জট নিয়ন্ত্রণে একমুখী হল উড়ালপুল

শহরের রাস্তায় গাড়ির গতি বাড়বে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এমনটাই দাবি করে শুক্রবার অসমাপ্ত অবস্থাতেই খুলে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের দীর্ঘতম উড়ালপুলটি। এমনকী উদ্বোধনের পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই উড়ালপুল চালু হওয়ায় খুব কম সময়ে যেমন বাইপাস হয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়া যাবে, তেমনই বাইপাস থেকে এই উড়ালপুল দিয়ে পার্ক সার্কাস হয়ে এজেসি বসু রোড উড়ালপুল এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাওড়া পৌঁছনো যাবে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৫ ০১:০০
Share:

যানজটে আটকে পরমা উড়ালপুল। শনিবার। ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য।

শহরের রাস্তায় গাড়ির গতি বাড়বে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে এমনটাই দাবি করে শুক্রবার অসমাপ্ত অবস্থাতেই খুলে দেওয়া হয়েছিল রাজ্যের দীর্ঘতম উড়ালপুলটি। এমনকী উদ্বোধনের পরে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, এই উড়ালপুল চালু হওয়ায় খুব কম সময়ে যেমন বাইপাস হয়ে এয়ারপোর্ট যাওয়া যাবে, তেমনই বাইপাস থেকে এই উড়ালপুল দিয়ে পার্ক সার্কাস হয়ে এজেসি বসু রোড উড়ালপুল এবং দ্বিতীয় হুগলি সেতু হয়ে খুব তাড়াতাড়ি হাওড়া পৌঁছনো যাবে। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত ‘ব্যুমেরাং’ হয়ে যানজট বাড়িয়ে দেওয়ায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই নিয়ন্ত্রণ করে দেওয়া হল পরমা উড়ালপুলে গাড়ি চলাচল।

Advertisement

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে শনিবার রাতে জানানো হয়েছে, এ দিন সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে পরমা উড়ালপুলের যান চলাচল সাময়িক ভাবে একমুখী করে দেওয়া হয়েছে। বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাস-মুখী গাড়িই শুধু পরমা উড়ালপুল দিয়ে আসতে পারবে। পার্ক সার্কাস থেকে বাইপাস যেতে উড়ালপুল ব্যবহার করা যাবে না। সে ক্ষেত্রে আগের রুট অর্থাৎ সুরাবর্দি অ্যাভিনিউ, দরগা রোড, চার নম্বর ব্রিজ হয়ে বাইপাস যেতে হবে।

ট্রাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার উদ্বোধনের পর থেকেই উড়ালপুল থেকে পার্ক সার্কাস-মুখী লেন ও পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। প্রথম দিনেই যানজট সামলাতে কালঘাম ছুটে গিয়েছিল ট্রাফিক পুলিশের। শনিবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এ দিন এমনই যানজট দেখা দেয় যে, একটা সময়ের পরে বেশ কয়েক জন ট্রাফিক সার্জেন্টকে শুধুমাত্র পার্ক সার্কাস ‘সেভেন পয়েন্টে’ নামানো হয় পরিস্থিতি সামলাতে। তবে তাতেও ফল হয়নি। বেলা ১১টার পর থেকে প্রায় দু’ঘণ্টা বন্ধ করে দেওয়া হয় উড়ালপুল। পরে দুপুর ২টো নাগাদ পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে খোলে উড়ালপুল। পরে বেশ কয়েক বার একই কারণে পার্ক সার্কাসের চাপ কমাতে উড়ালপুল বন্ধ রাখা হয়।

Advertisement

বারবার একই সমস্যা তৈরি হওয়ায় সন্ধ্যায় লালবাজার থেকে ট্রাফিক পুলিশের শীর্ষ কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, আপাতত পরমা উড়ালপুলে একমুখী অর্থাৎ শুধুমাত্র বাইপাস থেকে পার্ক সার্কাস-মুখী গাড়িই চলবে। এতেই যানজট এড়ানো সম্ভব হচ্ছে।

কিন্তু হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত কেন? তা হলে কি তড়িঘড়ি লোকের মন পেতে উড়ালপুল চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার কিংবা কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভালপমেন্ট অথরিটি?

কেএমডিএ-র সিইও সুরেন্দ্র গুপ্ত অবশ্য তাড়াহুড়ো করে চালু করার কথা অস্বীকার করেছেন। উল্টে তাঁর দাবি, উড়ালপুলটি পুজোর আগে চালু করার জন্য বাইপাসের যানজট অনেকটা কমে গিয়েছে। পার্ক সার্কাস মোড়ে যে সমস্যা হচ্ছে, তা কয়েক দিনেই মিটে যাবে।

তা হলে শনিবার সন্ধ্যা থেকে উড়ালপুল ফের একমুখী করা হল কেন?

ট্রাফিক পুলিশের একাংশ জানাচ্ছে, পার্ক সার্কাস ‘সেভেন পয়েন্টের’ ট্রাফিক সামলাতে এমনিই হিমশিম খায় ট্রাফিক পুলিশ। তার পরে হঠাৎ করে শুক্রবার থেকে পরমা উড়ালপুলের গাড়ির চাপ এতটাই বেড়ে গিয়েছিল যে পরিস্থিতি আয়ত্তের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছিল। কারণ কংগ্রেস এগজিবিশন রোড হয়ে এজেসি বসু রোড উড়ালপুলের লেনটি এখনও তৈরিই হয়নি। ফলে বাইপাসের পি সি চন্দ্র গার্ডেনের দিক থেকে দু’লেনের গাড়ি এসে ২০০ মিটার আগে থেকে একটি লেনে মিশে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্টে নামছিল। পুলিশ কর্তাদের দাবি, সেভেন পয়েন্টের এই অংশটি সাড়ে সাত মিটারের বদলে ৫ মিটার চওড়া হওয়ায় গাড়ির চাপ বাড়ছিল।

তা ছাড়া পার্কস্ট্রিট ও সৈয়দ আমির আলি অ্যাভিনিউয়ের মতো দু’টি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ট্রাফিকও পরমা উড়ালপুলের জন্য আটকে গিয়েছিল শুক্রবার। পুজোর আগে একটি নতুন অসমাপ্ত উড়ালপুলের জন্য শহরের একটি বড় অংশ অবরুদ্ধ হয়ে পড়ছে দেখেই শনিবার রাতে এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন ট্রাফিক কর্তারা। আর এখানেই প্রশ্ন উঠেছে, উড়ালপুল চালুর ক্ষেত্রে কেন আপত্তি জানালেন না তাঁরা?

লালবাজারের এক ট্রাফিক-কর্তার দাবি, সরকারি প্রকল্প চালুর ক্ষেত্রে তাঁদের সম্মতির প্রয়োজন থাকে না। উল্টে তাঁর বক্তব্য, ‘‘নতুন প্রকল্প চালু করলে একটু-আধটু সমস্যা থাকে। পরে ঠিক হয়ে যায়।’’ কিন্তু এই ‘একটু আধটু’ সমস্যা যে সামলানো কতটা ঝক্কির, তা সন্ধ্যার পরে হাড়ে হাড়ে মালুম হয়েছে।

এ দিকে শুক্রবার চালু হওয়ার পরে ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই পরমা উড়ালপুলে শনিবার সকালে দুর্ঘটনা ঘটে। হেলমেট ছাড়া মোটরবাইক চালাতে গিয়ে উড়ালপুলের ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে জখম হন দুই যুবক। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুর্ঘটনায় জখমদের নাম শেখ মেহেরাজ ও ফৈজান আহমেদ। তাঁরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement