গণ্ডগোলের সময় বিজেপি নেতার গাড়ি ভাঙচুর। —নিজস্ব চিত্র।
পুলিশি হেফাজতে মৃত প্রৌঢ় তাঁদের দলের সমর্থক বলে দাবি করে সোমবার মাঝরাতে স্থানীয় বিজেপি নেতা-কর্মীরা সিঁথি থানায় হাজির হন। শুরু হয় বিক্ষোভ। মৃতের পরিবারকে সমবেদনা জানাতে হাজির হন স্থানীয় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরাও। দু’পক্ষে হাতাহাতি হয় পুলিশের সামনেই। থানায় প্রৌঢ়ের অপমৃত্যু ঘিরে গেরুয়া এবং ঘাসফুল শিবিরের রাজনীতির ঘুঁটি চালাচালি শুরু হয়ে যায়।
বিজেপির অভিযোগ, তৃণমূলের নেতা-সমর্থকেরা তাদের মারধর করেন। তৃণমূলের গৌতম হালদারের পাল্টা দাবি, তাঁরা সমবেদনা জানাতে গিয়ে দেখেন, বহিরাগতেরা থানায় গোলমাল করছে, ভাঙচুর চালাচ্ছে। পরিস্থিতি যাতে আরও ঘোরালো না-হয়, তা সামাল দিতেই যান তাঁরা।
বাসিন্দাদের একাংশের প্রশ্ন, পরিস্থিতি সামলাতে, নাকি পুলিশের পাশে দাঁড়াতে তৃণমূল নেতারা থানায় গিয়েছিলেন? নাকি ওই ঘটনায় বিজেপির কোনও ফায়দা যাতে না-হয়, সেটাই রুখতে চেয়েছিলেন তাঁরা? তৃণমূলের দাবি, পরিস্থিতি সামলাতেই তারা ওখানে গিয়েছিল। পুলিশ কি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অসমর্থ? সদুত্তর দেয়নি পুলিশ। লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের কেউ কেউ বলছেন, ঘটনাস্থলে থাকা দুই শীর্ষ পুলিশকর্তার ব্যর্থতাই গোলমালের জন্য দায়ী।
মৃতের পরিবারের অভিযোগ, ফায়দা লুটতেই গোলমাল বাধায় বিজেপি। অজ্ঞাতপরিচয় ১০০ জনের বিরুদ্ধে থানায় হাতাহাতি করার অভিযোগ এনেছে পুলিশ। ঠিক কী হয়েছিল সোমবার রাতে?
সোমবার সন্ধ্যায় পুলিশি হাজতে রাজকুমার সাউয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই দোষী পুলিশের শাস্তির দাবিতে দলবল নিয়ে সিঁথি থানায় হাজির হন বিজেপির স্থানীয় নেতা রাজু সরকার, উত্তর কলকাতার সভাপতি দীনেশ পাণ্ডে, লিগাল সেলের ব্রজেশ ঝা, জোড়াসাঁকোর কমল সোনকার। চলে আসেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সৃজন বসু, অন্য এলাকার কাউন্সিলর গৌতম হালদার প্রমুখ। হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দু’দলের সমর্থকেরা। থানায় তখন উপস্থিত কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসনিক) অশেষ বিশ্বাস এবং ডিসি (নর্থ) জয়িতা বসু। থানার ভিতরে যখন গোলমাল চলছে, বাইরেও তখন লাঠি, বেল্ট, চেলাকাঠ নিয়ে মারামারি চলছে দু’দলের। বিজেপির অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতা খোকন শী-র নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল তাদের উপরে চড়াও হয়। তার পরেই ডিসি-র নেতৃত্বে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ লাঠি নিয়ে ক্ষিপ্ত জনতাকে তাড়া করে এলাকা খালি করে দেয়। তবে স্থানীয় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা রাত ১টা পর্যন্ত লাঠিসোঁটা নিয়ে থানার বাইরে থানা দিয়ে বসে ছিলেন।