গত শুক্রবার উত্তর ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, এলাকার আইনশৃঙ্খলা আরও জোরদার করতে হবে। তার ঠিক এক সপ্তাহের মাথায় পুলিশের জালে ধরা পড়ল রাজারহাট-গোপালপুরের কুখ্যাত দুষ্কৃতী রঞ্জিত বিশ্বাস ওরফে ব্যস্ত বাপি ওরফে বুলেট বাপি। বুধবার রাতে জ্যাংরা এলাকা থেকে অস্ত্র আইনে তাকে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের কাছ থেকে একটি ওয়ান শটার এবং দু’টি গুলি উদ্ধার হয়েছে।
রাজারহাট-গোপালপুর এলাকায় সিন্ডিকেটের নামে তোলাবাজি, জুয়ার বোর্ড চালানো, প্রোমোটারদের ভয় দেখানো, পুলিশকে মারধর ইত্যাদি নানা ঘটনায় আগেই বাপির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ ছিল। কিন্তু অভিযোগ, শাসক দলের কোনও কোনও নেতা-নেত্রীর হাত মাথার উপরে থাকায় এত দিন পুলিশ বাপিকে ধরতে পারেনি।
কে এই বাপি? পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বাপি মূলত রাজারহাট-গোপালপুরের যুব তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ বিশ্বাস ওরফে বাবাইয়ের ডান হাত ছিল। আর বাবাই ছিলেন রাজারহাট-গোপালপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং সাংসদ দোলা সেনের ঘনিষ্ঠ। কিন্তু এ বছর বিধানসভা ভোটের আগে কেষ্টপুরে সঞ্জয় রায় নামে এক তৃণমূল কর্মীকে খুনের ঘটনায় নাম জড়ায় বাবাইয়ের। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় বাবাই আপাতত ফেরার। দলও তাঁকে ব্রাত্য করেছে। পুলিশের দাবি, এর ফলে বাবাই-ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের মাথার উপর থেকে শাসক দলের ছাতা
সরে গিয়েছে।
বিধাননগর কমিশনারেটের গোয়েন্দা প্রধান সন্তোষ পাণ্ডে জানান, দাগি অপরাধীদের প্রত্যেককেই নজরে রেখেছে পুলিশ। অনেকে ইতিমধ্যে এলাকা ছাড়াও হয়ে গিয়েছে। পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ জানিয়েছেন, বাবাই আপাতত ফেরার হওয়ায় তাঁর ঘনিষ্ঠ দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়ার কেউ নেই। সম্প্রতি বাবাই-ঘনিষ্ঠ ক্রান্তি মজুমদার নামে আর এক দুষ্কৃতীকেও অস্ত্র আইনে গ্রেফতার করেছে বাগুইআটি থানার পুলিশ। তার পরেই বুধবার রাতে ধরা হয় বাপিকে।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০১৩ সালে রাজারহাট-গোপালপুরের এক দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার সময়ে বাবাই-বাপিদের নেতৃত্বে তাদের লোকজন পুলিশের গাড়িতে হামলা চালিয়ে ওই আসামিকে ছিনতাই করে নিয়ে যায়। মারধর করা হয় পুলিশকেও। আবার, গত বছর বিধাননগরে পুরভোটের দিন কৈখালিতে গুলি চালানোর অভিযোগও রয়েছে বাপির বিরুদ্ধে। তদন্তকারীদের দাবি, গ্রেফতার হওয়ার পরে বাপি তার বিরুদ্ধে ওঠা বিভিন্ন অভিযোগ স্বীকার
করে নিয়েছে।
পুলিশ আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তে পুলিশ দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করলেও তাদের ছাড়াতে শাসক দলের লোকজন আর পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। এর ফলেই সম্প্রতি রাজারহাট-গোপালপুর এলাকা থেকে বেশ কয়েক জন দাগি দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা গিয়েছে বলেই দাবি করছেন ওই পুলিশ আধিকারিকেরা।