দত্তপুকুরের একটি বাগানবাড়ি। ছবি :সুদীপ ঘোষ
বছরে ১০ মাস ধরে চলে প্রস্তুতি আর পরিচর্যা, বাকি দু’মাসে হয় ব্যবসা। সুইমিং পুলের জল পরিস্কার হয়েছে, ফুল, ফলে সেজে উঠেছে পিকনিক গার্ডেন, রিসর্ট। কিন্তু যাঁদের আনন্দ-উল্লাসের জন্য এই আয়োজন, তাঁদেরই দেখা নেই। সৌজন্য পাঁচশো, হাজারের বাতিল নোট আর খুচরোর আকাল।
তাই মাঝ ডিসেম্বরেও বুকিং নেই পিকনিক স্পটের।
পিকনিক এক দিকে যেমন হত নগদে চাঁদা তুলে তেমনই, পেমেন্টও চলে নগদে। এ বার নগদের ভাঁড়ারেই সবচেয়ে টান। ফলে গত বছর ডিসেম্বর, জানুয়ারি মাসে যে সব জায়গায় একটিও ‘ডেট’ও ফাঁকা ছিল না, সেই সব পিকনিক স্পটের কোনওটায় এখনও এক দিনের ব্যবসাও হয়নি, কোনওটায় আবার দু’মাসে বুকিং হয়েছে মাত্র চার-পাঁচটি। তা-ও অর্ধেক ‘রেট’-এ। ফলে মুষড়ে পড়েছেন পিকনিক স্পটের মালিক-কর্মী থেকে ক্যাটারিং, পরিবহণ, ডিজে, সাউন্ড শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কয়েক হাজার মানুষ।
কাছাকাছি পিকনিক স্পট বলতে কলকাতার মানুষের পছন্দের জায়গা, উত্তর শহরতলির মধ্যমগ্রাম। সেখানে ছোট-বড় মিলিয়ে দু’শোরও বেশি পিকনিক স্পট রয়েছে। সেই তথ্য দিয়ে মধ্যমগ্রামের বিধায়ক তথা পুরসভার চেয়ারম্যান রথীন ঘোষ বলেন, ‘‘প্রত্যেকের মাথায় হাত। এই দু’মাসে যেখানে ৫০টি বুকিং হয়, এ বার সেখানে পাঁচটিও নেই।’’ পাশাপাশি রথীনবাবু স্মরণ করিয়ে দেন, ‘‘পিকনিক স্পটে ছাড়ের অনুরোধ করে প্রতি বছর এই সময়ে কত নেতা, সংস্থা, পুলিশকর্তারা যোগাযোগ করেন। এ বার কারও যেন গা নেই।’’
পিকনিক স্পট পরিচর্যার জন্য এক জন লোক রাখা হলেও মাসে ৮ হাজার করে বছরে তাঁর মাইনে হয় প্রায় এক লক্ষ টাকা। বাকি সব মিলিয়ে ৩ বিঘের পিকনিক স্পটে বছরে নিদেনপক্ষে ৩ লক্ষ টাকা খরচ হয়। মধ্যমগ্রামের বাদু রোডের কুবেরপুর এলাকায় ৩ এবং ২ বিঘের দু’টি পিকনিক স্পটের মালিক পরেশ রায় বলেন, ‘‘৩ বিঘের বাগানটির ১০ হাজার ভাড়া, কিন্তু ৫ হাজারও মিলছে না। কী করে ব্যবস্যা চলবে? আমাকেও বাগানে কাজের লোক কমাতে হচ্ছে।’’
প্রচুর পিকনিক গার্ডেন রয়েছে দত্তপুকুর, বিড়াতেও। শিবালয়ে সাড়ে ৫ বিঘের আর এক সাজানো-গোছানো রিসর্টের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। মালিক গৌতম সাহা সেটাকে ‘লিজ’ দিয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, ‘‘এমন পরিস্থিতিতে যে কম টাকাতেও কেউ ভাড়া নিচ্ছেন না। যাঁকে লিজ দিয়েছি, তিনিও খুব ভেঙে পড়েছেন। কারও যেন আনন্দ করার মানসিকতাই নেই।’’
শুধু বাগানের মালিক নয়, চিন্তায় ঘুম ছুটেছে পিকনিক ব্যবসার সঙ্গে পরোক্ষে যুক্ত অনেকেরই। এক ট্যুরিজম সংস্থার কর্মী জানান, পিকনিকে যাওয়ার জন্য বাস, ম্যাটাডরের কোনও চাহিদা নেই। ব্যবসা মার খাচ্ছে। একটি ক্যাটারিং সংস্থার মালিক চিন্ময় বিশ্বাস আবার বলেন, ‘‘পিকনিকের সবচেয়ে বেশি অর্ডার মিলত ব্যাঙ্ক, কলেজ থেকে। নতুন, পুরোনো নোটের চাপে ঘুমই উড়ে গিয়েছে ব্যাঙ্ক কর্মীদের। পিকনিক করবেন কখন? রাঁধুনি, কর্মীদের তাই ছুটি দিয়ে দিয়েছি।’’
সমস্যার কথা বলছিলেন, ডি জে ম্যাক্কি। শহর কলকাতাতেই সব মিলিয়ে একশো জন ডিজে রয়েছেন। শব্দ ও অন্য ব্যবস্থা মিলিয়ে ১০ হাজার টাকায় দিনে পিকনিক আর রাতে বিয়েবাড়ি বা অনুষ্ঠানে মনোরঞ্জন করেন তাঁরা। ম্যাক্কি বলেন, ‘‘গত বছরেও এই দু’মাসে দু’বেলা মিলিয়ে ১০০টার মতো কাজ করেছি। এ বার কাজ, আগাম বুকিং মিলিয়ে হয়েছে মাত্র ৯টি। তা-ও অনেক কম টাকায়। লাভই হচ্ছে না।’’