পাড়ার মেয়ের বিয়ে। সকাল থেকেই চলছে তোড়জোড়। সন্ধ্যার মধ্যেই পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এসে পড়বে বর। সঙ্গে বরযাত্রী। কিন্তু তাল কেটে গেল বেলা ১২টা নাগাদ, পর্ণশ্রী থানার পুলিশকে পাড়ায় ঢুকতে দেখে। পুলিশ এসে জানায়, বিয়ে বন্ধ করতে হবে। কারণ, পাত্রী নাবালিকা। মেয়ের বাড়ির লোকজন এবং পড়শিদের একাংশ অবশ্য প্রথমে কিছুতেই মানতে রাজি হননি যে, মেয়ে নাবালিকা। শেষে মেয়ের বয়সের প্রমাণ দিতে স্থানীয় স্কুল থেকে নথিপত্র জোগাড় করে আনে পুলিশ। বন্ধ হয়ে যায় বিয়ে।
পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে কলকাতা চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরা এসে তাদের জানান, টোল-ফ্রি নম্বরে ফোন করে এক ব্যক্তি তাঁদের জানিয়েছেন, পর্ণশ্রীর সাগর মান্না রোডে এক নাবালিকার বিয়ে দিচ্ছে তার পরিবার। চাইল্ড লাইনের অভিযোগ পেয়েই পুলিশ রওনা দেয় সেখানে। কিন্তু পুলিশকে আসতে দেখেই পাড়ার লোকজন ওই নাবালিকার বাড়ির সামনে চলে আসেন। কিছুতেই পুলিশের কথা শুনছিলেন না তাঁরা। সকলে মিলে দাবি করেন, মেয়ে সাবালিকা। কিন্তু কোনও সার্টিফিকেট দেখাতে পারেননি তাঁরা। এমনকি, পাত্রী নিজেও এসে জানায়, সে প্রাপ্তবয়স্ক। ওই অবস্থায় পুলিশের এক কর্তার মাথায় আসে, মেয়েটি তো স্কুলে পড়ত। সেখানে গেলে তার আসল বয়স জানা যেতে পারে।
এর পরে আর দেরি না করে সেই স্কুলে পৌঁছে যায় পুলিশ। জানা যায়, মেয়েটি ওই স্কুলে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে ২০১৪ সালে স্কুল ছেড়ে দিয়েছিল। স্কুলের নথি থেকে জানা যায়, তার জন্ম ২০০৩ সালের অগস্ট মাসে। স্কুল থেকে প্রমাণস্বরূপ সেই নথি এনে পুলিশ দেখায় মেয়েটির পরিবার ও পাড়ার লোকজনকে। তার পরেই বন্ধ হয় বিয়ে। পাত্রপক্ষকে ফোন করে পুলিশই জানিয়ে দেয়, আপাতত এই বিয়ে হবে না।
এক পুলিশকর্তা জানান, পরিবারের লোকজনকে বুঝিয়ে ওই নাবালিকাকে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হোমে পাঠানো হয়েছে। সোমবার শিশুকল্যাণ সমিতির সামনে তাকে হাজির করানো হবে। এর আগেও শহরের বুকে একাধিক বার নাবালিকাদের বিয়ে আটকে দিয়েছে পুলিশ।