বাজির বাক্সে সিএসআইআর-ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-এর এই লোগো এবং কিউআর কোড না থাকলেই বাহিনীকে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে লালবাজার।
‘বিশল্যকরণী’ চিনতে না পারলেও চলবে। গন্ধমাদন পর্বতটা শুধু তুলে আনতে হবে! এ ক্ষেত্রে পুলিশের কাছে গন্ধমাদন পর্বত হল বাজির বাক্স, আর বিশল্যকরণী ভিতরে থাকা বাজি।
কালীপুজোর রাতের বড় পরীক্ষার এক দিন আগেও কোনটা পরিবেশবান্ধব ‘সবুজ বাজি’ আর কোনটা নয়, সেই ধন্দ কাটাতে পারেনি পুলিশ। তাই পুলিশের বড় কর্তারা বাহিনীর সদস্যদের এমন নির্দেশ দিয়েছেন বলে খবর। কারণ, পুলিশের বড় অংশের অনুমান, পরিবেশবান্ধব বাজির নামে লোগো বা কিউআর কোড বাক্সের উপরে ছাপিয়ে তার ভিতরেই বেআইনি বাজি ভরে বিক্রি করা হতে পারে। যা আগাম প্রশিক্ষণ ছাড়া ধরা অত্যন্ত শক্ত। তাই গোলমেলে বাজির বাক্স দেখলেই তুলে আনতে বলা হয়েছে থানার কর্তাদের। বাজি পরীক্ষা করে বেআইনি প্রমাণিত হলে নেওয়া হবে কড়া ব্যবস্থা।
সোমবার সুপ্রিম কোর্ট ‘সবুজ বাজি’ বিক্রি ও ফাটানোয় ছাড় দেওয়ায় ফের ফাঁপরে পুলিশ। দু’দিন আগেই কলকাতা হাই কোর্ট সব রকমের বাজি নিষিদ্ধ ঘোষণা করায় পুলিশ যে ভাবে কোমর বেঁধে ধরপাকড় শুরু করেছিল, তা-ও অনেকটা কমাতে হয়েছে বলে তাদের দাবি। কারণ ব্যাখ্যা করে পুলিশেরই এক বড় কর্তা বললেন, ‘‘কাকে ধরা যাবে আর কাকে যাবে না, অনেকেরই সেই ধারণা স্পষ্ট নয়। কোনটা সবুজ বাজি, আর কোনটা নয়, তা নিয়েও ধোঁয়াশা রয়েছে। পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া তা জানা সম্ভবও নয়। তাই বলে দেওয়া হয়েছে, বিশল্যকরণী খোঁজার দরকার নেই, গন্ধমাদন পর্বতটা তুলে আনলেই হবে।’’
সূত্রের খবর, মঙ্গলবারই লালবাজারের তরফে থানাগুলির জন্য একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। ‘সবুজ বাজি’ কাকে বলে বা এই ধরনের বাজির গুণাগুণ কী, সে কথা লেখা হয়েছে তাতে। সেই সঙ্গে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, এই ধরনের বাজির বাক্সের গায়ে সিএসআইআর-ন্যাশনাল এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (নিরি)-এর হলোগ্রাম বা লোগো থাকবে। যাদের ছবি ওই নির্দেশিকাপত্রে দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে একটি স্ক্যান-যোগ্য কিউআর কোড-ও বাজির বাক্সের গায়ে থাকবে। বাজি পরীক্ষা করে বোঝা তো সম্ভব নয়, তাই এর কোনও একটি অমিল হলেই ওই বাক্স সন্দেহের তালিকায় ফেলতে হবে। লোগো বা হলোগ্রাম রয়েছে, অথচ কিউআর কোড নেই বা থাকলেও সেটি যদি স্ক্যান করা না যায়, তা হলে সেই বাজি আটক করতে হবে। গ্রেফতার করতে হবে ব্যবহারকারী বা মালিককে। এর জন্য পুলিশকে ‘সিএসআইআর-নিরি গ্রিন কিউআর কোড’ অ্যাপ ডাউনলোড করতে বলা হয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় লালবাজারে বাজি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক ছিল পুলিশকর্তাদের। সেখানেও পুলিশের তরফে এই নিয়ম-বিধি মেনে চলতে বলা হয়েছে বাজি ব্যবসায়ীদের।
কিন্তু প্রশ্ন, গুগল প্লে-স্টোরের কোনও অ্যাপ দিয়ে কি আদৌ পুলিশের পক্ষে কালীপুজোয় বেআইনি বাজি রোখা সম্ভব? পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ছাড়া কেনই বা এ ভাবে অন্ধকারে ঢিল ছুড়তে হবে পুলিশকে? লালবাজারের এক কর্তার মন্তব্য, ‘‘সারা বছর পরিবেশবান্ধব বাজি নিয়ে আলোচনা হয় না। এখন পুজোর দু’দিন আগে যত আলোচনা। বাজি নিয়ে আবার মামলা হয়েছে হাই কোর্টে। বুধবার, পুজোর আগের দিন শুনানি। শেষ পর্যন্ত কোন রায় বহাল থাকবে, কে জানে! পুলিশের এখন অবস্থা হয়েছে, বড় পরীক্ষার এক দিন আগেও সিলেবাস না জানা ছাত্রের মতো।’’