে যে পরিবেশ দূষিত হয়, তা নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্তু দ্রুত এবং কম খরচে মানুষের কাছে পৌঁছতে এর বিকল্প কী, তা-ও জানা নেই। অন্য কিছু প্রচারের মাধ্যম হিসেবে ভাবা যেতেই পারে।’’