বছর দুই আগে হঠাৎ মোবাইলে ফোন আসা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এক বৃদ্ধের। খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তাঁর সিম হারিয়ে গিয়েছে, এই মর্মে অভিযোগ জানিয়ে তুলে নেওয়া হয়েছে একই নম্বরের ‘ডুপ্লিকেট’ সিম। এখানেই শেষ নয়! ফোন চালু করার পরে ওই বৃদ্ধ জানতে পারেন, তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ টাকা! সিম কার্ড ব্লক থাকায় তিনি ব্যাঙ্কের মেসেজও পাননি। পুলিশ বলছে, ওই বৃদ্ধের ঘটনা নেহাতই একটি উদাহরণ। ভুয়ো এবং জাল নথি দিয়ে আকছার অন্যের সিম কার্ড জোগাড় করে ফেলছে দুষ্কৃতীরা। তদন্তে নেমে শুধু পুলিশই মুশকিলে পড়ছে না, যাঁর তথ্য জাল করে ওই সিম কার্ড তোলা হয়েছে, তাঁকেও হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। এ কথা মেনে নিয়েছে টেলিকম পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিও। এই অপরাধপ্রবণতা ঠেকাতে শুক্রবার একটি আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছিল এক টেলিকম সংস্থা। তাতে হাজির ছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি ডিডি (২) সুমনজিৎ রায়ও। টেলিকম সংস্থাটি জানিয়েছে, আলোচনায় এই অপরাধ ঠেকানোর কিছু উপায়ও উঠে এসেছে। পুলিশের তরফেও কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, এই জালিয়াতির সঙ্গে পাড়ার ছোটখাটো দোকানদার, কখনও বা বড় ডিলারদেরও যোগসাজশ থাকে। সংস্থাগুলিও অনেক সময়ে গ্রাহকদের পরিচয় ঠিক মতো যাচাই না করেই সিম কার্ড দেয়। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, গত কয়েক বছরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাঙ্ক-জালিয়াতির একাধিক চক্র পাকড়াও করা হয়েছে। ধৃতদের কাছ থেকে ভুয়ো পরিচয়পত্র ও বেনামি সিম কার্ড উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, বহু সময়েই দোকানে জমা পড়া কোনও আসল গ্রাহকের নথি ফটোকপি করে সিম বিক্রি করা হয়। শুধু ব্যাঙ্ক জালিয়াত বা সাইবার অপরাধী নয়, বহু সময়ে জঙ্গিরাও এ ভাবেই সিম কার্ড কেনে বলে গোয়েন্দারা দাবি করেছেন। পুলিশকর্তাদের বক্তব্য, এই অপরাধ আটকাতে টেলিকম সংস্থাগুলিকেই সক্রিয় হতে হবে। নিয়মিত গ্রাহকদের পরিচয় যাচাই করতে হবে। কী ভাবে ভুয়ো নথি দিয়ে সিম কার্ড বিক্রি আটকানো যায়, সে ব্যাপারেও সংস্থাগুলিকে সচেষ্ট হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলে লালবাজার সূত্রের খবর। বিষয়টি মেনে নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে ওই টেলিকম সংস্থার বিজনেস হেড আনন্দ সহায় জানান, সিম কার্ড বিক্রি ও তার ব্যবহারের সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও জুড়ে রয়েছে। এ ব্যাপারে দোকানিদের সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয় হবেন তাঁরা।