Pavlov Hospital

কাঁসা-পিতলের কারখানার সূত্র ধরে খোঁজ, ১৩ বছর পরে ফিরলেন মহিলা

ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে অক্টোবর মাসে। বিমানবন্দর থানার পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে উদ্ধার করেছিল। সঙ্গে উদ্ধার করা হয় তাঁর ১১ দিনের সন্তানকেও।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৭:৩৪
Share:

পাভলভ হাসপাতাল। —ফাইল চিত্র।

সুস্থ হয়ে মহিলা শুধু নিজের নাম বলতে পেরেছিলেন পুলিশ অফিসারদের। সেই সঙ্গে দোভাষীর মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, তাঁর বাড়ির কাছে কাঁসা-পিতলের জিনিস তৈরি হয়। আর সেই কাঁসা-পিতলের জিনিসের সূত্র ধরেই প্রায় ১৩ বছর পরে হারিয়ে যাওয়া ওই মহিলাকে তাঁর স্বামীর কাছে ফিরিয়ে দিল ফুলবাগান থানার পুলিশ। দীর্ঘ দিন পরে তাঁকে এক ঝলক দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন পরিবারের সদস্যরাও। ১৩ বছর পরে স্ত্রী গুরবারি বারেথকে নিয়ে ছত্তীসগঢ়ের বাড়ির উদ্দেশে কলকাতা থেকে রওনা দিয়েছেন তাঁর স্বামী ললিত বারেথ।

Advertisement

ঘটনার সূত্রপাত ২০১০ সালে অক্টোবর মাসে। বিমানবন্দর থানার পুলিশ মানসিক ভারসাম্যহীন এক মহিলাকে উদ্ধার করেছিল। সঙ্গে উদ্ধার করা হয় তাঁর ১১ দিনের সন্তানকেও। আদালতের নির্দেশ মেনে ওই মহিলার স্থান হয় পাভলভ হাসপাতালে। আর সন্তানকে ভর্তি করানো হয় ফুলবাগানের শিশু হাসপাতালে। বাড়ি কোথায়? কী নাম? কী ভাবে এলেন কলকাতায়?— কিছুই বলতে পারছিলেন না ওই মহিলা।

পুলিশ জানিয়েছে, এর পর থেকেই ওই মহিলা পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মাস দেড়েক আগে ওই হাসপাতালের তরফে ফুলবাগান থানার সঙ্গে যোগাযোগ করে জানানো হয়, গুরবারি নামে ওই মহিলা মানসিক ভাবে পুরো সুস্থ হয়ে গিয়েছেন। কিন্তু তিনি তাঁর নাম ছাড়া কিছুই বলতে পারছেন না। হাসপাতালের তরফে পাঠানো ওই বার্তা দেখে ফুলবাগান থানার ওসি সুরজিৎ বন্দোপাধ্যায় তাঁর থানার দুই অফিসার মৌসুমী চক্রবর্তী এবং বিশ্বজিৎ সিংহকে গুরবারির পরিবারকে খুঁজে বার করার দায়িত্ব দেন। এক পুলিশকর্তা জানান, ওই দুই অফিসার হাসপাতালে গিয়ে গুরবারির সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। কিন্তু তিনি নাম ছাড়া আর কোনও তথ্য দিতে পারেননি। দোভাষীর সাহায্য নিয়ে বার বার তাঁর সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে শুধু জানা যায়, মহিলার বাড়ির কাছে কাঁসা-পিতলের বাসনের কারখানা রয়েছে।

Advertisement

লালবাজার জানায়, ওই তথ্য হাতে আসার পরে দুই পুলিশ অফিসার সেটি ভিন্‌ রাজ্যের পুলিশ আধিকারিকদের গ্রুপে জানান। তা থেকে ৩০টি জায়গার খোঁজ মেলে, যেখানে লোকালয়ের কাছেই কাঁসা-পিতলের বাসন তৈরি করা হয়। দুই পুলিশ অফিসার ওই জায়গাগুলিতে গুরবারির ছবি এবং তথ্য পাঠিয়ে জানতে চান, ওই রকম কেউ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন কি না। তা দেখেই ছত্তীসগঢ়ের বিলাসপুরের শক্তি থানার তরফে জানানো হয়,
তাদের এলাকা থেকে এক জন মহিলা ২০১০ সালে কলকাতায় গিয়ে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন। স্থানীয় পুলিশের তরফে ললিতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ছবি দেখে তিনি তাঁর স্ত্রীকে চিনতে পারেন। অন্য দিকে, জানা গিয়েছে, গুরবারির সন্তান এখন একটি হোমে
রয়েছে।

লালবাজার জানায়, ছবি দেখে চিনতে পারার পরে কলকাতায় চলে আসেন ললিত। তিনি জানান, স্ত্রীকে খুঁজে পাবেন, সেই আশায় তিনি দ্বিতীয় বার বিয়ে করেননি। শুক্রবার সমস্ত আইনি প্রক্রিয়ার পরে ফুলবাগান থানার আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ললিতের হাতে তুলে দেওয়া হয় গুরবারিকে। এক পুলিশকর্তার কথায়, ‘‘যে গুরবারি কোনও কথা এত দিন বলেননি, সেই তিনিই শুক্রবার স্বামীকে সামনে দেখে অঝোরে কাঁদতে শুরু করেন।’’ তখন চোখে জল উপস্থিত আধিকারিকদেরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement