নাবালক অভিযুক্ত এখন সাবালক, ফাঁপরে পুলিশ

খুনের দীর্ঘ দেড় দশক পর রহস্যের জট খুলেছে। হদিস পাওয়া গিয়েছে সন্দেহভাজন ঘাতক ও চক্রীর। শুক্রবার আদালত ১৫ বছরের পুরনো ওই হত্যা মামলার বন্ধ ফাইল খুলে নতুন ভাবে তদন্ত করার অনুমতিও দিয়েছে কলকাতা পুলিশকে।

Advertisement

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:১১
Share:

খুনের দীর্ঘ দেড় দশক পর রহস্যের জট খুলেছে। হদিস পাওয়া গিয়েছে সন্দেহভাজন ঘাতক ও চক্রীর। শুক্রবার আদালত ১৫ বছরের পুরনো ওই হত্যা মামলার বন্ধ ফাইল খুলে নতুন ভাবে তদন্ত করার অনুমতিও দিয়েছে কলকাতা পুলিশকে। কিন্তু শহরের রাজপথে সাতসকালে পার্সি বৃদ্ধা নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়াকে হত্যার ওই মামলায় সন্দেহজনক খুনিকে হেফাজতে নিতে দু’পা এগিয়েও কার্যত চার পা পিছিয়ে আসতে হচ্ছে লালবাজারের গোয়েন্দাদের।

Advertisement

পুলিশের দাবি, সরফুদ্দিন ওরফে সরফু নামে এক দুষ্কৃতী ২০০১ সালের ২৯ জুন লালবাজারের অদূরে, আর এন মুখার্জি রোডে ওই বৃদ্ধাকে গুলি চালিয়ে খুন করেছিল। সেই সরফুকে বেনিয়াপুকুর এলাকায় গুলি চলার একটি ঘটনায় সপ্তাহ দুয়েক আগে পুলিশ গ্রেফতার করে। তখনও পুলিশ জানত না, সরফুর কাছেই আছে দেড় দশক আগের সমাধান না হওয়া একটি হত্যা রহস্যের চাবিকাঠি। পরে জেরায় সরফু নিজে ওই কথা জানায়। সরফু এখন ৩১ বছরের যুবক।

কিন্তু লালবাজারের গোয়েন্দাদের বক্তব্য, নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়াকে যখন খুন করা হয়, তখন সরফুর বয়স ছিল ১৬ বছর, মানে সে তখন ছিল নাবালক। সে ক্ষেত্রে ওই মামলায় সরফুকে জুভেনাইল কোর্টে পেশ করে হেফাজতে নেওয়ার আবেদন করতে হবে পুলিশকে। আবার জুভেনাইল কোর্ট সাধারণত ‘নাবালক’ অভিযুক্তকে কোনও হোমে পাঠায়। এক গোয়েন্দা-কর্তার কথায়, ‘‘হোম সম্ভবত এটাই বলবে যে, তাদের কাছে শুধু নাবালক অভিযুক্ত বা অপরাধী থাকতে পারে, সরফু তো যুবক।’’ ওই অফিসারের আশঙ্কা, ‘‘সে ক্ষেত্রে এই মামলায় সরফু জামিনে মুক্তি পেতে পারে। তখন আমাদের আফশোসের শেষ থাকবে না।’’ সেই জন্য আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হচ্ছে গোয়েন্দাদের।

Advertisement

আইনজীবী মিলন মুখোপাধ্যায়ের মত, ‘‘ঘটনা যখন, তখন অভিযুক্ত ছিল নাবালক। আবার এখন সে সাবালক। ফলে, ওই খুনের মামলায় তাকে হেফাজতে পাওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশকে বিস্তর আইনি জটিলতার মোকাবিলা করতে হবে।’’

আর এক আইনজীবী নবকুমার ঘোষেরও অভিমত, অভিযুক্তকে জুভেনাইল কোর্টে পেশ করতে হবে, অথচ এখন সে সাবালক বলে তাকে কোনও হোমেও রাখা যাবে না। তাঁর কথায়, ‘‘১৫ বছরের পুরনো ওই খুনের মামলায় এই অভিযুক্তের বিচার কিন্তু জুভেনাইল কোর্টেই হবে।’’ নববাবু অবশ্য মনে করেন, ‘‘বিচারক মনে করলে তদন্তের জন্য ওই অভিযুক্তকে পুলিশ হেফাজতে পেতেই পারে। তবে তাকে সম্পূর্ণ মেয়াদের জন্য অর্থাৎ ১৫ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে সম্ভবত পাওয়া যাবে না।’’

তদন্তকারীরা অবশ্য তা-ও ধন্দে। তাঁদের ব্যাখ্যা, ‘‘জুভেনাইল কোর্ট কী ভাবে কোনও অভিযুক্তকে পুলিশি হেফাজতে পাঠাবে? কখনও হয়েছে?’’

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, কলকাতায় গুলি করে খুনের যত ঘটনা ঘটেছে, তার মধ্যে কেবল কিনারা হওয়া বাকি ছিল নওয়াজ এরুচশা ওয়াদিয়া হত্যার ঘটনা। ঘটনার ১১ বছর পর, ২০১২ সালে আদালতে কলকাতা পুলিশ জানায়, তদন্তে অগ্রগতির মতো এই মুহূর্তে কিছু পাওয়া যাচ্ছে না, তাই আপাতত এই মামলার ফাইল বন্ধ রাখার অনুমতি দেওয়া হোক। আদালত ওই আবেদন মঞ্জুর করে। তবে বেনিয়াপুকুরের ঘটনায় সরফুর গ্রেফতার হওয়া ও তার স্বীকারোক্তির পর গোয়েন্দারা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সত্য অর্ণব ঘোষালের আদালতে আবেদন জানিয়ে ওই মামলার বন্ধ ফাইল খোলার আবেদন জানান। শুক্রবার বিচারক সেই অনুমতি দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement