ঢাকার পরিবারের টাকা ও পাসপোর্ট ফেরাল পুলিশ

গোটা পরিবারটির মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে। বিদেশ বিভুঁইয়ে সর্বস্ব খুইয়ে তাঁরা যখন হাওড়া স্টেশনে বসে অঝোরে কাঁদছেন তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন হাওড়া রেল পুলিশের অফিসারেরা। তাঁরা পরিবারটির কাছে সব শুনে তাঁদের পাঠিয়ে দেন গোলাবাড়ি থানায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০১:১৮
Share:

স্বস্তি: টাকা ও পাসপোর্ট-সহ ফিরে পেলেন হারানো ব্যাগ। পুলিশ অফিসারের সঙ্গে নুরউদ্দিনের পরিবার। বৃহস্পতিবার, হাওড়ার গোলাবাড়ি থানায়। নিজস্ব চিত্র

সিনেমার মুন্নিকে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বাবা-মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বজরঙ্গি ভাইজান। এ বার এ দেশে ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা করতে এসে সর্বস্ব খুইয়ে ফেলা আর এক মুন্নির পাশে দাঁড়িয়ে বাস্তবের বজরঙ্গি ভাইজানের ভূমিকা নিল পুলিশ।

Advertisement

বাংলাদেশের ঢাকার বাসিন্দা নুরউদ্দিন আহমেদ মুস্তাফার বারো বছরের মেয়ে নুরে জান্নাত নুসরতের ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছিল কয়েক মাস আগে। তার পর থেকেই তাঁর চিকিৎসা চলছিল চেন্নাইয়ের ভেলোরের একটি হাসপাতালে। চিকিৎসায় ভাল সাড়াও মিলছিল। নুরউদ্দিনের দুই মেয়ে। একটি ছাপাখানার আয় থেকে সংসার চলে। সংসারে অর্থাভাব থাকলেও ছোট মেয়েকে বাঁচাতে তিনি চেষ্টার কসুর করেননি।

১২ সেপ্টেম্বর ভেলোরে নুসরতের স্বাস্থ্য পরীক্ষার দিন। তাই বুধবার বিকেলে স্ত্রী মাফুজা নুর ও মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে সড়কপথে কলকাতায় আসেন নুরউদ্দিন। বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ ট্যাক্সি চেপে হাওড়া স্টেশনে এসে নামেন তাঁরা। রাত সাড়ে ৮টায় যশোবন্তপুর এক্সপ্রেসে তাঁদের চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কথা। স্টেশন লাগোয়া ট্যাক্সি স্ট্যান্ডে নামার পরে তাঁদের খেয়াল হয় যে কালো ব্যাগে ৬৮ হাজার টাকা, তিন জনের পাসপোর্ট ও প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজ রয়েছে সেই ব্যাগটি ট্যাক্সি থেকে নামানো হয়নি। অথচ ট্যাক্সি চলে গিয়েছে।

Advertisement

গোটা পরিবারটির মাথায় কার্যত আকাশ ভেঙে পড়ে। বিদেশ বিভুঁইয়ে সর্বস্ব খুইয়ে তাঁরা যখন হাওড়া স্টেশনে বসে অঝোরে কাঁদছেন তখন সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন হাওড়া রেল পুলিশের অফিসারেরা। তাঁরা পরিবারটির কাছে সব শুনে তাঁদের পাঠিয়ে দেন গোলাবাড়ি থানায়। শুরু হয় পুলিশের ‘অপারেশন’। গোলাবাড়ি থানার ওসি তথাগত পাণ্ডের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি
হয় সন্ধ্যা ৭টায়। দলটি হাওড়া স্টেশনের সমস্ত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পরীক্ষা করে উদ্ধার করে ট্যাক্সির নম্বর। ওই নম্বর ধরে মোটর ভেহিকেল্স থেকে পাওয়া যায় ট্যাক্সির মালিকের নাম ও ঠিকানা। রাতেই পুলিশের একটি দল হানা দেয় কলকাতার বাসিন্দা ওই ট্যাক্সির মালিকের বাড়িতে। তাঁর কাছে মেলে চেতলা রোডের বাসিন্দা ট্যাক্সিচালক সমীর মিত্রের পরিচয়। সেখানে
পৌঁছে চালকের কাছ থেকে পুলিশ উদ্ধার করে বাংলাদেশি পরিবারটির হারিয়ে ফেলা কালো ব্যাগ। উদ্ধার হয় সমস্ত টাকা ও পাসপোর্ট। ঘড়িতে রাত তখন ১১টা।

চার ঘণ্টা পুলিশের অপারেশন দেখে কার্যত মুগ্ধ নুরউদ্দিন বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘পুলিশ শুধু টাকা আর পাসপোর্ট উদ্ধার করে দেয়নি— খেতে দিয়েছে, হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করেছে। এমনকী চেন্নাই যাওয়ার ট্রেনের টিকিটেরও ব্যবস্থাও করে দিয়েছে। আমরা আজীবন এই পুলিশ অফিসারদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব।’’

গোলাবাড়ি থানার ওসি বলেন, ‘‘এত দ্রুত ওই ট্যাক্সিটি চিহ্নিত করা কঠিন কাজ ছিল। অফিসারেরা খুব ভাল কাজ করেছেন। শেষ পর্যন্ত ছোট মেয়েটি যে চিকিৎসা করাতে যেতে পারছে এটাই শান্তি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement