দূষণক্ষেত্র: শুকনো পাতা পোড়ানোর জেরে ধোঁয়ায় ঢেকেছে এলাকা। প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে। ছবি: সুমন বল্লভ
গঙ্গা ও তার শাখানদীতে মেশা রাজ্যের একাধিক খাল, নালাকে ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করেছে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাদের রিপোর্টে ২০২২ সালে এ রাজ্যের ১০৪টি খাল, নালাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, যাদের মাধ্যমে দৈনিক ৮৮৭ কোটি লিটার তরল বর্জ্য গঙ্গায় গিয়ে মিশছে। ওই সমস্ত খাল ও নালার মধ্যে প্রাথমিক ভাবে ১১টির দূষণ কমাতে এ বার পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার।
প্রশাসন সূত্রের খবর, চিহ্নিত করা খাল, নালাগুলির মধ্যে হাওড়ার এন সি পাল খাল, সাঁকরাইলের সিংহী মোড় খাল, সরস্বতী খাল, নাজিরগঞ্জ খাল, মহেশতলার নতুন মুনিখালি খাল-সহ চাঁপদানির ডিভিসি খাল, বালি খাল, বৈদ্যবাটী খাল, খড়দহ খাল, বাঘ খাল, হেস্টিংস ঘাট নালা রয়েছে। তাদের দূষণপ্রবাহ আটকানো ও প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন করতে পদক্ষেপমূলক ব্যবস্থা হিসেবে বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরির জন্য বিশেষজ্ঞ সংস্থা নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য। এই কাজের জন্য আগে এক বার দরপত্র ডেকেছিল কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (কেএমডিএ)। কিন্তু তাতে সাড়া না পাওয়ায় গত ২ মার্চ ফের তা ডাকা হয়।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই ১১টি খাল ও নালা থেকে দৈনিক প্রায় ৪২৫ কোটি লিটার তরল বর্জ্য গঙ্গা ও তার শাখানদীতে মেশে। যাদের মধ্যে সব থেকে বেশি পরিমাণ তরল বর্জ্য মেশে বালি খাল থেকে— দৈনিক ২১৬ কোটি লিটার। তার পরে রয়েছে যথাক্রমে নাজিরগঞ্জ খাল দৈনিক ৮৯ কোটি লিটার) এবং চাঁপদানির ডিভিসি খাল (দৈনিক প্রায় ৬৯ কোটি লিটার)। এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশবিদদের একাংশের মত, সংশ্লিষ্ট রিপোর্টেই পরিষ্কার যে পর্ষদ চিহ্নিত ১০৪টি খাল, নালার মাধ্যমে দৈনিক যে পরিমাণ তরল বর্জ্য গঙ্গায় এসে মিশছে, তার প্রায় অর্ধেকেরই উৎস এই ১১টি খাল! এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘চিহ্নিত করা খাল, নালা থেকে এসে মেশা দৈনিক তরল বর্জ্যের পরিমাণ ৮৮৭ কোটি লিটার। সেখানে ওই ১১টি খাল, নালা থেকে এসে মিশছে প্রায় ৪২৫ কোটি লিটার। ফলে এই ১১টির দূষণপ্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে বা তাদের গতিপথ পাল্টে দিতে পারলে সামগ্রিক দূষণের অনেকটাই কমানো সম্ভব হবে।’’
তবে প্রকল্পের রূপায়ণ কবে শেষ হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। প্রসঙ্গত, কঠিন ও তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় ব্যর্থতার জন্য গত সেপ্টেম্বরে রাজ্যকে ৩৫০০ কোটি টাকা পরিবেশগত ক্ষতিপূরণ ধার্য করেছিল জাতীয় পরিবেশ আদালত। সেই টাকায় আলাদা তহবিল গড়ার নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। যে তহবিল থেকে শুধুমাত্র কঠিন ও তরল বর্জ্যের ব্যবস্থাপনায় খরচ করা হবে। সেই তহবিল গড়া হলেও যত দ্রুততার সঙ্গে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ এগোতে বলা হয়েছিল, তা এগোচ্ছে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পরিবেশকর্মীদের একাংশ। পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তের কথায়, ‘‘শুধুমাত্র কলকাতার বুকেই যতগুলি খাল, নালা রয়েছে, তার দূষণই এখনও পর্যন্ত কমানো হয়নি। ফলে কবে পুরো কাজ করা হবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।’’
যদিও পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘জাতীয় পরিবেশ আদালতের নির্দেশ মেনেই সমস্ত কাজ করা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী দরপত্রের প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। তবে এটা তো এক দিনে হয়ে যাবে না, একটু সময় লাগেই। তরল বর্জ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর।’’