দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের অন্দরের সাজ। নিজস্ব চিত্র
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হওয়ার আগেই নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর সম্প্রসারিত মেট্রোপথ যাত্রী পরিবহণের জন্য খুলে দেওয়ার সম্ভাবনা আরও জোরালো হল।
চূড়ান্ত পর্বে যাত্রী পরিষেবা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন দেওয়ার আগে আগামী শুক্র ও শনিবার মেট্রো সার্কলের চিফ সেফটি কমিশনার ওই মেট্রোপথ পরিদর্শন করবেন। ফলে মাস দেড়েকের মহড়া-দৌড়ের পালা চুকিয়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর মেট্রো স্টেশনে।
মেট্রো সার্কলের চিফ সেফটি কমিশনার শৈলেশকুমার পাঠকের তত্ত্বাবধানে ওই দুই স্টেশনে আগামী শুক্র এবং শনিবার, দু’দিন ধরে ট্রেন চলাচলের যাবতীয় প্রস্তুতি খতিয়ে দেখা হবে। তার আগে আজ, বুধবার মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী নিজে ওই দুই মেট্রো স্টেশনের যাবতীয় প্রস্তুতি আরও এক বার খতিয়ে দেখবেন। মেট্রো সূত্রের খবর, যাত্রী পরিষেবা শুরু করার আগে প্রস্তুতিতে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তা নিশ্চিত করতেই গত এক সপ্তাহের মধ্যে ওই দুই স্টেশন দু’বার পরিদর্শন করেছেন খোদ জিএম।
রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের আবহে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোপথের উদ্বোধনে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আসতে পারেন বলে খবর। এই খবর চাউর হওয়ার পরে মেট্রোর সব মহলেই এ নিয়ে তৎপরতা তুঙ্গে পৌঁছেছে। এ বিষয়ে মেট্রোর এক কর্তা বলেন, ‘‘কবে, কী ভাবে মেট্রোপথের উদ্বোধন হবে, তার নির্ঘণ্ট এখনও চূড়ান্ত হয়নি। তবে আমরা যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে রাখছি। এই বিষয়টিকেই এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।’’
দিন তিনেক আগেই নতুন ওই মেট্রোপথের প্যানেলের বৈদ্যুতিক ইন্টারলকিংয়ের কাজ সম্পূর্ণ করেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। গত শনিবার রাত থেকে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সময় নিয়ে, নোয়াপাড়া মেট্রো স্টেশনে ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখে ওই কাজ সম্পূর্ণ করা হয়।
এত দিন পর্যন্ত নোয়াপাড়া স্টেশনে পৌঁছেই উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর যাত্রা শেষ হত। সেই কারণে সব ট্রেনই ওই স্টেশনের আগে নির্দিষ্ট ক্রসিংয়ে বাঁক নিয়ে ডাউন প্ল্যাটফর্মে গিয়ে থামত। পরে আবার সেখান থেকেই যাত্রী তুলে দমদম অভিমুখে রওনা দিত। কিন্তু, দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো চলাচল শুরু হলে প্রতিটি ট্রেনই আপ প্ল্যাটফর্ম
ছুঁয়ে যাবে।
প্রায় সাড়ে সাত বছর আগে, ২০১৩ সালের জুলাই মাসে দমদম থেকে নোয়াপাড়ার মধ্যে মেট্রো চলাচল শুরু হয়। সেই সময় থেকেই নোয়াপাড়া স্টেশনের আপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করা হয়নি। যাত্রী কম থাকায় এবং বেশির ভাগ ট্রেন দমদমগামী হওয়ায় আপ প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের প্রয়োজনও পড়েনি। ডাউন প্ল্যাটফর্ম থেকেই পরিষেবা সামাল দেওয়া হত।
এ বার মেট্রো নোয়াপাড়া থেকে বরাহনগর হয়ে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হওয়ায় নোয়াপাড়া স্টেশনের এত দিনের রীতিতে বদল আসছে। সেই কারণে ওই স্টেশনেও ব্যস্ততা তুঙ্গে। ভবিষ্যতের নোয়াপাড়া-বিমানবন্দর-বারাসত মেট্রোপথের কথা মাথায় রেখে ওই স্টেশনে (নোয়াপাড়া) মোট চারটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি হয়েছিল।
দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত পরিষেবা শুরু করার আগে সম্প্রসারিত চার কিলোমিটার মেট্রোপথের যাবতীয় খুঁটিনাটি নজরে রাখতে হচ্ছে মেট্রোকর্তাদের। মেট্রোর লাইন, প্যানেল, সিগন্যালিং থেকে বুকিং কাউন্টার, চলন্ত সিঁড়ি, লিফট-সহ সব কিছুই খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে প্রস্তুতি সেরে রাখা হচ্ছে। ওই পথে পরিষেবা শুরু হলে বরাহনগর মেট্রো স্টেশনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। কাছাকাছি থাকা ডানলপ ও বি টি রোড এলাকা এবং দুই গুরুত্বপূর্ণ রেল স্টেশন বালি হল্ট এবং বরাহনগরের বিপুল সংখ্যক যাত্রীর কথা মাথায় রেখে সেখানে একটি প্রশস্ত স্টেশন তৈরি করা হয়েছে। প্রায় ৫৫ ফুট উঁচু ওই মেট্রো স্টেশন কলকাতা মেট্রোর সর্বোচ্চ স্টেশন। রেলপথ এবং বি টি রোডের উপরে ওই স্টেশনের নির্মাণকাজ করতে হয়েছে বলেই উচ্চতা এতটা বাড়াতে হয়েছে।