পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে অন্নপূর্ণা পাল। নিজস্ব চিত্র।
পুলিশের তৎপরতায় পরিবারের সদস্যদের খুঁজে পেলেন ১২ বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলা। তিনি তাঁর মা-বাবার কাছে যাচ্ছেন বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন ২০১০ সালে। তার পরে আর তাঁকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। সোমবার ওই মহিলাকে রাস্তা থেকে উদ্ধার করে স্বামী ও ছেলেদের হাতে তুলে দিল নেতাজিনগর থানা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার নাম অন্নপূর্ণা পাল। তাঁর বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার মানিককল গ্রামে। মানসিক সমস্যা থাকায় তাঁর চিকিৎসা চলছিল। মহিলার স্বামী দিলীপ পাল জানান, চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর স্ত্রী মাঝেমধ্যে ওষুধ খেতেন না। ২০১০ সালে এক দিন অন্নপূর্ণা গাইঘাটায় শ্বশুরবাড়ি থেকে গোপালনগরে তাঁর মা-বাবার কাছে যাবেন বলে বেরোন। আর ফিরে আসেননি। পরে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পরিজনেরা।
লালবাজার জানিয়েছে, সোমবার রাতে নেতাজিনগর থানার পুলিশ জানতে পারে, তাদের এলাকার রামগড়ে এক মহিলা উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। খবর পেয়ে সাব-ইনস্পেক্টর সঞ্জয় কোনার মহিলা পুলিশ নিয়ে যান এবং অন্নপূর্ণাকে উদ্ধার করে প্রথমে বাঘা যতীন হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে মহিলাকে থানায় নিয়ে আসা হয়।
এক পুলিশকর্তা জানান, ওই মহিলা প্রথমে অসংলগ্ন কথা বলছিলেন। শেষে টানা কথা বলতে বলতে পুলিশ তাঁর নাম এবং উত্তর ২৪ পরগনার মানিককল গ্রামের নাম জানতে পারে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই গ্রামের নাম ধরেই বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ শুরু হয়। সেই সূত্রে জানা যায়, উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানা এলাকায় ওই নামে একটি গ্রাম রয়েছে। রাতেই ওই মহিলার বিবরণ দিয়ে গোপালনগর থানার সঙ্গে যোগাযোগ করেন নেতাজিনগর থানার কর্তব্যরত পুলিশ অফিসার। ওই থানা থেকে মানিককল গ্রামে যোগাযোগ করা হয়। তখনই জানা যায়, সেখানকার বাসিন্দা এক মহিলা গত ১২ বছর ধরে নিখোঁজ। তাঁর বড় ছেলের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ।
লালবাজার জানায়, মঙ্গলবার সকালে অন্নপূর্ণার স্বামী দিলীপ, তাঁদের দুই ছেলে এবং অন্নপূর্ণার বোন নেতাজিনগর থানায় আসেন। দীর্ঘদিন বাদে মাকে দেখে চোখের জল বাঁধ মানেনি দুই ছেলের। দিদিকে কাছে পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বোনও। দুপুরেই অন্নপূর্ণাকে নিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেন তাঁর স্বামী ও ছেলেরা।
এ দিন থানায় দাঁড়িয়ে পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করেন দিলীপ। থানার এক অফিসার বললেন, ‘‘দীর্ঘক্ষণ মহিলার সঙ্গে কথা বলার পরে আমরা ওঁর গ্রামের নাম জানতে পারি। ১২ বছর পরে ওই মহিলাকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পেরে আমরাও খুশি।’’