Crime

বাংলাদেশি ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় দম্পতি-সহ গ্রেফতার ৩

গত ৭ নভেম্বর ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বাসিন্দা, কাপড়ের ব্যবসায়ী বসির মিঞাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নাম করে অপহরণ করে কিছু দুষ্কৃতী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ২১:০৮
Share:

আদালতে নিয়ে যাওয়া হল শেখ সালাউদ্দিন এবং তার স্ত্রী নাসিমাকে।—নিজস্ব চিত্র।

বাংলাদেশি কাপড়ের ব্যাবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার ঘটনায় এক দম্পতি সহ, তিন জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। তদন্তকারীদের দাবি, ওই চক্রে আরও বেশ কয়েক জন রয়েছে। ধৃত তিন জনের মধ্যেও রয়েছে এক জন বাংলাদেশি নাগরিক। যে অবৈধ ভাবে এ দেশে বসবাস করছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

গত ৭ নভেম্বর ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার বাসিন্দা, কাপড়ের ব্যবসায়ী বসির মিঞাঁকে উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় এক আত্মীয়ের বাড়ি নিয়ে যাওয়ার নাম করে অপহরণ করে কিছু দুষ্কৃতী। হাবড়া স্টেশন থেকে অজ্ঞাত পরিচয় কয়েক জন যুবক তাঁকে অপহরণ করে কোনও অজ্ঞাত জায়গায় দু’দিন আটকে রাখে। বসিরের বাবা মহম্মদ সিকান্দরকে ফোন করে হাওয়ালা পথে ৬ লাখ টাকা আনায় মুক্তিপণ হিসাবে। বসির পরে এন্টালি থানায় অভিযোগ করেন। সেই ঘটনার তদন্ত নেমে পুলিশ মহম্মদ সেলিম, শেখ সালাউদ্দিন ওরফে ছালাউদ্দিন এবং তার স্ত্রী নাসিমাকে গ্রেফতার করে বুধবার রাতে।

বসির তদন্তকারীদের জানিয়েছিলেন, তিনি কাপড়ের ব্যাবসার প্রয়োজনে প্রায়ই কলকাতায় আসেন। এ বার তিনি স্ত্রীয়ের জন্য কিছু গয়না কিনবেন বলে টাকা নিয়ে আসেন। বসিরের বাবাও কাপড়ের ব্যবসায়ী। তার সঙ্গে আলাপ ছিল সেলিমের। সেই সূত্র ধরেই গত ৭ নভেম্বর শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে সেলিমের সঙ্গে তিনি এবং তাঁর বন্ধু ইলিয়াস দেখা করেন। সেখান থেকে সেলিমের সঙ্গে যান হাবড়াতে। অভিযোগ, সেলিম এবং তার দলবল মুক্তিপণের পাশাপাশি, বসিরের সঙ্গে থাকা ৭৫০০ মার্কিন ডলার এবং ৪৫ হাজার টাকাও লুঠ করে।

Advertisement

আরও পড়ুন: হোমের তালা ভাঙা হয়নি, একটা নয় গাড়ি ছিল দুটো! রহস্য বাড়ছে পঞ্চসায়র গণধর্ষণ-কাণ্ডে

তদন্তকারীদের দাবি, সেলিমের কোনও ঠিকানা দিতে পারেননি অভিযোগকারী। কিন্তু মোবাইলের টাওয়ারের সূত্রে ধরে সেলিমকে ফাঁদ পেতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং এলাকা থেকে পাকড়াও করা হয়। জানা যায় সেলিম বাংলাদেশি নাগরিক হলেও, ৬ বছর আগে সে চোরা পথে এ দেশে চলে আসে। এখানে বাসন্তী এলাকায় ঘাঁটি তৈরি করে। তদন্তকারীদের দাবি, বাংলাদেশি নাগরিকদের ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং পশ্চিম এশিয়ার বিভিন্ন দেশে শ্রমিক হিসাবে পাঠানোর চক্রের সঙ্গে যুক্ত। তদন্তকারীদের সূত্রে খবর, সেলিমের এক দাদা বিদেশে থাকে। সে-ও ওই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। সেলিম এ দেশে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য ভুয়ো নথি তৈরি করে দিত।

আরও পড়ুন: বিয়ের মণ্ডপে ১১ লক্ষ টাকা পণ ফিরিয়ে দিলেন বিএসএফ কনস্টেবল

মানুষ পাচারের পাশাপাশি, বাংলাদেশি ব্যাবসায়ীদের বসিরের কায়দায় আলাপ জমিয়ে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করার একটি গ্যাংও চালায় সেলিম। এমনটাই দাবি তদন্তকারীদের। এর আগেও সে একাধিক বাংলাদেশি ব্যাবসায়ীকে একই কায়দায় আটকে রেখে টাকা আদায় করেছে। কিন্তু আগের প্রতি ক্ষেত্রেই সে মুক্তিপণ আদায়ের পর সীমান্তে দালালদের দিয়ে চোরা পথে অপহৃত ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে আগের কোনও ক্ষেত্রেই কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। বসিরের ক্ষেত্রেও সেই একই কায়দায় সীমান্ত পার করে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল সেলিম। কিন্তু দালালদের পাল্টা বসির ভয় দেখায় যে, সে বিএসএফের কাছে যাবে। ফলে পারাপারকারী দালালরা তাকে এবং ইলিয়াসকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। এন্টালি থানার তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, সালাউদ্দিনের গুমার বাড়িতেই আটকে রাখা হয়েছিল বসিরকে। পুলিশের দাবি, সালাউদ্দিন এবং তার স্ত্রী সেলিমের ওই চক্রের সদস্য এবং এর আগেও একই ভাবে তাদের বাড়িতে আটকে রাখা হয় কয়েক জন ব্যাবসায়ীকে। তিন জনকেই বৃহস্পতিবার শিয়ালদহ আদালতে তোলা হয় এবং বিচারক ধৃতদের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, শুধু অপহরণ নয়, সেলিমকে জেরা করে আন্তর্জাতিক মানুষ পাচারের বড় চক্রের হদিশ মিলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement