যাদবপুর হস্টেল থেকে থানায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে প্রাক্তন ছাত্র সপ্তক কামিল্যাকে। —নিজস্ব চিত্র।
যাদবপুরে ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন ন’জন। অথচ ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী হয়েছিল, তা এখনও ধোঁয়াশায় মোড়া। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতদের প্রত্যেকেরই বয়ানে দেখা যাচ্ছে কিছু না কিছু অসঙ্গতি। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সপ্তক কামিল্যাকে নিয়ে আসা হল যাদবপুর মেন হস্টেলে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী হয়েছিল সপ্তককে সঙ্গে নিয়ে তার পুনর্নির্মাণ করায় পুলিশ। শুক্রবার দুপুর দেড়টা নাগাদ শুরু হয়ে দুপুর ২টো ৪০ মিনিট পর্যন্ত চলে সেই প্রক্রিয়া। তার পর সপ্তককে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় যাদবপুর থানায়।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রমৃত্যুতে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার ন’জনই পুলিশ হেফাজতে। তাঁদেরকে আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃত ন’জনের বক্তব্যেই বহু অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। ৯ অগস্ট রাতের ঘটনা নিয়ে এক এক জন এক এক রকম কথা বলছেন বলেও দাবি পুলিশের। সত্যের খোঁজেই তাই ধৃতদের প্রত্যেককে আলাদা আলাদা ভাবে হস্টেলে নিয়ে গিয়ে ঘটনাটির পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এর মধ্যে শুক্রবার দুপুরে সপ্তককে নিয়ে আসা হয় মেন হস্টেলে। গ্রেফতার হওয়া বাকি আট জনকেও আলাদা আলাদা ভাবে নিয়ে আসা হবে যাদবপুরের মেন হস্টেলে। প্রত্যেকের কাছেই জানতে চাওয়া হবে, গত ৯ অগস্ট রাতে ঠিক কী হয়েছিল?
কে কোথায় ছিলেন? কোন ঘরে ইন্ট্রো নেওয়া হয়েছিল ওই প্রথম বর্ষের ছাত্রের? কোন ঘরেই বা তাঁকে পোশাক খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল? চিঠি কে লিখেছিলেন? তখন কে কোথায় ছিলেন? এই সব প্রশ্নই আলাদা আলাদা ভাবে জানতে চাওয়া হবে ধৃত ছাত্র এবং প্রাক্তনীদের থেকে। পুলিশ নজর রাখবে এই ছাত্র এবং প্রাক্তনীদের বয়ানে থাকা অসঙ্গতির দিকেও।
আপাতত কলকাতা পুলিশের ডিসি (দক্ষিণ শহরতলি) বিদিশা কলিতা দাশগুপ্তের নেতৃত্বে শুক্রবার পৌনে দু’টো নাগাদ শুরু হয়েছে যাদবপুরের মেন হস্টেলে ঘটনার পুনর্নির্মাণের কাজ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যেককে দিয়ে এই পুনর্নির্মাণের প্রক্রিয়াটি শেষ হতে এক দিনের বেশি সময়ও লাগতে পারে।
যাদবপুরের ছাত্রমৃত্যুর ঘটনায় যে চার জন প্রাক্তনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে, সপ্তক তাঁদের মধ্যে অন্যতম। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র সপ্তকের বাড়ি পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায়। তবে সপ্তকের আগে এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছিল যাদবপুরের আরও এক প্রাক্তনী সৌরভ চৌধুরীকে। এ ছাড়া মন্দিরবাজার এলাকার সুমন নস্কর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলতলির বাসিন্দা অসিত সর্দারকেও গ্রেফতার করা হয়। আগেই যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের দুই ছাত্র মনোতোষ ঘোষ এবং দীপশেখর দত্তকে। গত বুধবার আরও তিন ছাত্র জম্মুর বাসিন্দা মহম্মদ আরিফ (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং), পশ্চিম বর্ধমানের বাসিন্দা আসিফ আফজল আনসারি (চতুর্থ বর্ষ, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং), উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা অঙ্কন সরকার (তৃতীয় বর্ষ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং)কে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গত ৯ অগস্ট, বুধবার, রাত ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলের নীচে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের এক ছাত্রকে। তাঁর শরীরে কোনও পোশাক ছিল না। নদিয়ার বাসিন্দা ওই ছাত্রকে এর পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে পরের দিনই তাঁর মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় র্যাগিংয়ের অভিযোগ করে ওই ছাত্রের পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেল আঁকড়ে পড়ে থাকা প্রাক্তনীদেরই দায়ী করেন মৃত ছাত্রের বাবা। এর পরেই যাদবপুরকাণ্ডে গ্রেফতার করা হয় একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী এবং মেন হস্টেলের বাসিন্দা উঁচু ক্লাসের ছাত্রদের।