অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনকারী এক জুনিয়র চিকিৎসক। তাঁর শুশ্রূষা করছেন এক চিকিৎসক। মঙ্গলবার, ধর্মতলার অনশন মঞ্চে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
মঞ্চে পোস্টারে বড় হরফে লেখা, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’। নাটকের নাম, ‘আমরা তিলোত্তমা’! স্রেফ এটুকুই আজকের পশ্চিমবঙ্গে পুলিশকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। কোনও নামী-দামি মঞ্চ নয়, একটি সাধারণ আবাসনের পুজোয় এমন নাটকের থিম শুনেই অনুষ্ঠান বানচাল করতে পুলিশ ঝাঁপিয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
বারাসত কলোনি মোড়ের কাছের সেই আবাসনে কাল, বৃহস্পতিবার সপ্তমীর সন্ধ্যায় নাটকটি অভিনীত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তার আগে পুলিশি ফরমানে মুষড়ে পড়েছেন নাটকটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা গুটিকয়েক শখের শিল্পী মহিলারা। আজ, বুধবার পুলিশ নাটকের পাণ্ডুলিপি পড়ে দেখবে বলে খবর। আবাসনের নাট্যকার মহিলা অনড়, একটি শব্দও বদলাবেন না। ওই আবাসনের পুজো রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ৮৫ হাজার টাকা অনুদান পেয়েছে। পুজোকর্তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘাতে যেতে রাজি নন বলেই খবর। পুলিশ অবশ্য খাতায়-কলমে প্রতিবাদী নাটক নিয়ে বিতর্ক, এমন কথা মানছে না। এর জন্য পুজো বন্ধ করার বিষয়টিও স্বীকার করছে না তারা। তবে অভিযোগ, ওই চত্বরে কয়েকটি পুজোকে মণ্ডপ বা উৎসব প্রাঙ্গণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি রাখতে বলা হয়েছে। যদিও পুলিশ তা মানতে চায়নি।
বারাসতের কলোনি মোড়ের কাছের ওই আবাসনের পুজোয় অনেক আগেই একটি প্রতিবাদী নাটকের পরিকল্পনা ছকে ফেলেছিলেন আবাসিকদের একাংশ। পুজোর নাটকের শিল্পীদের মধ্যে আছেন ওই তল্লাটেরই বাসিন্দা নানা বয়সের কয়েক জন মহিলা। এমনকি, মধ্য ষাটের ক্যানসারে আক্রান্ত এক মহিলাও রয়েছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ ওই প্রৌঢ়ার খুবই ইচ্ছে ছিল, প্রতিবাদের একটি নাটক করা হোক। সরকারি কর্মী এক মহিলা বছর-বছর আবাসনের পুজোয় নাটক করান। প্রৌঢ়া প্রতিবেশিনীর কথা ভেবে তাঁর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রও নাটকে রাখা হয়। পুজোয় সাধারণত ছোটদের নিয়ে মজার নাটক করানোই দস্তুর। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি আলাদা। তাই অন্য রকম নাটক হচ্ছে।
নাটকে ছিল একটি হাসপাতালের দৃশ্যও। জনৈক নার্সকে শাসাচ্ছে এক দুষ্কৃতী, ‘আপনি তো দেখছি আমাদের সব কিছুই জেনে গিয়েছেন’। নাটকে সেই নার্স চরিত্রটির নাম তিলোত্তমা। জনৈক গৃহবধূ, ছাত্রী, বৃদ্ধা সন্ন্যাসিনী এবং নার্স— এমন চারটি নারী চরিত্র মঞ্চে আসছে যাচ্ছে। তারা হেনস্থার শিকার হচ্ছে এবং প্রতিবাদও করছে। দেখা যাচ্ছে, সবারই নাম তিলোত্তমা। আর যে দুর্বৃত্ত তাদের উপরে চড়াও হচ্ছে, তার কিছু সংলাপে বলা হচ্ছে, ‘চেঁচিয়ে লাভ হবে না! আমরা এখন সংখ্যাগরিষ্ঠ। সব আমাদের লোক। আমরাই সিস্টেম, এমন আচরণ করার জন্যই এই সিস্টেম আমাদের খাইয়ে-পরিয়ে এক কথায় আমাদের পিছনে ইনভেস্ট করে গড়ে তুলেছে!’
প্রশ্ন উঠেছে, একটি আবাসনের ভিতরের পুজোয় এমন একটি নাটক হলে কী সমস্যা হত? বাসিন্দাদেরও কারও এতে সমস্যা হত না! নাটকটি যিনি লেখেন, তিনি বলছেন, ‘‘আমরা চারপাশে যা ঘটছে, তার ছায়া রেখেছিলাম। আবার সরাসরি আর জি করের ঘটনার হুবহু কিছু রাখিনি। এতে কী সমস্যা হত?’’ বারাসতের পুলিশ সরাসরি বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চায়নি। তবে স্থানীয় এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কোনও নাটক বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে আইন-শৃঙ্খলার সমস্যা হলে তো পদক্ষেপ করতেই হবে।’’ কিন্তু একটি আবাসনের নাটকে কী সমস্যা হত, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন। পুজোর সময়ে অনেক আশা নিয়ে মহড়া দিয়ে প্রস্তুতির পরেও নাটকটি নিয়ে বিতর্কে আবাসনের বাসিন্দারা অনেকেই ব্যথিত।