শিয়রে বিপদ, তবু অনুরোধে সময় নষ্ট পুরসভার

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির উপর থেকে একাংশ ধসে পড়েছে দোতলায়। তিনতলা ও দোতলার অফিসঘর ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাউন্সিলর সন্তোষবাবুর অফিসঘরও। সূত্রের খবর, বাড়ির চারতলায় থাকত চারটি পরিবার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৪৭
Share:

এ ভাবেই ভেঙে পড়েছে বাড়িটি। রবিবার, গার্স্টিন প্লেসে। নিজস্ব চিত্র

বাড়ির বয়স পেরিয়েছে একশো। পুরসভার তরফে বিপজ্জনক ঘোষণা করা হয়েছিল আগেই। তার পরেও সেখানে থাকছিল চারটি পরিবার। শনিবার রাতে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল হেয়ার স্ট্রিট থানার গার্স্টিন প্লেসের ওই বাড়িটির ছাদের একাংশ। এক ঘণ্টা আটকে রইলেন এক দম্পতি। দমকল এসে বাড়ির জানলা ভেঙে তাঁদের উদ্ধার করে। দমকল জানিয়েছে, অফিসের ব্যস্ত সময়ে এই দুর্ঘটনা ঘটলে বড় বিপদের আশঙ্কা ছিল।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ ৩এ, গার্স্টিন প্লেসের চারতলা ওই বাড়ির পিছনের দিকের ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ে। ছাদের সামনেই একটি ঘরে থাকতেন বাড়ির মালিক কেদারনাথ ঝা ও তাঁর স্ত্রী কিরণ ঝা। ওই রাতে বাড়ি ভেঙে পড়ার বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায় কেদারনাথবাবু ও তাঁর স্ত্রীর। তিনি সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় কাউন্সিলর সন্তোষ পাঠককে মোবাইলে খবর দেন। কাউন্সিলর জানান হেয়ার স্ট্রিট থানা ও দমকলে। দমকল এসে মই বেয়ে উঠে জানলা ভেঙে ভোর চারটে নাগাদ কেদারনাথবাবুদের উদ্ধার করে।

রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, বাড়িটির উপর থেকে একাংশ ধসে পড়েছে দোতলায়। তিনতলা ও দোতলার অফিসঘর ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাউন্সিলর সন্তোষবাবুর অফিসঘরও। সূত্রের খবর, বাড়ির চারতলায় থাকত চারটি পরিবার। বাকি তিনটি তলায় সবই অফিস। পুলিশ জানিয়েছে, বাড়ির ভগ্নদশার জন্য আগে ২২টি বেসরকারি অফিস থাকলেও এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র তিনটিতে। এক সংস্থার কর্ণধার মনোজকুমার ঝা-র আক্ষেপ, ‘‘বা়ড়ি ভেঙে পড়ায় আমাদের ব্যবসা লাটে উঠল। এখন কী করব, জানি না।’’ আজ, সোমবার বাড়িটির বিপজ্জনক অংশ ভেঙে ফেলা হবে বলে পুরসভা সূত্রের খবর। কেদারনাথবাবু বলেন, ‘‘বাড়ি ভেঙে সংস্কারের জন্য মাস সাতেক আগে কলকাতা পুরসভার কাছে আবেদন করেছি।’’

Advertisement

কেদারনাথবাবুর কথার প্রেক্ষিতেই ফের প্রশ্ন উঠেছে, বিপজ্জনক বাড়ি সংক্রান্ত নতুন আইন গত বছরের জুলাইতে চালু হলেও তা প্রয়োগে কেন টালবাহানা হচ্ছে। পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, নতুন আইনের ৪১২(এ) ধারা অনুযায়ী, মালিককে প্রথমে বাড়ি সংস্কারের সুযোগ দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। তবে মালিক রাজি না হলে সংশ্লিষ্ট বাড়ির ভাড়াটেদের বাড়ি সংস্কার করতে বলা হবে। দু’পক্ষই রাজি না হলে পুরসভা ওই বাড়ির ‘ম্যানেজমেন্ট কন্ট্রোল’ নিয়ে তা মেরামতির দায়িত্ব দিতে পারে নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন কোনও সংস্থাকে।

কিন্তু পুর আধিকারিকদের একাংশই জানাচ্ছেন, আইনি ক্ষমতা প্রয়োগের থেকে বাড়ি সংস্কারের জন্য মালিক-ভাড়াটেকে বোঝানোর দিকেই কর্তৃপক্ষ বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বাড়ি সারানো নিয়ে মালিক-ভাড়াটে টালবাহানায় এর আগে একাধিক বার বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে প্রাণহানির ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে শহর। সেখানে ‘অনুরোধে’ সময় নষ্ট বা আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া না দেওয়ার অর্থ হল, বিপদের দিকে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া! কারণ, বিপজ্জনক বাড়িগুলি যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে।

যদিও পুর প্রশাসনের দাবি, অনেক ক্ষেত্রেই ৪১২ (এ) প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে সব দিক দেখে-শুনে এই আইন প্রয়োগ করতে হচ্ছে। কারণ বাড়ির মালিকদের একাংশের অভিযোগ, বাড়ি ভেঙে নতুন করে তৈরি করতে কেউ গররাজি হলে ‘আইনের জোরে’ তা অন্য কারও হাতে দেওয়ার কথা যেটা বলা হচ্ছে, তা আদতে ‘গা-জোয়ারি’। আর বাড়ির মালিক স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে আবেদন করলেও এটা আইনি প্রক্রিয়া। তাই তা বাস্তবায়নে একটু সময় লাগবেই! এক পুরকর্তার কথায়, ‘‘ক্ষমতা প্রয়োগ করাই যায়। কিন্তু তাতে আইনি জটিলতাও হতে পারে। তাই মালিক-ভাড়াটেকে বুঝিয়ে যদি বাড়ি মেরামতি করা যায়, তা হলে ক্ষমতা প্রয়োগের দিকে যাব কেন? আর আবেদন করলেও কিছুটা সময় তো লাগবেই।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement